...

8 views

শেষের কবিতা
সকাল বেলা, ঘুম থেকে, উঠলাম যখন আমি,
ভাবলাম একটু মোবাইল দেখি,
আন্টি দিয়েছে, goodmorning,
কিন্তু একি, এইটাও কি সম্ভব!
মানতে পারি না আমি,
না, মানিনা আমি,
স্বপ্ন দেখছি, এই বুঝি ঘুম ভাঙলো বলে।
কাকু, দিয়েছে message, "আন্টি আর নেই,
ক্যার্ডিয়াক আরেস্ট, সব শেষ।"
বসেছিলাম, চুপ করে, বিছানার একধারে,
মাথাটা কাজ করছে না ভালো।
কি করি? তাই ধীর পায়ে ঘর ছেড়ে বেরোলাম বাইরে।
কটা বাজে? ছটা কি সাড়ে ছটা,
খবরটা জানালাম, পরিবারের লোকদের।
মনের যত ব্যাথা ছিলো, সব রইলো মনে,
ভাবতে পারছে না কেউই!
মা ভাবছে খবরটা কি সঠিক?
কোনোরকমে চা টা খেয়ে, ছুট দিলাম, তিনজনে,
হাসপাতালের উদ্দেশ্যে,
ভাবিনি কোনোদিনও, হারাতে হবে আমার,
সব চেয়ে, প্রিয় মানুষকে,
যিনি আমার গুরু, আমার পথ প্রদর্শক,
এই ভাবে চলে যাবে?
বিশ্বাস করিনি আমি।

মনে পড়ছে সেই সব স্মৃতি,
প্রথম দেখা আরতি আন্টির সাথে,
আমি তখন মহা ফেশাদে,
কি যে বলি?
গান শেখার শখ, ছিলো বড়ো,
তাই গানে ভর্তি হই, সুর ও সৃষ্টি, ও বাণীচক্র।
হায় রে কপাল, টাকার আছে অনেক মূল্য,
কিন্তু নেই তাদের কাছে ছাত্রছাত্রীদের কোনো মূল্য।
শিখিয়ে ভুল ভাল, লাল রঙা চোখ রাঙিয়ে,
সবাইকে কাঁদিয়ে, নিয়ে নিত, গানের দাম,
এই ছিলো কাজ, এই ছিলো বিজনেস।
বলে কিনা " সারেগামাপা " কে গাও "
সারাগামাপা? একি অনাচার!
জিজ্ঞেস করলেই চোখ রাঙাতো ভারী।
আমি যখন এইসব, শিক্ষকদের পাল্লায় পড়ি,
নার্ভাসনেস আর নিরাশায়ে ভুগী,
তখন আসেন দুজন, আমার পথ প্রদর্শক,
আমার দুজন গুরু, আরতি আন্টি আর সাত্তকি কাকু।
মনে আনন্দ দিয়ে, সবার মনকে জয় করে,
বন্ধুর মতো মিশে গিয়ে,
গান শেখাতো আমাদের।
আরতি আন্টি, আঙ্গুল ধরে শিখিয়েছিল আমায় গান,
বেজেছিলো,সাত্তকি কাকুর তবলা, খোল, করতাল আর তাল।
এ কোন জায়গায় আছি আমি!
স্বর্গ?না বৈকুণ্ঠ ধাম?
কোথায় এসে পড়েছি?
হয়ে গেলাম, দুজনার কাছে সব চেয়ে প্রিয়,
আরতি আন্টি, হেসে আমায় বলতো, "কেমন আছিস দিতি ? বাড়িতে সব ঠিক তো?"
ভালোবেসেছেন সবাই কে, গান শিখিয়েছেন তিনি, আসল গুরু কাকে বলে ওনাকে দেখে চিনি।
গুরুর কাজ, রাস্তা দেখানো, ঠিক পথে পৌঁছে দেওয়া।
অন্ধকারে হারিয়ে গেলে,
আলোতে নিয়ে আসা।

আরতি আন্টি তাই করতেন,
ছিলো না কোনো ক্লান্তি,
মুখে এক চিলতে হাসি,
পরনে একটি শাড়ি।

রান্না ঘরে, রান্না করে,
আসতেন গান শেখাতে,
বসার জন্য, একটি চেয়ার, সেই চেয়ারটি আজও আছে,
নেই শুধু চেয়ারটির মালিক,
তাই চেয়ারটিও কাঁদে।

আমি এখন হাসপাতালে, চেয়ে আছি, সেই মানুষটির দিকে,
ঘুমিয়ে আছেন যেন,
সে ঘুম ভাঙবে না আর কোনওদিনও,
চোখ মেলে চাইবেন না তো কখনো!
মানুষটিকে যাচ্ছে না তো চেনা একদমও,
এই কি সেই নুপুর আন্টি, যাঁকে দেখেছিলাম,
সেই রবিবারে?
কান্না পাচ্ছে বড়ো, কিন্তু কাঁদিনি আমি।
এক ফোঁটাও ফেলিনি আমি চোখের জল।
জল ফেলেছি, একাকী,
যেমন, এখন ফেলছি।

মনে পড়ে এই বছরের, টিচার্স day তে,
দিয়েছিলাম, একটি শাড়ি, ভেবেছিলাম,
কোনোদিনও তিনি পরবেন সেই শাড়ি।
সেই শাড়িও আলমারিতে তুলে রাখা আছে,
সেও বোধ হয়ে আমার মতো, এক কোনে বসে,
কাঁদে।
হতে পারে, আরো অনেক আন্টি হয়তো আসবেন,
কিন্তু আরতি আন্টির মতো আন্টি, কেউ কি হতে পারবেন?
আরতি আন্টি, বলেছিলেন, তিনি আসবেন একদিন বাড়ি,
তিনি আর আসবেন না, কোনোদিনো আমাদের, বাড়ি।
তিনি এখন স্বর্গের ইন্দ্রশোভায় গান গাইছেন হবে?
বুঝি বা মা সরস্বতীর চরণে বসে, উনি বীনা শুনছেন,
কিংবা
বৈকুণ্ঠ ধামে, তিনি পেয়েছেন,
পালক পিতার চরণে ঠাঁই,
স্বর্গে এখন সবাই খুশি,
মর্তে সবাই কাঁদে, সবাই দুখী,
সেই আরতি আন্টি, চলে গেছেন, অনেক দূরে,
আসবেন না, আর ফিরে।
বোধ হয়ে আসবেন, পাখি বা ফুল হয়ে, এই বাংলাতেই,
কোকিল হয়ে গান শোনাবেন কোনো বসন্ত কালে,
বা ফুল হয়ে জন্মাবেন, আমাদের এই বাগানে।

সেদিন আমায় হাসি মুখে,নিয়ে গেছিলেন ছাদে,
নিজের হাতে লাগানো কিছু, গাছ দেখাতে।
জবা, বেল, জুঁইতে ভরা, সুন্দর ছাদখানি।
ওরা বোধ হয়, আমারই মতো, কেঁদেই চলেছে খালি।

প্রকৃতিও, মাঝে মাঝে, কেঁদে উঠছে,
জানান দিচ্ছে, তারাও কতো ভালোবাসে , সেই লোকটিকে,
টাপুর টুপুর, ঝিরি ঝিরি, বৃষ্টি পড়েই যায়,
কিন্তু সেই লোকটি ফিরছে না তো হায়!
আরতি আন্টি চলে গেছে, সবাইকে কাঁদিয়ে,
সন্ধ্যায়ে পাখিরা ফিরছে, দুখের, গান গেয়ে।
তুমি যেখানেই থেকো, আনন্দে থেকো, শান্তিতে থেকো, কি বলবো আর?
তোমায় যেন রাখতে পারি, আমার হৃদয়ের জানালায়ে,
এই করো আশীর্বাদ।

Dedicated to my Guru. This poetry, I had written in the year of 2023, that's the year when she suddenly passed away.🙏🙏

Anyway, Dear reader, tell me in comment box, how many of u r bengali, like me 😊
Thank u 🙏🙏




© All Rights Reserved