...

6 views

“স্যর ভিভিয়ান রিচার্ডস”
স্যর ভিভিয়ান রিচার্ডস
********************

ভিভ!
আই ভি এ রিচার্ডস!
স্যর আইজাক ভিভিয়ান আলেকজান্ডার রিচার্ডস!
অ্যান্টিগুয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ ক্রিকেটীয় বীর!
ওয়েস্ট ইন্ডিজ দ্বীপপুঞ্জ তথা বিশ্ব ক্রিকেটের অবিসংবাদী নায়ক ও বন্দিত রাজপুত্র!

শুধু রেকর্ড দিয়ে যদি ভিভ রিচার্ডসকে মাপতে যান পাঠক, তাহলে খুব বড় ভুল করবেন। কারণ, নেভিল কার্ডাসের মতো বর্তমান নিবন্ধকারেরও এটাই মত যে, স্কোরবোর্ড সত্যিই একটা গাধা। কারণ স্কোরবোর্ডে লেখা থাকে না কোনো ব্যক্তিগত সংগ্রামের ইতিহাস! যদি থাকত, তাহলে স্কোরবোর্ড এটাও জানাতে পারত যে, কোন্ পর্যায় থেকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটকে কোন্ পর্যায়ে উন্নীত করেছিলেন রিচার্ডস ; অথবা গায়ের রঙের কারণে কী পরিমাণ ব্যঙ্গবিদ্রুপ সহ্য করতে হয়েছিল তাঁকে! তাই কেবল 121 টেস্টে 8540 রান কিংবা 187 ওয়ান ডে ম্যাচে 6721 রান দিয়ে ভিভকে বিচার করাটা শুধু বোকামিই নয়, অন্যায়ও। সুনীল গাভাসকারের মতো যদি কায়মনোবাক্যে একাগ্রচিত্ত থাকতেন, তাহলে হয়তো বা টেস্টে প্রথম দশ হাজার রান সংগ্রহকারী ব্যাটসম্যান তিনিই হতেন। কিন্তু ভিভের স্বভাবে ছিল না শান্ত মনোভাব। চ্যুইংগাম চিবোতে চিবোতে বোলারদের যেন বেবাক খুন করতেন রিচার্ডস! তাঁর যদি সুযোগ হতো শচীন টেণ্ডুলকারের মতো 200 টেস্ট খেলার বা সেঞ্চুরির সেঞ্চুরি করার, তাহলে কোথায় গিয়ে থামতেন তিনি—বলা মুশকিল! যদি মাটি কামড়ে অদম্য আকুতিতে পড়ে থাকতে পারতেন বাইশ গজে, তাহলে সুনীল গাভাসকারের রেকর্ড ভেঙে টেস্ট ক্রিকেটের প্রথম এগারো হাজারী ভিভই হতেন, অ্যালান বর্ডার নন। জাভেদ মিয়ানদাদের মতো সুদীর্ঘ ক্রিকেট কেরিয়ার এবং ছ’ ছ’টা বিশ্বকাপ খেলার যদি সুযোগ পেতেন ভিভ, তাহলে ওয়ান ডে ক্রিকেটের ইতিহাসও আজ অন্যভাবে লেখা হতো। এটা ভুললে চলবে না যে, ভিভ যখন খেলছেন, তখন বিশ্ব ক্রিকেট শাসন করছেন আরও অনেক স্বনামধন্য ব্যাটসম্যান। ভারতের সুনীল গাভাসকার-গুন্ডাপ্পা বিশ্বনাথ-দিলীপ বেঙ্গসরকার ; পাকিস্তানের জাভেদ মিয়ানদাদ-জাহির আব্বাস ; ইংলন্ডের টনি গ্রেগ-জিওফ বয়কট-গ্রাহাম গুচ-ডেভিড গাওয়ার-মাইক গ্যাটিং ; অস্ট্রেলিয়ার ইয়ান চ্যাপেল-গ্রেগ চ্যাপেল এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজেরই ক্লাইভ লয়েড-অ্যালভিন কালীচরণ-গর্ডন গ্রিনিজ-ডেসমন্ড হেইনস্-রিচি রিচার্ডসন। এঁদের সমসাময়িক হয়েও এঁদের চেয়ে অনেকটাই আলাদা ছিলেন ভিভ—তাঁর জমানায় তিনিই ছিলেন রাজা! পরিশীলন নিশ্চয়ই ছিল ভিভের খেলায়, কিন্তু সেই পরিশীলন ভেঙে ব্যাট হাতে নিষ্ঠুর শাসন করতে কখনো পিছপা হননি ভিভ। যখনই প্রয়োজন পড়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের, জ্বলে উঠেছেন তিনি। ঊনআশির প্রুডেনশিয়াল কাপের ফাইনালে তাঁর সেঞ্চুরি জিততে সাহায্য করেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। চুরাশির ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে মাইকেল হোল্ডিং-কে সঙ্গে নিয়ে ভিভের সংহারলীলা থেমেছিল ওয়ানডেতে তাঁর ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ অপরাজিত 189 রানে! 1986-’87-র নিউজিল্যান্ড সফরে ডুনেডিনে এক ইনিংসে করা ভিভের শতরান ও ফাইভ-উইকেট-হল্-এর রেকর্ডটি 2005 সাল অবধি অক্ষুণ্ন ছিল। ছিয়াত্তর সালটা বোধহয় ছিল ভিভের জীবনের সবচেয়ে স্মরণীয় বছর। সেবছর 11 টি টেস্টে 90 গড়ে সাতটি সেঞ্চুরিসহ তিনি 1710 রান করেন, যার মধ্যে ওভালে করা তাঁর ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ 291 রানের ইনিংসটিও ছিল। এই রেকর্ডটি কোনো এক ব্যাটসম্যানের দ্বারা এক ক্যালেন্ডার ইয়ারে করা সর্বোচ্চ রান হিসেবে তিরিশ বছর অক্ষুণ্ন ছিল, যা 2006 সালের 30 নভেম্বর পাকিস্তানের মহম্মদ ইউসুফ (ইউহানা) ভেঙে দেন।

বিদ্রোহী ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের হয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় খেলতে যাওয়ার প্রস্তাব ও তৎসংক্রান্ত “ব্ল্যাঙ্ক চেক্” দু'বার প্রত্যাখ্যান করেছিলেন রিচার্ডস—প্রথমে তিরাশি সালে, পরে আবারও চুরাশি সালে‌।

চুরাশি থেকে একানব্বই সাল পর্যন্ত পঞ্চাশটি টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে নেতৃত্ব দিয়েছেন রিচার্ডস—নেতা হিসেবে পরাজিত হননি একটিও টেস্ট সিরিজে—যে কৃতিত্ব অন্য আর কোনো ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্যাপ্টেনের নেই। তাঁর জেতার অদম্য ইচ্ছাশক্তিই তাঁকে এই অনন্য কৃতিত্বের অধিকারী করেছে বলে মনে করা হয়।

1974 থেকে 1991 পর্যন্ত দীর্ঘ ক্রিকেট জীবনে চারটি বিশ্বকাপ খেলেছেন ভিভ—প্রথম তিনটিতে ক্লাইভ লয়েডের নেতৃত্বে; যার মধ্যে পঁচাত্তর আর ঊনআশি সালের বিশ্বকাপ জিতেছেন তিনি। তিরাশির ফাইনালে কপিল দেব অত্যাশ্চর্যভাবে প্রায় তিরিশ গজ ছুটে গিয়ে তাঁর ক্যাচটি না ধরলে হয়তো সেবারেও বিশ্বকাপ ওয়েস্ট ইন্ডিজের ঘরেই থাকতো। সাতাশির রিলায়েন্স কাপে আবার রিচার্ডসই ছিলেন...