...

2 views

গল্প: তৃতীয় পাদের জীবন
গল্প: তৃতীয় পাদের জীবন।

আমরা প্রায়শই শুনি যে সুখ এবং দুঃখ একটি মুদ্রার দুটি দিক। নাকি এগুলো চক্র, আপনার পালার জন্য অপেক্ষা করুন। কিংবা পৃথিবীর মত হিসাব , একবার দিন একবার রাত ইত্যাদি। আজকাল এই নিয়ে এত গল্প, উদাহরণ ইত্যাদি হোয়াটস অ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম, ফেসবুক, ইউ টিউব ইত্যাদিতে সুন্দরভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। অবশ্যই এটি জীবনকে উৎসাহিত করার একটি ভাল প্রচেষ্টা। আমি তাদের নিরাশ করতে চাই না। কিন্তু আমার 60 বছরেরও বেশি জীবনে আমি এমন অনেক জীবন দেখেছি যাদের চক্রটি আবর্তিত হয়নি। অথবা কয়েন কখনই লেজ থেকে মাথার দিকে যায় নি, আমি মনে করি তাদের জীবন সর্বদা তৃতীয় পাদে থাকে।
কিছু লোক যারা প্রথম পাদের থাকে তাদের ব্যাপারে চিন্তার কিছু নেই, সবগুলোই ইতিবাচক উপাদান, ২য় পাদে ও ধনাত্মক এবং ঋণাত্মক উপাদান তাই পুনরুদ্ধারের সুযোগ রয়েছে, ৪র্থ পাদে ও উপর এবং নিচ উভয়ই রয়েছে, তাই তাদের আলোচনা করতে চাই না ।
আমি শুধুমাত্র 3য় পাদের ব্যক্তির কিছু গল্প বর্ণনা করছি যেখানে উভয় উপাদানই নেতিবাচক যার কোন ইতিবাচক সহায়তা নেই।
মোহর নামের মেয়েটির গরিব বাবা
প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়া এক দোজবরের সঙ্গে বিয়ে দিয়েছিল। ৫/৬ সন্তান জন্মের পর অতিরিক্ত মদ্য পানে গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যায় স্বামী মারা যান। এখন সংসার চালাতে বিধবার দিনরাত কঠোর পরিশ্রম, বেড়ে ওঠা কন্যাদের বিয়ে দেওয়ার যন্ত্রণা।
ছেলেরা নাবালক। যেটুকু উর্বর জমি, বিক্রি হয়ে গেল বিয়ের টাকা জোগাড় করার জন্য, এই অবস্থায় সে অসুস্থ হয়ে পড়ে ,চিকিৎসার প্রয়োজন, অর্থের কিছু অংশ নষ্ট হলেও পুরোপুরি সুস্থ হয় না, আত্মীয়স্বজনদের প্রত্যক্ষ সাহায্যে যেভাবেই হোক মেয়ের বিয়ে দেওয়ায় স্বস্তি পেয়েছে।
এখন কোন উপায় না দেখে বড় ছেলে আয়ের জন্য অনেক দূর শহরে পৌঁছয়। যাই হোক দুই তিন বছর কেটে গেল, এক জামাই মাঝে মাঝে সাহায্য করত , অন্যের সেরকম ক্ষমতা ছিল না। এ সময় মোহরের মৃত্যু হয়। এখন তিন ছেলে তাদের পায়ে দাঁড়িয়ে সামগ্রিকভাবে স্বচ্ছলতার সঙ্গেই সংসার চালাতে সক্ষম। কিন্তু তার ( মোহরের) জীবনচক্র কি উল্টোদিকে ঘোরে বা মুদ্রার লেজ ঘুরে মাথা উপর করে?
আরেকটি ছিল সুখদেবের গল্প, সম্ভবত তার বাবা অনেক উঁচু আশায় এমন নাম রেখেছিলেন।
আসলে তারা বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের ছিল, ভিক্ষাবৃত্তি ছিল পেশা। তেমন শিক্ষা নেই। একদিন সেই গ্রামের স্কুলে একজন নতুন শিক্ষক যোগদান করলেন। সুখদেব ভিক্ষার জন্য তাঁর বাড়িতে গিয়েছিলেন, শিক্ষক অবাক হয়েছিলেন, কথোপকথন শুরু করেছিলেন, বিস্তারিত নিলেন।
তিনি তার ছোট পৈতৃক কাঁচা বাড়িতে কাজ করার জন্য একটি হাত চালিত তাঁতের ব্যবস্থা করেন। কিন্তু সে জুয়া আর গাঁজায় আসক্ত ছিল যা সে মহৎ শিক্ষককে জানায়নি। তাই অন্যদের যেখানে একটা শাড়ী তৈরী করতে 3দিন সময় লাগে তার 7/ 8 দিন লেগে যেত।
তাই নিশ্চিতভাবে অবস্থা খারাপের দিকে। এ সময় তার যা আয় হয় তাও একমাত্র ছেলে 'দেবেন' ব্ল্যাকমেইল করে হাতিয়ে নেয় । তার এক মেয়ের বিয়ে দরকার দেখতে সুন্দর ছিল। তার ছেলের এক বন্ধু 'লালু' দুবাই থেকে এসে তার বন্ধুকে তাদের মোটা আয়ের জন্য দুবাই নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করার আশ্বাস দিয়ে বিয়ে করার আগ্রহ দেখায়। তারা তাঁত সহ তাদের কাছে যা কিছু সম্পদ ছিল তা বিক্রি করে কন্যাকে রাজি করিয়ে বিয়ে দিয়ে দেন।
ভাবনাখানা- ভিক্ষার ঝুলি তো আছেই, যা তাদের সম্প্রদায়ের অধিকার । শিক্ষক তখন দীর্ঘ গ্রীষ্মের ছুটিতে নিজের গ্ৰামে গিয়েছিলেন তাই অজান্তেই রইলেন।
প্রায় ছয় মাস পার হয়ে গেছে, জামাই বউকে ঘরে রেখে দুবাই চলে গেছে এই আশ্বাস দিয়ে যে সে দেবেনকে শীঘ্রই দুবাই ডেকে নেবে।
বছর খানেক পর লালুর বাবা কাঁদতে কাঁদতে
এসে সুখদেবকে অনুরোধ করলেন মেয়েকে বাড়িতে ফিরিয়ে নিতে কারণ লালু আর নেই সেখানের দুর্ঘটনায় মারা পড়েছে। যে এজেন্সিটি সেখানে নিয়ে গিয়েছিল তারা মৃতদেহ পাঠাতেও সাহায্য করেনি এবং সেখানেই কবর দেয় ।
এখন সুখদেব ও পরিবার সম্পূর্ণভাবে বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। কন্যা একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেয়।
শিক্ষক একবার সুখদেবের বাড়িতে যান কিন্তু সুখদেব তার ছোট মেয়ের মাধ্যমে মিথ্যা কথা বলে সাক্ষাৎ এড়িয়ে যান লজ্জায়।
এখন সুখদেব খুব অসুস্থ, ভিক্ষা করার ক্ষমতাও নেই। ছেলে তাদের গ্রামের এক মেয়েকে বিয়ে করেছে তাই কোনভাবে দিনমজুর হয়ে সংসার চালায়। এই পরিস্থিতি সুখদেবের স্ত্রীকে ভিক্ষা করতে বাধ্য করে। দেড় বছর পার হয়ে গেল, শিক্ষক জানতে পারলেন সুখদেব জুয়ায় আসক্ত তাই তার সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হন না । এক সন্ধ্যায় সুখদেব শিক্ষকের কাছে পৌঁছে সব বলল, শিক্ষক তাকে চিকিৎসার জন্য 200 টাকা দিয়েছিলেন এবং জানিয়েছিলেন যে তিনি সম্ভবত আগামী সপ্তাহে এই স্কুলটি ছেড়ে দেবেন কেননা বদলির আদেশ হয়েছে। সুখদেব আর বাঁচলেন না, এক মাসের মধ্যেই সব ছেড়ে দিলেন।
যদিও লালুর মৃত্যু ছিল তার বাবার মিথ্যা কৌশল যা ছিল অন্য গল্প।
পরে লালু তার স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে গিয়েছিলেন, শ্বশুর বাড়িতে অনেক সাহায্য করেছিলেন।
কিন্তু সুখদেব মুদ্রার মাথাটি দেখতে পাননি কারণ তিনি তৃতীয় পাদের লোক ছিলেন।।

**KRN**
20.05.2024.T (মূল ইংরাজী)
Writco: 23.05.2024