...

2 views

রিংয়ে আর দেখা যাবে না স্টিং-কে
//রিংয়ে আর দেখা যাবে না স্টিং-কে//

গ্ৰীনসবরো কলিসিয়াম!

গ্ৰীনসবরো, নর্থ ক্যারোলিনা!

গ্ৰীনসবরোয় এখন সময় রাত্তির ১২টা।

এইমাত্র ৬৫ বছরের ‘তরুণ’ ‘দ্য আইকন’ স্টিং (স্টিভ বোর্ডেন) তাঁর জীবনের অন্তিম ম্যাচ খেলে উঠলেন এখানে। জয়ীও হলেন। তাঁর কেরিয়ারের একদম প্রথমদিকে ১৯৮৮ সালের মার্চে ‘নেচার বয়’ রিক ফ্লেয়ারের বিরুদ্ধে এন ডাবলু এ ওয়ার্ল্ড টাইটেলের জন্য এখানেই, এই গ্ৰীনসবরো কলিসিয়ামেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন তিনি। সেই ম্যাচের পঁয়তাল্লিশ মিনিট সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ার পর ম্যাচটিকে ড্র ঘোষণা করা হয়েছিল, কারণ কেউই পরাজয় স্বীকার করেন নি। সেই নস্টালজিক ভেন্যুতেই নিজের কেরিয়ার শেষ করলেন স্টিং, অবশ্যই বিজয়ী হিসেবে। ৭৫ বছর বয়সী রিক ফ্লেয়ার বন্ধু হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এই ম্যাচে স্টিংকে সমর্থন জানাতে, স্পেশাল টাইমকিপার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রিকি ‘দ্য ড্রাগন’ স্টিমবোটও। স্টিং এবং তাঁর ট্যাগ টিম সঙ্গী ডার্বি অ্যালিন টর্নেডো ট্যাগ ম্যাচে হারালেন দ্য ইয়াং বাকস্ ম্যাট অ্যাণ্ড নিক জ্যাকসনকে। যেহেতু টর্নেডো ট্যাগ ম্যাচে কোনো নিয়মের বালাই নেই, তাই স্টিং ও ডার্বি অ্যালিন—দুজনেই যথেষ্ট মার খেলেন ইয়াং বাকস্-দের হাতে। প্রথমদিকে নিক জ্যাকসন ডার্বিকে মিচিনোকু ড্রাইভার দিয়ে টেবিল ভেঙে ঢুকিয়ে দেয়। তার অব্যবহিত পরেই ম্যাট জ্যাকসন স্টিংকে সুপ্লেক্স দিয়ে আরেকটা টেবিল ভেঙে ঢুকিয়ে দেয়। এই ঘটনাদুটি ঘটে রিং থেকে বহুদূরে, দর্শকদের মাঝে। যেহেতু টর্নেডো ট্যাগ ম্যাচে ফলস্ কাউন্ট এনিহোয়্যার রুলস্ প্রযোজ্য হয় না, তাই জ্যাকসনরা ডার্বিকে টানতে টানতে রিংয়ে নিয়ে আসে। ডার্বি সাময়িক প্রতিরোধ করলেও কিছু পরে অবসন্ন হয়ে পড়েন। তবুও তিনি একটি মইয়ে চড়ে যখন নিকের ওপর লাফিয়ে পড়তে যান, তখন ম্যাট জ্যাকসন নিক-কে টেনে সরিয়ে নেয়। ফলে ডার্বি এসে আছাড় খেয়ে পড়েন অরক্ষিত একটি কাচের টেবিলের ওপর। কাচ ভেঙে গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে যায় এবং তাঁর পিঠে অসংখ্য সূক্ষ্ম কাচের টুকরো গেঁথে যাওয়ার ফলে খুবই রক্তপাত হতে থাকে‌। রিংসাইড ডক্টররা তৎপরতার সঙ্গে তৎক্ষণাৎ তাঁর প্রাথমিক চিকিৎসা শুরু করে দেন। ইতিমধ্যে স্টিং তখন রিংয়ে ফিরে এসেছেন এবং জ্যাকসনদের যুগপৎ প্রতিরোধ ও প্রহার করছেন। কিন্তু কিছু পরেই স্টিং একটি মইয়ে চড়লে জ্যাকসনরা তাঁকেও একটা কাচের টেবিল ভেঙে ঢুকিয়ে দেয়। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে স্টিংকে পিনফল করলে তিনি দুই কাউন্ট করার পর শোল্ডার উঠিয়ে নিতে সমর্থ হন। এরপরেও তাঁকে প্রচুর প্রহার সহ্য করতে হয়। তার মধ্যে টাইটেল বেল্ট দিয়ে মার, দুটি বিটিই ট্রিগার, স্টিংয়ের নিজস্ব স্করপিয়ন ডেথ ড্রপ—বাদ যায় না কিছুই। স্টিংকে বাঁচাতে এসে জ্যাকসনদের হাতে প্রহৃত হন ৭১ বছর বয়সী রিকি স্টিমবোট এবং ৭৫ বছরের বৃদ্ধ রিক ফ্লেয়ার। স্টিংকে বাঁচাতে তাঁকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়েন রিক ফ্লেয়ার, কিন্তু তাতেও তিনি প্রহৃত হন জ্যাকসন ভাইদের হাতে। তারপরেও স্টিংকে হারাতে পারে না ম্যাট অ্যাণ্ড নিক জ্যাকসন! নিক রেগে গিয়ে রেফারির গায়ে হাত তুলতে যায়, ম্যাট তাকে শান্ত করে। এরপরেও স্টিংকে নানাভাবে প্রহার করতে থাকে জ্যাকসনরা, এবং প্রতিটি পিনফল অ্যাটেম্পটেই স্টিং কখনো এক, কখনো বা দুই কাউন্টেই শোল্ডার উঠিয়ে নিতে সমর্থ হন! এসব দেখে ইয়াং বাকস্-দের হতভম্ব অবস্থা হয়। তারা কিছুতেই স্টিংকে হারাতে পারে না! আসলে স্টিং যে আজ প্রতিজ্ঞা করে রিংয়ে নেমেছেন যে আজ তিনি হারবেন না কিছুতেই! তার একটা কারণ যদি এই হয় যে, এটাই তাঁর ফেয়ারওয়েল ম্যাচ, তবে আরেকটা কারণ অবশ্যই এই যে, সপ্তাহ তিনেক আগে ইয়াং বাকস্-দের হাতে নিজেকে, পুত্রসম ডার্বিকে এবং নিজের পুত্রদের প্রহৃত হতে দেখাটা ভালো চোখে নেননি স্টিং। ইয়াং বাকস্-রা তারপর থেকে স্টিং ও ডার্বির রক্তমাখা সাদা কোটগুলো পরেই ঘুরে বেড়াচ্ছিল, যা স্টিংকে আরও বেশি করে উদ্দীপ্ত ও উত্তেজিত করে তোলে এই ম্যাচ জেতার জন্য। যাইহোক, প্রচুর প্রহার সহ্য করেও স্টিং মাথা নত তো করেনই না, বরং হাসতে থাকেন! এতে মারাত্মক ঘাবড়ে যায় জ্যাকসন ভাইরা। তাদের কিংকর্তব্যবিমূঢ় অবস্থার মধ্যেই রিংয়ে ফিরে আসেন আহত ডার্বি অ্যালিন। তখনও তাঁর পিঠে কাচে কেটে যাওয়া ক্ষত, সেখান থেকে রক্তক্ষরণ হচ্ছে! স্টিং ম্যাট জ্যাকসনকে স্করপিয়ন ডেথ ড্রপ দেন। এরপর আহত অবস্থাতেই ডার্বি ম্যাটের ওপর কফিন ড্রপ দেন। স্টিং এরপর ম্যাট-কে স্করপিয়ন ডেথ লক্ সাবমিশন হোল্ডে আটকে রাখেন। ডার্বি নজর রাখতে থাকেন নিক জ্যাকসন যাতে কোনওভাবেই রিংয়ে ফিরে না আসতে পারে। কিছুক্ষণ পরে যন্ত্রণায় কাতর হয়ে ম্যাট জ্যাকসন ট্যাপ আউট করে দেয়। ফলে, সাবমিশনের মাধ্যমে ম্যাচ জিতে যান স্টিং ও ডার্বি অ্যালিন। এ ই ডাবলু ওয়ার্ল্ড ট্যাগ টাইটেলও ধরে রাখেন তাঁরা। তবে যেহেতু এটাই ছিল স্টিংয়ের রিটায়ারমেন্ট ম্যাচ, তাই হয়তো স্টিং ও ডার্বি অ্যালিন টাইটেল দুটি ভেকেট্ করে দেবেন। সেটা আমাদের জন্য খুবই দুঃখজনক, কারণ এই পঁয়ষট্টি বছরের বুড়ো হাড়েও যে ভেল্কি স্টিং দেখাচ্ছেন তাতে করে আরও পাঁচ বছর অনায়াসেই খেলে দিতে পারতেন! এখনও এতটাই ফিটনেস তাঁর! কখনো মইয়ে চড়ে লাফ দিচ্ছেন, কখনো চেয়ার শট খেয়েও হেসে উঠে দাঁড়িয়ে পড়ছেন, কখনো বা বিটিই ট্রিগার হজম করেও ওয়ান কাউন্টেই শোল্ডার উঠিয়ে নিচ্ছেন! জাস্ট ভাবা যায় না!!!

আজ তাঁর অন্তিম ম্যাচে এক আবেগঘন এন্ট্রান্স নেন স্টিং, যেখানে তাঁর দুই পুত্রের সাথে রিংয়ে প্রবেশ করেন তিনি। তাঁর দুই পুত্র স্টিংয়ের মতোই সেজে এসেছিলেন। ম্যাচ শেষে একত্রিশ বছর বয়সী পুত্রসম ডার্বিকে নিয়ে কথা বলতে গিয়ে আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন স্টিং। ডার্বিকেই তাঁর শ্রেষ্ঠ ট্যাগ টিম সঙ্গী হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি। তিনি এও বলেন যে ডার্বি ঝুঁকি নিতে ভালোবাসেন, এমনকি এই বৃদ্ধ বয়সে তিনি নিজেও ঝুঁকি নিতে ভালোবাসেন! ডার্বি তাঁকে মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে বলেন যে, যতক্ষণ তাঁর দেহে প্রাণ থাকবে ততক্ষণ তিনি স্টিংয়ের জন্য লড়ে যেতে পারেন, তাতে করে রিংয়ে যদি তাঁর মৃত্যু হয় তো, তাও শ্রেয়! স্টিং ধন্যবাদ জানান তাঁর পরিবার, ডার্বি অ্যালিন, রিক ফ্লেয়ার এবং অবশ্যই গ্ৰীনসবরো, নর্থ ক্যারোলিনাকে।

এবং আজ আমরা দর্শকরা এক অবিস্মরণীয় ম্যাচের সাক্ষী হয়ে রইলাম! ধন্যবাদ স্টিংকে, তাঁর ৩৯ বছরের বর্ণময় কেরিয়ারের (১৯৮৫-২০২৪) আজ ইতি ঘোষিত হল। তাঁর এই বিদায়ী ম্যাচে অন্যতম প্লে-বাই-প্লে কমেন্টেটর হিসেবে ম্যাচ কল্ করলেন আর এক কিংবদন্তী কমেন্টেটর জিম রস্, যিনি রেসলিং ভক্তদের কাছে ‘গুড-ওল্ জে আর’ নামেই বেশি পরিচিত। সবচেয়ে বড় কথা, এ ই ডাবলু থেকে স্টিং আনডিফিটেড অবস্থাতেই অবসর গ্রহণ করলেন। এ ই ডাবলুতে তিনি গত তিন বছরে ২৯টি ম্যাচ খেলে প্রতিটিতেই জয়লাভ করেছেন। বিভিন্ন প্রোমোশন মিলিয়ে স্টিং সর্বমোট ১৪টি ওয়ার্ল্ড টাইটেল জিতেছেন, সবমিলিয়ে ২৬টি টাইটেল জিতেছেন তিনি তাঁর সুদীর্ঘ লেজেন্ডারি কেরিয়ারে। এছাড়াও তিনি একজন ডাবলু সি ডাবলু লেজেন্ড হিসেবে বিশ্ববন্দিত, টি এন এ-তেও জিতেছেন ওয়ার্ল্ড টাইটেল! খেলেছেন এন ডাবলু এ এবং এন জে পি ডাবলু-সহ বিভিন্ন ইন্ডিপেন্ডেন্ট সার্কিটেও। টি এন এ-র প্রথম হল্ অফ্ ফেমার তিনিই; ২০১২ সালে সে সম্মান অর্জন করেন তিনি। আর তার চার বছর পর ২০১৬-য় ডাবলু ডাবলু ই তাঁকে অন্তর্ভুক্ত করে ডাবলু ডাবলু ই হল্ অফ্ ফেম-এ। দুঃখ কেবল একটাই, ডাবলু ডাবলু ই তাঁকে সেভাবে ব্যবহারই করল না! অবশ্য এর জন্য ভিন্স মিকম্যাহনের গগনচুম্বী ইগোই দায়ী। কারণ, স্টিংয়ের খুব ইচ্ছে ছিল আন্ডারটেকারের সঙ্গে রেসলমেনিয়ায় একটি ম্যাচ খেলা (বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে তিনি বলেওছেন সে কথা)। তাঁর সে আশা তো পূর্ণ হয়ই নি, উল্টে ডাবলু ডাবলু ই-তে এসে তাঁকে পরাজিত হতে হয়েছে ট্রিপল এইচ আর সেথ্ রলিন্সের কাছে, যা তাঁর পক্ষে অত্যন্ত অপমানজনক বলেই মনে হয়েছে আমার।

যাইহোক, স্টিং তবুও আমাদের কাছে আইকন হিসেবেই থেকে যাবেন চিরটা কাল! এভাবেই উৎসাহিত করে চলবেন প্রজন্মের পর প্রজন্ম প্রোফেশনাল রেসলারদের!

হ্যাপি রিটায়ারমেন্ট, স্টিং!

পুনশ্চঃ এই পে-পার-ভিউয়ের পেনাল্টিমেট ম্যাচে ‘সামোয়ান সাবমিশন মেশিন’ সামোয়া জো, হ্যাংম্যান অ্যাডাম পেজ ও সোয়ার্ভ স্ট্রিকল্যাণ্ডকে যুগপৎ হারিয়ে ধরে রাখেন তাঁর এ ই ডাবলু ওয়ার্ল্ড টাইটেল! এটিও একটি অত্যন্ত আকর্ষণীয় ও রোমহর্ষক ম্যাচ ছিল! এবং সাড়ে পাঁচ ঘণ্টার এই পে-পার-ভিউ আজ প্রমাণ করে দিল যে, ডাবলু ডাবলু ই এখন একটি সিঙ্কিং শিপ ছাড়া আর কিছুই নয়! ধন্যবাদ, টোনি খান-সহ এ ই ডাবলুর সকল কলাকুশলীদের, এত সুন্দর একটি পে-পার-ভিউ আয়োজন করে দর্শকদের উপহার দেওয়ার জন্য!

©কৌস্তভ মণ্ডল

4 March 2024
11-43 am.
Monday

ছবিঃ প্রতীকী

#kaustavmondal #sting #aew #কৌস্তভমণ্ডল #কৌস্তভের_গদ্য #কৌস্তভের_ফিচার


© গেছো দাদা