...

18 views

আজ বিকেলে
#আলী আকবর হোসাইন

আমার রং লাগা সেইসব দিন
প্রথমে অংকুড়ে যখন গজিয়ে ছিলাম
এই শ্যামল প্রান্তরে, বালচের বাঁকে
কালো জল, ঘোলাটে আকাশ
শরৎ কাল নিয়ে এসেছিল
উনিশশো পঁচাত্তরের পুরনো আশ্বিনে।

তুমি বুঝিবেনা, বুঝিবেনা
কি ছিল আমার প্রথম স্বপনে,
এই কালিয়ারা, বালচের তীরে
আমার পিতার ভঙ্গুর বসতি,
অপরাজিতার দঙল, কাশফুল,
শ্যাওলা ধরা আমগাছের শাড়ি,
গোন টানা ,পালতোলা নাও ,
দূর দেশ থেকে আসা নায়রী পানশি
আর জল ডুবো ডুবো বাজিতপুরী নাও।

তখনো স্রোত ছিল বালচে আশ্বিনে।
পানিতে কায়লা মাছের গন্ধ,
খুব ভোরে ঘুমের ভেতর থেকে শুনা
ঘুরী খেউয়ের শব্দ,
সকালে উঠোনে মাছের দাপাদাপি
কালো কুচকুচে অরিজিনাল মাছ
তুমি দেখনি, আমি দেখেছি স্বপনে।

আমি দেখেছি এই বালচের
হঠাৎ যৌবনের তোড়
কোন এক বৈশাখের শেষে
আস্তে করে তার ফেনিল জোয়ার,
দূর পাহাড় থেকে সুমেস্বরী বেয়ে
ঘোলা জল কচুরিপানা আর ফেনায়
টইটুম্বুর হয়ে আসে।


ঘোলা, সাদা নতুন পানিতে গোসল,
পাঁচ শ সত্তর সাবানে চুল ঘসা,
চুখে ঝাল, মায়ের গা ঘসে দেয়া,
তারপর খাল ভাঙ্গা স্রোতে
দুরন্ত ডুব সাঁতার।

আমার সব মনে আছে
নির্ঘুম বর্ষার রাত
উত্তর থেকে আসা দাপটি তোফানে
ছোন খরকোটোর ঘর আইঠাই করে,
পিতার আয়াতুল কুরসি পড়ার শব্দে
শিশুর চোখে ঘুম ভেঙ্গে যাওয়া।

ঝরের পর সুনশান নীরবতা
পাট ক্ষেতের আল ঘুরে
অন্ধকার কর্দমাক্ত পথ
কোন প্রতিবেশীর ছপছপ
পা ফেলার শব্দ আর গলা খাঁকারি।

ও পাড়ায় মানুষের হুল্লোড়
দুর্গত মানুষের
কারো ঘর ভেঙ্গে গেছে ঝরে
কারো ভিটে মেরেছে জলে,
কারো উঠোনে উঠেছে পানি
আবার কোথাও বা
বাধ ভেঙ্গে গেলো বলে।

এখন বাঁধ ভাঙ্গে না আর
এখন আসেনা জোয়ান তাগড়া বরষা
ছোনের খড়ের ঘর আর ভাঙ্গে না ঝরে
পাট ক্ষেতের আল ঘুরে
আর কেউ হাঁটে না ঝরের পর অন্ধকারে।

আমরা এখন উদ্ভাসিত সড়কে
কেবল আজ বিকেলে
একটা বাতাস এসেছিল সেকেলে
আমার শিশুটি যখন গামছা ওড়িয়ে
বাতাসে দাঁড়ালো
আমার মনে হলো যেন কতকাল ধরে

দিব্যি আছে সব,
কেবল অবরোদ্ধ বাতাসে
নিঃশ্বাস নিতে পারিনা আমি
সোনার মোড়কে প্যাঁচানো প্রান
মাস্ক পড়া মুখে
বাতাস ছেঁকে ছেঁকে
জীবন শীর্ণকায় হয়ে আসে।

# আলী আকবর হোসাইন





















© Akbar husen2