...

0 views

নিকষা
নিকষা

এখন আষাঢ় মাস চলছে রোজ বেশ জোর বৃষ্টি হচ্ছে। আজ রবিবার অফিস ছুটি। জানালার ধারে দাঁড়িয়ে আমি বৃষ্টি দেখেছি আর কিছু পুরোনো দিনের কথা ভাবছি আমার মোবাইল ফোনে অঞ্জন দত্তের সেই গানটা বাজছে "আমি বৃষ্টি দেখেছি।"
কিছুদিন হল নিলার সাথে আমার ডিভোর্স হয়েছে। নিলার একটা বখাটে ছেলের সাথে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল সেটা আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারি নি।
এখন আমি একা জীবন যাপন করি। প্রথম প্রথম আমার একটু অসুবিধা হত কিন্তু এখন বেশ অভ্যাস হয়ে গেছে। শুধু আমার বাচ্চা ছেলেটার কথা মনে হলে মনটা খারাপ হয়ে যায় না জানি সে এখন কেমন আছে নিলাতো তার সাথে আমাকে দেখাও করতে দেয় না।
আমি ভাবছি আর বিয়ে থা করবো না স্বাধীন ভাবে বেশ ভালই আছি। আত্মীয়স্বজনরা গ্রামের বাড়ি থেকে ফোন করে আমাকে আবার বিয়ে করতে রাজি হওয়ার  জন্য অনুরোধ করছে কিন্তু আমি সাফ মানা করে দিয়েছি।
আজ ভাবছি দুপুরে রান্নাবান্না করবো না হোটেল থেকে  খাবার কিনে এনে দুপুরে খেয়ে নেবো।
হঠাৎ মোবাইল ফোনটা বেজে উঠল হাতে নিয়ে দেখি রাজীবদা কল করছে।
কল রিসিভ করতেই রাজীবদার কন্ঠস্বর শুনতে পেলাম।

রাজীবদা: তোমার দুপুরের রান্না হয়ে গেছে?
আমি: না।
রাজীবদা: আজ আমার ফ্ল্যাটে চলে এসো। স্পেশাল পেঁয়াজের খিচুড়ি আর ডিম ভাজা রান্না করছি তাড়াতাড়ি চলে এসো বেশ জমিয়ে খাওয়া হবে আর গল্প হবে।
আমি: ঠিক আছে দশ মিনিটের মধ্যে চলে আসছি।

রাজীবদা আমাদের পাড়ায় একটি ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকে। সে অকৃতদার মানুষ বৌ বাচ্চার ঝামেলা নেই একাই স্বাধীন জীবন যাপন করে। তার রান্নার হাত দারুণ তবে খাওয়ার থেকে বেশী তার রোমহর্ষক অদ্ভুত অলৌকিক গল্পগুলো আমাকে আকর্ষণ করে। তার জীবনে প্রচুর অলৌকিক ঘটনার অভিজ্ঞতা আছে। তার অলৌকিক গল্পগুলো আমার এতই ভাল লাগে যে  আমি তার একজন ভক্ত হয়ে গেছি।
না আর দেরি করা ঠিক হবে না বৃষ্টি টা বারছে। আমি তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে একটা ছাতা মাথার উপর ধরে রাজীবদার ফ্ল্যাটের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম।
রাজীবদার ফ্ল্যাটে পৌছাতেই খিচুড়ির সুগন্ধ আমার নাকে ধাক্কা মারল।
রাজীবদা আমাকে দেখেই বলল " খিচুড়ি তৈরি ডিম ভাজাটা হলেই আমরা খেতে বসে যাব।"
কিছুক্ষণ পর আমরা খেতে বসলাম।
খাওয়া দাওয়া শেষ করে রাজীবদা একটা সিগারেট ধরালো।

আমি: আজ এই বৃষ্টি বাদলার দিনে বেশ জমিয়ে একটা রোমহর্ষক  ভুতের গল্প বল দেখি।
তোমার সেই পিন্ডদানের গল্পটা শোনার পর আমি একা কোন নির্জন জায়গায় যেতে ভয় পাই মনে হয় যদি সিমার মত কোন প্রেতিনি হঠাৎ আমার সামনে এসে হাজির হয় তাহলে আমি হার্টফেল করবো।
রাজীবদা: আজকে যেই ঘটনার কথা তোমায় বলবো সেটা সিমার ঘটনার ঠিক পাঁচ বছর পরে আমার সাথে ঘটে।
আমি: ঠিক আছে তবে গল্প শুরু কর।
রাজীবদা: তুমি কখনো রাক্ষসের কথা শুনেছো?
আমি: হ্যাঁ ছোটবেলায় ঠাকুমা দিদিমার মুখে রাক্ষস খোক্কসের অনেক গল্প আমরা শুনতে পেতাম এখনকার বাচ্চাদের আবার সেই সৌভাগ্য হয় না এখন এইসব ইতিহাস। এখন বাচ্চাদের ভুলানোর জন্য সদা ব্যস্ত বড়রা তাদের হাতে মোবাইল ফোন তুলে দেয় এতে বাচ্চাদের যে কি মারাত্বক ক্ষতি হচ্ছে এটা কেউ বোঝে না। ছোটবেলা থেকেই বাচ্চাদের মোবাইল এডিকসন হয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া কিছু মডার্ন বাঙলী মনে করে বাচ্চাদের এইসব বাংলা  গল্প বললে স্টেটাস নষ্ট হয় তারা বাচ্চাদের বড় হলে বিলেতি সাহেব বানাতে চায়। অনেক বাঙালী ঘরের ছেলে মেয়ে বাংলা লিখতে বা পড়তে পারে না এতে তাদের বাবা মা গর্ব বোধ করে। এমন চলতে থাকলে আমাদের ঐতিহ্য আর থাকবে না সেটাও ইতিহাস হয়ে যাবে।
রাজীবদা: তুমি ত ভারি আজব আমি বলছি রাক্ষসের কথা শুনেছো কি না আর তুমি পুরো অন্য প্রসঙ্গে চলে গেলে।
আমি: ঠাকুমা দিদিমার মুখে আমি রাক্ষস খোক্কসের অনেক গল্প শুনেছি তবে সে তো রূপকথার গল্প।
রাজীবদা: শুধু রূপকথার গল্প নয়। আমাদের বহু হিন্দু পুরানে রাক্ষসদের উল্লেক্ষ আছে। মহাকাব্য রামায়ণ ও মহাভারতে অনেক রাক্ষসদের কথা উল্লেক্ষিত আছে।
রাক্ষসরা হল অন্ধকার জগতের একধরনের জীব তাদের আকৃতি মানুষের মত তবে তারা বিশাল আকারের ভয়ঙ্কর দর্শন দেখতে।
অনেক সময় নানা কারণে তারা আমাদের জগতে চলে এসে তাদের আধিপত্য বিস্তার করে তখন ঈশ্বর নিজের হাতে তাদের দমন করেন।
কিছু কিছু গভীর অরণ্যে রাক্ষসরা আজও বাস করে অরণ্যের রক্ষক হিসেবে।
আচ্ছা তোমার রামায়ণের গল্পটা জানা আছে কি?
আমি: একটু একটু মনে আছে।
রাজীবদা: রামায়ণে উল্লিখিত লঙ্কার রাক্ষস রাজা রাবনের পিতা মাতার নাম তোমার জানা আছে কি?
আমি: সেটা এখন মনে পরছে না।...