...

0 views

ভাঙা ক্ষমার ছায়া
** "ভাঙা ক্ষমার ছায়া"**

### ১. পরিচিতি এবং দুর্ঘটনার মুহূর্ত

একটি নিরবধি মুহূর্তের জন্য, তাকে তার গাড়ির সীমানার মধ্যে সাসপেন্ড করা হয়েছিল। বাতাসের এক অদৃশ্য ঢেউ যেন তাকে ধাক্কা দিলো, আর পরের মুহূর্তেই গাড়িটি গিরিখাতের মুখে আছড়ে পড়ে। ঝাঁকুনির তীব্রতা যেন সমস্ত কিছু থামিয়ে দেয়। বাঁচার জন্য হালকা শব্দগুলো তার ঠোঁট থেকে বের হলো—"আমি দুঃখিত, আমি খুব দুঃখিত।" ঠোঁট থেকে রক্ত ​​ঝরে পড়ে, তার ভাঙা ক্ষমা চাওয়াটা উড়ে গেল বাতাসে।

গাড়ির ভেতরে আটকে থাকা এক অবসন্ন মুহূর্তে সে তার নিজের জীবনকেই যেন চোখের সামনে দেখতে পায়। সবকিছু থেমে আছে, গাড়ির ইঞ্জিনের চিৎকার থেমে গেছে, কেবল তার মাথায় হাজারো স্মৃতি বাজছে।

### ২. অতীতের জালে ফিরে যাওয়া

তার চোখের সামনে ভেসে ওঠে গত বছরের একটি ঘটনা। তার স্ত্রী রিয়া। তারা একে অপরকে ভালোবাসত, কিন্তু কিছু ভুল বোঝাবুঝি আর ভুল সিদ্ধান্ত তাদের সম্পর্ককে ভেঙে দেয়। তাদের শেষ তর্কটা যেন প্রতিধ্বনিত হচ্ছে তার কানে—রিয়া কান্নায় ভেঙে পড়েছিল, আর সে চিৎকার করেছিল, "তুমি আমাকে বোঝ না!" রিয়া কেঁদেছিল, কিন্তু সে তো আর থামেনি। তার ক্ষোভের আঘাত রিয়ার হৃদয়ে পড়েছিল।

তার পরে, একটা নির্জন রাত। রিয়ার ফোনে বারবার কল করে সে মেসেজ পাঠিয়েছিল, কিন্তু কোনো উত্তর আসেনি। এর পরের দিন, সে জানতে পারে রিয়া তাকে ছেড়ে চলে গেছে—স্থায়ীভাবে। সে তখনও বুঝতে পারেনি, কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, সেই মুহূর্তটাই ছিল তার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল।

### ৩. সম্পর্ক এবং ভুলের শেকড়

তবে শুধু রিয়ার কথাই নয়। তার মনে ফিরে আসে শৈশবের একটি ঘটনা। তার ছোটবেলার বন্ধুটি, সুমন। তারা ছোটবেলায় খুব ঘনিষ্ঠ ছিল। একবার সুমনের কাছে সাহায্য চেয়েছিল, কিন্তু সে সাড়া দেয়নি। তখন সুমনকে অবজ্ঞা করে সে তার জীবনের বাইরে ঠেলে দিয়েছিল, এতো বড় ভুলের শাস্তি সে আজও ভোগ করছে। সুমনও একদিন তার কাছে ক্ষমা চেয়েছিল, কিন্তু সে গ্রহণ করেনি। আজ মনে হচ্ছে, যদি তখন ক্ষমা করতে পারত, হয়তো এই অপরাধবোধটা আজ থাকত না।

### ৪. ক্ষমা এবং মুক্তির জন্য সংগ্রাম

রক্তক্ষরণ আর যন্ত্রণা তাকে বাস্তবের মাটিতে ফিরিয়ে আনে। সে অনুভব করে যে, তার শরীরটা ভেঙে গেছে, কিন্তু হৃদয়টা আরও বেশি ক্ষতবিক্ষত। তার মনে হয়, এটাই বুঝি তার জীবনের শেষ অধ্যায়। কিন্তু বাঁচার জন্য তার ভেতরে এক চোরা আকাঙ্ক্ষা জেগে ওঠে। সে কেবল মরতে চায় না। সে চায় নিজের ভুলগুলো শোধরাতে।

কিন্তু ক্ষমা পাওয়া এত সহজ নয়। সে নিজেকেই প্রশ্ন করে—"আমি কি সত্যিই ক্ষমার যোগ্য?" জীবনের সব প্রিয় মানুষকে কষ্ট দিয়েছে, আর তার কোনো ক্ষমা পাবার অধিকার নেই। তবুও, তার ভেতরের এক ক্ষীণ কণ্ঠস্বর বলে ওঠে, "তুমি চেষ্টা করতে পার।"

### ৫. বর্তমানে ফিরে আসা

গাড়ির ভাঙাচোরা অবস্থা থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়। এক মুহূর্তের জন্য সে অচেতন হয়ে পড়ে, তারপর ধীরে ধীরে হাসপাতালে ফিরে আসে। তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকে ডাক্তার ও নার্সেরা। তার শ্বাসের প্রতিটা টান যেন কষ্টের প্রতীক হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু সে বেঁচে গেছে।

দিনের পর দিন হাসপাতালে কাটতে থাকে। শারীরিক যন্ত্রণার সাথে, সে ভেতরেও এক অভ্যন্তরীণ যুদ্ধ চালাচ্ছে। মাঝে মাঝে মনে হয়, হয়তো দুর্ঘটনাতেই তার জীবন শেষ হয়ে যেত। কিন্তু আবার মনে হয়, তার বাঁচার কারণ আছে—সে নিজের ভুলগুলো শোধরাতে চায়।

রিয়ার কথা মনে পড়ে। সে কি রিয়াকে ফিরিয়ে আনতে পারবে? আর সুমন? তার কাছেও তো ক্ষমা চাওয়া বাকি।

### ৬. শেষ অধ্যায়

হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার দিন, সে সিদ্ধান্ত নেয়। সে সবার কাছে ক্ষমা চাইবে। প্রথমে সে রিয়ার কাছে যাবে, তারপর সুমনের।

রিয়ার কাছে সে ফোন করে। অনেক সাহস নিয়ে কথা বলতে শুরু করে—"রিয়া, আমি ক্ষমাপ্রার্থী। আমি তোমাকে কষ্ট দিয়েছি।"

রিয়া কিছুক্ষণ চুপ থাকে, তারপর বলে, "আমরা দু'জনেই ভুল করেছি। কিন্তু আমাদের সম্পর্কটা এখন আর আগের মতো হতে পারে না।"

এই কথাটা শোনার পর সে স্তব্ধ হয়ে যায়, তবে বুঝতে পারে যে এটি তার প্রাপ্য। সুমনের সাথে কথা বলাও অনেক কঠিন, কিন্তু সে সাহস করে তার পুরনো বন্ধুর কাছে পৌঁছে যায়। সুমন তাকে দেখে কিছুটা অবাক হয়। কিছুক্ষণ চুপ থেকে, সে বলে, "তুই আমাকে ভুল বুঝেছিলি। কিন্তু তুই যে এলি, সেটা অনেক বড় ব্যাপার।"

এরপরও হয়তো সবকিছু সহজে ঠিক হবে না। কিন্তু তার অন্তত এই বিশ্বাস জন্মায় যে ক্ষমা চাওয়ার পথে সে এগিয়েছে। সে বুঝতে পারে, তার ভুলগুলো শোধরানো খুব সহজ হবে না, কিন্তু সে তো চেষ্টা করছে। এটাই সবচেয়ে বড় পাওয়া।
✍️✍️✍️

© Indrani Palit Karmakar