...

2 views

নারীবাদী নয় এ নারী বাদ ই
বিবাহ এই তিন অক্ষরের শব্দ টা মেয়েটার কাছে দুই অক্ষরের হাসি টা ভুলিয়ে দিলো,
অনেক বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভালো ডিগ্রী অর্জন করে চাকরির সন্ধানে জীবনের তিক্ত তম অধ্যায় সে কাটিয়েছিল,
জীবন তাকে যুদ্ধ করা,সহ্য করার সব পথেই first ক্লাস এ উত্তীর্ণ করে দেয়,
ছেলেদের সাথে সমানে টক্কর দেওয়া মেয়েদের কোনো দিন ই মেনে নিতে পারেনি আমাদের সমাজ,
তকমা দেওয়া হয় নারী বাদী।কিন্তু বিশ্বাস করুন নারী বাদী ,বিবাদী এসব বলে কিসসু হয়না,
প্রত্যেক টা মেয়ে ই তার বাবার রাজকুমারী হয়,
এই আশায় বেচে থাকে তার জন্য ও কেউ থাকবে ,অন্তত একটা মানুষ,
দিনের শেষে ক্লান্তি হারাতে একটা মানুষের মনযোগ ই সেই অদূরে মেয়েটার দুনিয়া হয় তখন,
সে পরিবর্তন মানিয়ে নিতে পারে,
কিছু না জানা মেয়েটা হয়ে ওঠে অন্নপূর্ণা,
কিন্তু মা এরা মা ই হয় ভালো,
জামাই কে আদরে ভরিয়ে রাখতে জানে,
কিন্তু বৌমা কে যতই মেয়ে করার চেষ্টা করুক না কেনো মনের কোণে লুকিয়ে থাকে বৌমা শব্দটা,
সেই মেয়েটির ক্ষেত্রেও এর অন্যথা হয়নি,
কষ্ট করে সংসার নির্বাহ করা শাশুড়ি চেয়েছিল তার বৌমা তার মত হোক,
সে যেমন কষ্ট পেয়ে দিন যাপন করেছেন সেও সেটাই মেনে নিবে।
পরিবর্তন জীবনের নিয়ম এটা তার সসুর বাড়ি বুঝতে চাইনা,
কারণ তারাও দেখেছে ওনার কষ্ট টা,
আচ্ছা একটা কথা বলুন আপনি সুযোগ ছিল না বলে কষ্ট করেছেন,
এখন আমাকেও একই কষ্ট করতে হবে এর যুক্তি খুঁজে পাইনা স্মিতা,
স্মিতার বিয়ের পর স্বর্গের চতুর্থ জগতে বাস করছিল,
ভুলে গেছিলো পায়ের নিচে ও মাটি থাকে,
মা এরা সহজে মেয়েদের বিশ্বাস করতে পারে,জামাই কেও পারে,কিন্তু বৌমা কে হয়তো করা যায়না।
তাইতো স্মিতার শাশুড়ি মা এর জ্বর হলে স্মিতা ওষুধ দিলে তার শাশুড়ি মেয়ে কে ফোন করে জেনে নেন যে ওষুধ টা ঠিক দিয়েছে কিনা।
অন্যায় সহ্য না করে যখন নিজেকে ভিড় থেকে নিজেকে একলা করে সরিয়ে নেবে,তখন মানুষ তার গুরুত্ব টা বুঝতে পারে,
নিজেকে বিলিয়ে উজাড় করে যতখন করবে তার মর্ম কেউ বুঝবে না,এটা স্মিতা খুব তাড়াতাড়ি ই বুঝেছিল।
স্মিতার অসুবিধা ছিল না কিছুই,দিব্যি সংসার গোছাছিল।বলে না ভগবান এর পরীক্ষা... ননদিনি কে রায়বাঘিনি বলার পক্ষে স্মিতা কোনোদিন ই নয়।কারণ তার ননদ ও অন্য কোনো বাড়ির বউ।
হয়তো সেও নিজের মত করে যুদ্ধ করছে।
তবুও আজ তার খুব বলতে ইচ্ছে হয়েছিল আমি গুছিয়ে চলতে পারি,তুমি তোমার সংসার গুছিয়ে নাও,আমার টা আমাকেই বুঝে নিতে দাও।
কিন্তু কোথাও একটা ভালো বউ এর ইমেজ এ বাধা পেয়ে,কথা টা আর বলা হয়ে ওঠেনি।আজ অনেক দেরি হয়ে গেছে,স্মিতা আজ বুঝেছে কোনো সম্পর্ক পরিবর্তন করে ভালো থাকার চেয়ে ,সম্পর্ক যেটা সেটা থাকলে সেটা দীর্ঘস্থায়ী হয়।
যেমন বৌমা বৌমা ই থাকুক,তাকে মেয়ে বানাতে যাবেন না,
ছেলের বিয়ে দিয়ে ভুলে যায় যে আরো একটা মেয়ে কে বিয়ে দিয়ে নিয়ে এসেছে।
তার অসুবিধার কোনো গুরুত্ব কারো কাছে ছিল না।দায়িত্ব দিতে হলে ভরসা করতে হয়।ভরসা বিহীন দায়িত্ব দোষ উৎপন্ন করে।
এই বয়সে এসে আপনাদের পাল্টানো সম্ভব নয়,মানিয়ে নিতে হবে।
এই ভেবে স্মিতা যখন তার দায়িত্ব পালন করে চলেছে।আজ তিক্ত অভিজ্ঞতার জেরে জর্জরিত।
পরামর্শ নেওয়ার জন্য একবার বলে দেখতে,তোমার আলোচনা সমালোচনার সাথী হোক না তোমার মেয়ে ,তোমার ছেলে ,তোমার জামাই।
কিন্তু যে মেয়েটাকে নিয়ে এসেছো,তাকে যদি সব কিছুর আড়াল রাখো,একদিন দেখবে সেও তোমাদের চোখের আড়াল হয়ে যাবে।
স্মিতার স্মিত হাসি তার সব কষ্ট ভুলিয়ে দেয়,তার একাকীত্ব এখন সে অনেক ভালো আছে।এটা শুধু স্মিতা নয়,আমাদের সমাজে ঘরে ঘরে বধূরা এই স্মিতার জলজ্যান্ত উদাহরণ।স্মিতা আজ বৃদ্ধ বয়সে উপনীত।অভিজ্ঞতা আর ধৈর্যের সহ্য এর পাঠে সে উত্তীর্ণ।আজ যখন স্মিতা বলছিল তার নতুন বউ হয়ে আসার গল্প।চোখ টা চক চক করছিলো।এই বুঝি বাঁধ ভেঙ্গে যাবে।
যে বাঁধ অনেক দিন আগেই ভেঙেছে,তার আবার নতুন করে ভাঙার কি আছে?
সে এক দিনের কথা,যখন পাশে দাড়ানোর কেউ ছিল না।সেই নিজের মেয়ে ছেলে কেউ না ।এই পর মেয়েটাই তাদের সুস্থ করে তুলেছিল,কিন্তু সুস্থ হতে না হতেই ভুলে গেছে প্রত্যেকে অসুস্থতার চিহ্ন।
তার স্বামীর অসুস্থতা র কারণ কে বলা হয় নজর লেগেছে।ভাইরাস ,ব্যাকটেরিয়া ঘটিত রোগ যা মেডিক্যাল সাইন্স বলছে রক্তের রিপোর্ট এ ,তার কি নজর লেগে হয়??হয়না।তবুও হাল ছাড়েনি। যার হাত ধরে বাবার হাত ছেড়েছিল।সেই হাত কিন্তু সে ছেড়ে দেইনি।সহ্য করছিল।তার মানে এটা নয় যে চোখ বন্ধ করে অন্যায় সহ্য করবে।স্মিতা হয়তো ঝগড়া করে না। কারো উপর চিৎকার করেনা।কিন্তু রাগ করে , অভিমান করে কষ্ট পায়।
সেদিন দুপুর বেলায় তার সসুর মশায় গেছে সংসার খরচের টাকা বৌমার হাতে তুলে দিতে।স্মিতা নিতে চায়নি।কিন্তু কোনো ভাবেই সে তার ভাবনা বোঝাতে পারেনি।তার পরেই তার শাশুরির রাগ।স্মিতা বুঝতে পেরেছে তার শাশুরির কষ্ট হয়েছে,এতদিনের সংসার চালানো অভ্যাস আজ এই দুইদিনের মেয়েটার হাতে দেওয়ায় তেনার কষ্ট হয়েছে।এটা স্বাভাবিক। এতে ওনার কোনো দোষ দেখেনি স্মিতা।টাকা গোছা তুলে এনে যখন শাশুরির হাতে তুলে দিয়ে বললো মা তুমি সংসার চালাও যেমন চালাতে।,
শাশুরির চোখে মুখে খুশি দেখে সেদিন স্মিতা ও খুশি হয়েছিল।খারাপ লেগেছিল এই ঘটনার ঠিক 5 মিনিট আগে র দুর্ব্যবহারের জন্য, যার জন্য বিন্দুমাত্র দায়ী স্মিতা ছিল না।স্মিতার কলেজ আছে খুব ব্যস্ত তার মধ্যে রান্না বান্না করছে,স্মিতার উপরে অন্য একটা কাজ দেওয়া হলো।সেটা তখনি করতে হবে,না হলে বলা হবে সে নাকি কোনো কথা শোনেনা।
স্মিতার শসুর শাশুরির আত্মীয়ের বাড়ি যখন যেই মুহুর্তে বলবে যেতেই হবে,কিন্তু স্মিতার বাপের বাড়ির সময় বাহানা আসে।
কারণ সে নতুন বউ।তার বায়না করা সাজে না।আমরা যেটা বলবো তুমি শুনতে বাধ্য।তুমি আবার কি বলবে।যুক্তিবাদী smitar এখানেই আপত্তি।স্মিতার কোনো একদিন ঘুম ভাঙতে সকাল 6 টা বেজে গেছে।শাশুড়ি মা ফোন করে জানিয়ে দিলো,এত বেলা পর্যন্ত কেউ ঘুমাই??স্মিতা বললো মা জ্বর হয়েছিল রাতে।আমাকে ডাকতে পারিস নি??ফোন তো করতেই পারতিস? ফোনে চার্জ ছিল না মা।ঠিক আছে বাপের বাড়ি চলে যাও কয়দিন থেকে জ্বর ভালো হলে আসবে।তোমাদের মেয়ে র সাথে তার শাশুড়ি সসুর এরকম ব্যবহার করলে তোমরাই গর্জে উঠতে,এই ভাবনা টাও স্মিতার বুকে চাপা থেকে গেলো।প্রতিদিন এর অসংখ্য খারাপ লাগা জমছে।সব ই অতি তুচ্ছ ,তবু ঘটনা তো।স্মিতা বিয়ের পর থেকেই তার শাশুড়ি শসুর কে নিয়ে বেড়াতে যেতে চাই,অনেক বার বলেও ফল হয়নি।যখন তার ননদের এই ইচ্ছা হলো।তার শাশুড়ি শসুর রাজি হয়ে গেল এক পায়ে,।স্মিতা তার জমানো কষ্ট তার স্বামী অবনী কেও বলেনা।কারণ তার মা দিদি দের নিয়ে নিন্দা করছে ভেবে হয়তো সেও তিরস্কার করবে।আচ্ছা বৌমা বলেই কি এত তিরস্কার??মেয়ের মতন না বলে বৌমার মতোই তো দেখতে ।স্মিতা নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছিল।হারিয়ে দিছিলো নিজেকে একাকীত্বের ভিড়ে।যে ভিড় টা তার ই আপন জনের দেওয়া।সে এখন কোনো বাড়ির বউ,মেয়ে নয়।
স্মিতার জীবনে নতুন অধ্যায় শেখাছিল আজ ও আমাদের সমাজ বুদ্ধিমতী দের জন্য অপ্রস্তুত।
স্মিতার অঘটন ঘটলে তাকে শুনতে হবে তার চলা ফেরার দোষে এরকম হয়েছে।
তার ও যে বিপদ হতে পারে সেটা অবিশ্বাস্য, হাস্য কর।
শুধু বৌমা র কাছেই ভুঁড়ি ভুঁড়ি এক্সপেক্টেশন থাকবে??স্মিতা কি তার শশুড় বাড়ির থেকে কোনো প্রত্যাশা রাখতে পারে না??না তার বেলায় খালি নিষ্কাম কর্মের গীতার বাণী উদ্ধৃত করা হবে এই সব সাত পাঁচ ভাব তে ভাবতে সন্ধ্যে প্রদীপ হাতে এগিয়ে চললো স্মিতা।..................
© অনুরাধা