...

2 views

কল্পনা


বাজ পড়ার শব্দটা কান কে ছুয়ে গেল। চিঠিটা হাতে নিয়ে জানলার দিকে তাকাল। অঝোর ধারায় বৃষ্টি পড়ছে যেন এক অজানা অনুভূতিকে আমন্ত্রণ করছে। উঠে গিয়ে জানালা বন্ধ করল শতরূপা। ঘরের ভিতরে থেকেও মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল। কিছু না বলা কথা মনে পড়ে গেল।



সঞ্জয়কে সেদিন প্রথম দেখেছিল হালকা শ্যমলা রঙ,সুপুরুষ চেহারা, সাদা রঙের শার্ট আর কালো প্যান্ট । “মে আই কাম ইন স্যার?”, দরজার সামনে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করেছিল। সঞ্জয় হয়তো ওকে দেখে অতটা মুগ্ধ হয়ে নি। তারপর রোজ এক সাথে কাজ করতে করতে কখন যে কাছে এসে গেছিল বুঝতেই পারে নি।



বেল এর শব্দে সম্বিত ফিরে পেল শতরূপা। সে এসেছে আজও ! ওর জন্যেই এসেছে। এত বৃষ্টি, ঝড় কোনো বাঁধাই যেন ওকে আটকাতে পারবে না । আজ শেষ দিন, কাল শুধু মুক্তি! মুক্তি! কোন দিকে না তাকিয়ে দরজার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে সে, যেন এক অজানা ডাক তাকে নিজের দিকে টানছে ।



“ রূপা! রূপা! আর আর দেরি করো না! না! না! এসো.. তাড়াতাড়ি এসো! “



দরজাটা যেন শুধু খুলে যাওয়ার অপেক্ষায় বসে ছিল। শতরূপাকে সে নিতে এসেছে। সঞ্জয়কে ভালোবেসে সুখী হয়নি রূপা। সব সময় ঝগড়া, সাংসারিক কলহ শুনে শুনে আর ভাল লাগে না। আজকাল ওর সাথে দেখাও হয় না। মেয়েটা চলে যাওয়ার পর থেকে সব কেমন বদলে গেল।



“চল ..”,দরজা খুলতে গিয়ে হঠাৎ মাথায় জোরে আঘাত, আর কিছুই দেখতে পেল না রূপা। শুধু রক্তে ভেসে গেল বাড়ির বাইরের মেঝে।



“রূপা! রূপা!”, চোখের জলে ফেটে পড়ল সঞ্জয়। কি ভুল সে করেছে এখন বুঝতে পারছে।



“ আই অ্যাম সরি মিঃ বোস… আপনার স্ত্রীকে আমরা বাঁচাতে পারলাম না”, ডক্টর সুনীল পাকড়াসি এই কথাটা বলে চলে গেলেন। সঞ্জয় হতবম্ভের মতন শুধু তাকিয়েছিল। কোনদিন বুঝতে পারেনি যে রুপাকে সে এতটাই ভালোবাসত। রূপা আজ আর নেই এটা ভেবে শুধু মনে হচ্ছে রুপাকে সেই খুন করেছে। নিজে হাতে খুন! খুন!



সব কথা মনে পড়ে গেল, রূপার সাথে আলাপ হওয়ার পর থেকে জীবনটা কেমন যেন বদলে গেল। শতরূপা সব রূপ সে দেখেছে, কি সুন্দর দুর্গা প্রতিমার মতন গড়ন, সুশ্রী, সৌম্য নম্র ভদ্র মেয়ে। বিয়ের পর প্রথম প্রথম কাজে মন বস্ত না । দুজনেই এক সাথে অনেক রহস্য সমাধান করেছে ।



শতরূপা সিকদার একজন প্রাইভেট ডিটেকটিভ। অনেকদিন ধরেই পুলিশের সাথে কাজ করেছিল। ওই ভাবেই আলাপ হয়ে অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনের পুলিশ সঞ্জয় বসুর সাথে। কত কথা, কত গল্প, প্রায় পাঁচ বছরের সম্পর্কের পর বিয়েতে মত দিয়েছিল সঞ্জয়।



শতরূপা সব সময় এটাই ভাবত যে এক তরফা ভালোবেসেছে। সঞ্জয় বসুর কঠিন মনের ভিতর ঢুকতে অনেক কষ্ট করতে হয়েছিল। তবে একটা কথা সে কখনই ভাবেনি। সব সময় তাকে ছোট শিশুর মতন আগলে রেখেছিল সে। রূপা কোন মিশন এ গেলে সব সময় আড়ালে...