...

4 views

একমাত্র তুই।।1।।
মেয়েটির নাম তনিষ্ঠা,ডাক নাম তনি।আর ছেলেটি অম্বর সবাই ডাকে অমু বলে। মেয়েটির বয়স সাত, ছেলেটির দশ।প্রতিবেশী। দুজনের বাড়ি কাছাকাছি। দুজনের বাবারা খুব ভাল বন্ধু। তনিকে অমুর মা বাবা খুব ভালোবাসে, একই হাল তনির বাড়িতেও।
ছোটো খাটো ঝগড়া খুনশুটির মধ্যে বেড়ে উঠছে দুজনের ছোটো বেলা। বেড়ে উঠছে দুটি নিষ্পাপ মন।

এক বিকেলে...
অমু --এই তুই এখানে কি করছিস? এখানে আমরা ক্রিকেট খেলছি যা এখান থেকে।
তনি--না আজ আমরা এখানে খেলনা বাটি খেলব। তোমরা যাও।
--কি? মারব এক চাটি। যা এখান থেকে।
--না যাব না। রোজ রোজ তোমরাই কেনো খেলবে?
--তবে রে
--আমরা খেলনা ফেরত দাও বলছি। আমি কিন্তু মামনিকে বলে দেবো।
সব কিছু ছুড়ে ফেলে দিলো ।
--মামনিইইই।
দু ঘন্টা পর
অমু --এই আমার মায়ের কাছে তুই আমার নামে নালিশ করেছিস। তোর সাহস তো কম নয়।
তনি--বে বে বেশ করেছি। তুমি আমার সব খেলনা ছুড়ে ফেললে কেনো?
চুল টেনে...
অমু--বেশ করেছি।
ব্যাশ কাঁদতে শুরু করে দিলো বোকা মেয়েটা
--আ হা হা.....
--এই এই ছিচ কাঁদুনি কান্না থামা বলছি।
--আ হা হা..... (আরো জোরে)
সাত দিন পর
অমু--এই রাতুল তুই তনিকে ধাক্কা দিলি কেনো?
রাতুল --ও আমার রাস্তায় চলে এসেছিল।
--তা বলে ওকে ধাক্কা দিবি!!!
--কেনো তুই ও তো ওকে কত বকিস, মারিস....
--আমি যা ইচ্ছে তাই করি... তুই ওকে আর কখনো মারবি না... নাহলে আমি তোকে খুব মারব।


তিন বছর পর....
মেয়েটির বয়স দশ, ছেলেটির তেরো

মেয়েটির চুলে কেউ টান মেরেছে জোরে
--আহ্ অমু দা...
--একা একা কি করছিস...
--আমি out হয়ে গেছি খেলা থেকে...
--হেরু কোথাকার ... কিছুই তো পারিস না....
--একদম আমায় হেরু বলবে না....
--চুপ... একেতো খেলতে জানে না
তনি এক্কেবারে চুপ হয়ে গেলো।
অমু--আচ্ছা ছাড় চল বাবা কাল একটা নতুন ভিডিও গেম এনেছে, চল আমার সাথে খেলবি। চল...
--...
--কি হল চল
হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে গেলো অমু তনিকে।


তিন বছর পর....
তনি তখন ছাত্রী এক রাগী মাস্টারের। রাগী মাস্টারটি হ্যাঁ আর কে হবে, অমু।


নিজের ঘরে বসে কার্টুন দেখ ছিল তনি।
অমু--কি রে কাল পড়তে আসিসনি কেনো?
তনি--....
--কি হল কিছু জিজ্ঞেস করেছি...
--এমনি
--.....
রাগী চোখে তাকিয়ে আছে অমু
তনি--না মানে ওই অংক গুলো নিজে নিজেই করতে পারবো।
একই ভাবে তাকিয়ে আছে অমু।
দু জনই একই ভাবে চুপচাপ বসে আছে। হঠাৎ টিভি টা off করে দিলো অমু।
--বন্ধ করলে কেনো?
--চুপ চাপ চল নাহলে কাকিমনিকে বলে দেবো কিন্তু। আজ সারাদিন ফাঁকা আছি অংক গুলো দেখিয়ে দেবো, চল।
তনি--এখনই
করুন চোখে তাকিয়ে আছে তনি।
অমু--আচ্ছা ঠিক আছে, আজ আর বকব না, গাট্টাও মারব না, চল এবার।
--promise?
--হুমম promise চল।

মেয়েটির বয়স পনেরো , ছেলেটির আঠারো .... বাইরে থাকে এখন সে পড়াশোনার জন্য। তবে ছুটিতে বাড়ি চলে আসে। মা বলে এক দু দিনের ছুটিতে কষ্ট করে আসিস কেনো?

ছেলে মিথ্যে রাগ দেখিয়ে বলে কেনো তোমার ভাল লাগে না আমি আসলে? তাহলে আর আসব না।
মা মাথায় হাত বুলিয়ে বলে ভাল কেনো লাগবে না, তবে আমার জন্য কি আসিস, তাহলে বাড়িতে থাকিস কোথায়?
--থাকি তো তোমার কাছেই তো থাকি। দু একবার হয়তো বন্ধুদের সাথে দেখা করতে আর নাহলে তনিদের বাড়ি, সামনে ওর মাধ্যমিক তাই একটু অংক গুলো দেখিয়ে দিতে। জানই তো কি ফাঁকিবাজ?
--মোটেই না। ওই একরত্তি মেয়ে কত পড়বে? আর বাবু ওকে ওরম সবসময় বকিস না। বড় অভিমানী কোনো দিন তোর বকুনি খেয়ে সত্যি সত্যি আমার কাছে আসাও বন্ধ করে দেবে।
--তোমার কাছে আসা বন্ধ করে দেবে। না এসে ও থাকতে পারবে। তোমার আদরেই তো ওর এই হাল।
--বাজে বকিস না, যা তোর ছাত্রী অপেক্ষা করছে, তোর কাকিমনি সকালে এসেছিল ঘুমচ্ছিলি তখন তুই আজ ওখানে খেতে বলেছে।
--আচ্ছা যাচ্ছি কাকিমনি ডেকেছে বলে কথা wow কত দিন কাকিমনির হাতের খাবার খায়নি। তুমি যাবে না।
--না রে বাবার আসতে দেরি হবে তাই বলেছি আমরা যাব না তুই যা।
--বেশ আমি এলাম তাহলে।

মা বোঝে ছেলের মনের কথা। কার টানে বারে বারে আসে। কিন্তু সবে ইঞ্জিনিয়ারিং এর পড়াশোনা শুরু করেছে, যদিও পড়াশোনায় বেশ ভালো তবুও একটা চাকরি না পেলে কি করে ছেলের জন্য চাইতে যাবে তনিকে। কিন্তু মনে মনে তনিকে বেছে রেখেছে নিজের ছেলের জন্য। মেয়েটা বড্ড সরল, বড্ড নরম মনের। আর মা ভালই বোঝে ছেলের মনে কতটা জায়গা জুড়ে তার অবস্থান।
এমনি এক ছুটিতে ....
সকাল থেকে পড়ায় মন বসছে না তনির, বই নিয়েই বসে আছে, কিন্তু এক লাইন ও পড়েনি। জানে আজ  অমু দার আসার কথা। বারবার চোখ চলে যাচ্ছে দরজায়। 
হঠাৎ তার গলা। বেরোতে গিয়েও ঘর থেকে বেরল না তনি। আয়নার সামনে গিয়ে নিজেকে দেখলো ভালো করে, তারপর আবার গিয়ে বসলো পড়ার চেয়ারে।
অমু ঢুকলো তনির ঘরে।
তনি এমন ভাবে তাকাল যেনো জানতই না সে আসবে... উঠে দাঁড়াল চেয়ার থেকে...
--একি তুমি?কখন এলে।
ধীর পায়ে অমু এগিয়ে এলো ওর দিকে চোখ দেখে মনে হচ্ছে যেনো রেগে আছে কোনো কারণে।
তনি--কি হয়েছে অমু দা.....?

                                     চলবে..........


© All Rights Reserved