...

1 views

" বিকল্প প্রেম!! "
-" দাদু, ও দাদু ,দেখছো বাইরে কতো সুন্দর বৃষ্টি হচ্ছে..." - যামিনী বলে উঠলো।
সত্যি বাইরে বেশ জোরেই বৃষ্টি পড়ছে। এই বৃষ্টিতে সামনের ঐই পুকুর পাড়টা দেখতে খুব সুন্দর লাগছে, আশেপাশের গাছপাতা গুলো যেন আনন্দে হেসে চলেছে,তবে আজও যেন আমার মনের মতো প্রকৃতিও সেই হাসির জায়গায় কেঁদে চলেছে অনবরত, নিজের মনকে হালকা করার জন্য....
-"ও দাদু ,শুনতে পারছো কি......ডাকছি তো তোমায়...."
হঠাৎ যামিনীর ডাকে চমক ভাগলো আমার,বললাম:
-"হ্যাঁ,মা বলো,কি হয়েছে?.."
-" দেখো না....কতো জোরে বৃষ্টি পড়ছে....এরম আবহাওয়ায় চা-পকড়ার সাথে যদি একটা গল্প হয়ে যায়,তাহলে তো মজাই এসে যায়......"
-" বাবা রে,তোর আবদার তো কম নয়...."- বলে উঠলাম আমি।
-" হ্যাঁ তো কি....এরম বলার কি আছে,ঠিকই তো বলেছি..."- একটু হেসেই বলে উঠলো।

সত্যি একদম তার দিদার মতই হয়েছে যামিনী, শান্তশিষ্ট তো ছাড়োই, বিশাল ধুরন্ধর....তবে আজ যদি সে বেচেঁ থাকতো.....
হঠাৎ চোখে জল চলে এলো....
-"ও দাদু,তুমি কি কাদঁছো???"- এই বলে যামিনী উঠে পড়লো।
তারপর আমার চোখের জল মুছে বললো: -"কি হয়েছে গো??"
-" কিছু না রে...."- চোখের জল মুছতে মুছতে বললাম।
-" আরে, বলো না,কি হয়েছে ....."
-"কিছু না রে,তবে জানি না কেন,তোকে দেখলেই তোর দিদার কথা খুব মনে পড়ে ...."- যামিনীর মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বললাম।
-"কেন,আমি কি পুরো দিদার মতই দেখতে??"
-"শুধু কি একই দেখতে!! ওর স্বভাবও যে নিয়েছিস..."- একটু হেসেই বললাম।
-" হ্যাঁ,স্বভাব একই কিনা জানি না,তবে নামটা যে প্রায় একই দিয়েছো,সেটা ভালো বুঝতে পারছি..."- একটু মুচকি হেসে বললো যামিনী।
-" হ্যাঁ,সে আর বলতে, আসলে তোর দিদা চলে যাওয়ার পর আমি বড্ড একা হয়ে গিয়েছিলাম, কোনো কিছুতেই আর কিছু ভালো লাগতো না, এখানে এই চেয়ারে বসে বড্ড একা একা লাগতো......তারপর তো তুই এলি,আর তোর মধ্যেই আমি আমার সেই দামিনীকে খুঁজে পেলাম,যাকে হারানোয় আমি সম্পূর্ণ একাকীত্বে ভুগছিলাম........."
-" বাবা রে, এই বৃষ্টিতে তো ভালো রোমান্টিক হচ্ছো দাদু.....দিদা থাকলে তো আরো একবার বিয়ে করে নিত......"- হেসেই বলে উঠলো যামিনী।
-" ধুরর!! কি যে বলিস.."- হেসেই বললাম।
-" আচ্ছা,দাদু,শোনো ....মাকে এক্ষুনি চা-পকড়া বলে আসছি,তুমি একটু বসো....তারপর নাহয়ে তোমার আর তোমার দামিনী মানে দিদার প্রেমের গল্প শোনা যাবে...."- এই বলে চলে গেলো যামিনী।

যামিনী চলে যাওয়ার পর ,বাইরের দিকে আমার চোখ গেলো,আর আমার চোখের সামনে দামিনীর সাথে কাটানো মুহূর্তগুলো যেন ধীরে ধীরে ফুটে উঠতে লাগলো..... সত্যি কারোর অনুপস্থিতিতেই তার গুরুত্ব বোঝা যায়,যেমন এখন মনে হচ্ছে- 'সত্যি এক একটা মুহূর্ত যেন কত সুন্দর ছিল'.....আমার জীবনে তো সেই একজনই ছিল,কিন্তু তারপর সেই দুর্ঘটনা......
হঠাৎ চেয়ার থেকে উঠে পড়লাম...চোখে জল চলে এলো,বার বার সেই দুর্ঘটনা আমার মাথায় ঘুরে বেড়ায়,ভুলে যেতে চাই কিন্তু পারি না, সেদিনও এরমি বৃষ্টি পড়ছিল,আজও হচ্ছে.....তবে যামিনীকে কিভাবে বলবো সত্যি কথাটা??...সে কি বুঝতে পারবে?? ...জানি না আমি,তবে রক্তের সম্পর্কের না হলেও সে কিন্তু একদম দামিনীর মতই.....
আসলে সেই দুর্ঘটনা শুধু আমার দামিনীকে কেড়ে নেয়নি, যামিনীর বাবাকেও যামিনীর থেকে কেড়ে নিয়েছিল....
আমারই অফিসে কাজ করত যামিনীর বাবা সুরেশ, সেদিন বাড়ি ফেরার সময়,দুই বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে বেশ কিছু লোক মারা যায়,কিছু আহতও হয়,আর সেই মৃতদের মধ্যে দামিনীর সাথে যামিনীর বাবাও ছিল।
তবে যামিনী যে তখন খুবই ছোট, তাকে তখন নিজের কাছে আগলে নেওয়াই শ্রেয় বলে মনে হয়েছিল,তাকে যে আমি দামিনীর চেয়েও বেশি ভালবাসি,তাকে কিভাবে বলবো যে, সে আমার নিজের নাতনি নয়...
-" কি হলো দাদু,জানলাটা এবার বন্ধ করে দাও....বৃষ্টির ঝাপটা আসছে তো..." - হঠাৎ যামিনীর আওয়াজ শুনে চমকে গেলাম,দেখলাম যামিনী তার হাতে একটা প্লেটে চা-পকরা এনেছে.....আর আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছে.....আর আমি একইভাবে চোখে জল নিয়ে তাকিয়ে রইলাম তার দিকে......