প্রেম কি এরকমই হয় ? Part-1/ কলমে কুণাল
- এক্সকিউস মি ম্যাম ! ... রূপেশ মুখার্জি কী এই ব্র্যাঞ্চেরই ব্র্যাঞ্চম্যানেজার?
- হ্যাঁ ছিলেন....! কিন্তু উনিতো রিটায়ার করেছেন প্রায় চার মাস আগে, একত্রিশে জানুয়ারি ২০১৬ তে। আর তাছাড়া .....
- ম্যাম ! আমি জলপাইগুড়ি থেকে আসছি। ওনার ঠিকানাটা পাওয়া যাবে, প্লিজ?
- স্যরি ! আমরা ডাটাবেস থেকে অচেনা কাউকে এরকম ঠিকানা দিতে পারি না !
- "আমি প্রলয় চ্যাটার্জি ! ওনার মেয়ে হিয়ার বন্ধু ! আমরা এক সঙ্গে জলপাইগুড়িতে পড়তাম। গত এক মাস হিয়ার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই আমার ! ...মানে ওকে ফোন, ...ফেসবুক, ...হোয়াটস্যাপে... কোত্থাও পাচ্ছি না ! আমি মানে .. আমরা একে অপরকে ভালোবাসি ম্যাম ! আমি ওকে পাগলের মতো খুঁজছি ! ...প্লিজ ম্যাম ! ... যদি দয়া করে আমাকে একটু সাহায্য করেন !"-বলতে বলতেই গলাটা কেঁপে গেলো প্রলয়ের, ছল ছল করে উঠলো চোখ দুটো। প্রলয়ের মুখের এই করুণ অভিব্যক্তি দেখেই বোধহয় এক্সিস ব্যাংক, ভবানীপুর ব্র্যাঞ্চের হেল্পডেস্ক এক্সিকিউটিভ যুবতীটির হৃদয়ে কিঞ্চিৎ দয়া উৎপন্ন হলো।
-"লিখে নিন ! .... এ.কে-৩০৫, সেক্টর-টু, সল্ট লেক সিটি, কলকাতা-৭০০০৯১. ! .... কিন্তু ওখানে গিয়ে তো.........."
-"আপনাকে অজস্র ধন্যবাদ ম্যাম......!" - কথা শেষ হওয়ার আগেই, পরম কৃতজ্ঞতার সঙ্গে উত্তর দিয়েই, দৌড়ে বেরিয়ে গেলো প্রলয়।
বেরিয়েই একটা ট্যাক্সি নিলো সে সল্টলেকের উদ্দেশ্যে। ট্যাক্সি ছুঁটে চললো ব্যস্ত কলকাতার যানজটের ঢেউ ভেঙে। পকেট থেকে একটা রুমাল বের করে, কপালে জমে থাকা বিন্দু বিন্দু ঘাম মুছতে মুছতেই প্রলয়ের চোখ পড়লো তার মোবাইল ফোনটার দিকে। মোবাইলের ওয়ালপেপারে ওর আর হিয়ার ছবিটার দিকে তাকিয়ে, একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে, নিজের মনেই বলে উঠলো - "হিয়া ! তুই কোথায় ....?... কোথায় হারিয়ে গেলি ....?"
চোখের পাতা জোড়া যেন আর পারছে না উপ়্চে আসা জলকে আটকে রাখতে। হৃৎপিন্ডটা স্বস্থান ছেড়ে লাফিয়ে গলার কাছে উঠে এসে যেন শ্বাস রোধ করে ফেলছে তার। সাত-পাঁচ চিন্তা মাথায় ছোবল বসাচ্ছে অনবরত !
- "এ হলো হিয়া মুখার্জি ! আজ থেকে তোদের ব্যাচেই পড়বে. ... আর প্রলয় ! তুই হিয়াকে সব নোটস গুলো দিয়ে একটু আপডেট করে দিবি, ও-তো দু-মাস পরে ভর্তি হয়েছে ?... হিয়া তুমি প্রলয়ের পাশে গিয়ে বসো। প্রলয় জলপাইগুড়ি জেলা স্কুলের টপার !" - রাহুল স্যার আলাপ করলেন, ফিজিক্সের কোচিং ক্লাসে। সেদিন প্রলয় বাধ্য ছেলের মতোই ঘাড় নেড়ে, একটু সরে বসে, হিয়াকে বসার জায়গা করে দিয়েছিলো তার বেঞ্চে।
জলপাইগুড়িতে উকিল পাড়ার এই জ্ঞানপীঠ কোচিং সেন্টার খুব বিখ্যাত। বহু কৃতী ছাত্র ছাত্রী এখন থেকে পড়ে, খুব ভালো রেজাল্ট করেছে উচ্যমাধ্যমিকে। প্রলয় মাধ্যমিকে অত্যন্ত ভালো নম্বর পেয়ে, জেলা হাই-স্কুলেই এগারো ক্লাসে ভর্তি হয়েছে। সৌম্য স্বভাবের এই সুদর্শন তরুণটিকে তার স্কুলে, এমনকি কোচিংক্লাসেও সমস্ত শিক্ষকেরা অত্যন্ত স্নেহ করে, তার মেধা এবং সুমিষ্ট ব্যবহারের জন্য। বাবা জলপাইগুরির আনন্দ চন্দ্র কলেজের অংকের অধ্যাপক। প্রলয় তার বাবা-মায়ের এক মাত্র সন্তান। তাকে নিয়ে তার মা-বাবার অনেক স্বপ্ন।
- "তোর খাতাটা একটু দেখাবি ? .... এই ছেলে তোকে বলছি ! .... ওফফ... কালা নাকি ?... কি ছেলে-রে বাবা ... ড্যাব ড্যাব করে কেমন তাকিয়ে আছে দ্যাখো !" - প্রবল অস্বস্তি নিয়ে, চাপা গলায় স্বগতোক্তি করলো হিয়া ! একাগ্র চিত্তে রাহুল স্যার ফোর্স চ্যাপ্টারটা পড়িয়ে চলেছেন ... ব্ল্যাক বোর্ডে লিখছেন 'ওয়ার্কডান = ফোর্স X ডিস্প্লেস্মেন্ট' ! প্রলয়ের দৃষ্টি তখন আটকে আছে সেই বিদ্যুৎ-চঞ্চলা, মৃগনয়নীর দিকে। অতঃপর হিয়ার পেন্সিলের খোঁচায় বাস্তবে পা রাখলো সে।
-"খাতাটা একটু দ্যাখা না ! .... আমি আসার আগে স্যার কী কী লেখালেন একটু দ্যাখাবি?" - মুখে বিরক্তি এঁকে, চাপা স্বরেই বললো হিয়া !
- "হ্যাঁ..? ... হ্যাঁ ! হ্যাঁ ! ... এই নে না !.... এটা লিখিয়েছেন !" - চমকে বলে উঠলো প্রলয় ! সলজ্জ সতর্কতায় এগিয়ে দিলো নিজের নোটের খাতাটা। এরপর সারাটাক্ষণ ক্লাসে লজ্জায় আর হিয়ার দিকে সোজাসুজি তাকাতে পারেনি সে। প্রলয় অত্যন্ত মনোযোগী ছাত্র ! কিন্তু, এই প্রথম হিয়াকে দেখে কি যে হলো ওর ... যেন অজস্র প্রজাপতি পাখায় সোনালী রোদ্দুর মেখে চোখের সামনে উড়ে বেড়াচ্ছিল ! ওর আঁড় চোখে অপরাধীর মতো তাকানো দেখে হিয়ার অবশ্য খুব হাসি পাচ্ছিলো। তবে প্রলয়ের এই সারল্যটা বেশ মনে ধরেছিলো হিয়ার !
কোচিং থেকে বেরিয়ে, মনে সাহস জুটিয়ে, প্রলয় হিয়াকে বললো - "হাই! আমি প্রলয় ! ..... প্রলয় চ্যাটার্জি ...!"
চঞ্চলা তন্বী হিয়াও মুখে একখানি মিষ্টি হাসি টেনেই, তার কোমল হাতখানি বাড়িয়ে দিয়েছিলো প্রলয়ের দিকে। ...
- হ্যাঁ ছিলেন....! কিন্তু উনিতো রিটায়ার করেছেন প্রায় চার মাস আগে, একত্রিশে জানুয়ারি ২০১৬ তে। আর তাছাড়া .....
- ম্যাম ! আমি জলপাইগুড়ি থেকে আসছি। ওনার ঠিকানাটা পাওয়া যাবে, প্লিজ?
- স্যরি ! আমরা ডাটাবেস থেকে অচেনা কাউকে এরকম ঠিকানা দিতে পারি না !
- "আমি প্রলয় চ্যাটার্জি ! ওনার মেয়ে হিয়ার বন্ধু ! আমরা এক সঙ্গে জলপাইগুড়িতে পড়তাম। গত এক মাস হিয়ার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই আমার ! ...মানে ওকে ফোন, ...ফেসবুক, ...হোয়াটস্যাপে... কোত্থাও পাচ্ছি না ! আমি মানে .. আমরা একে অপরকে ভালোবাসি ম্যাম ! আমি ওকে পাগলের মতো খুঁজছি ! ...প্লিজ ম্যাম ! ... যদি দয়া করে আমাকে একটু সাহায্য করেন !"-বলতে বলতেই গলাটা কেঁপে গেলো প্রলয়ের, ছল ছল করে উঠলো চোখ দুটো। প্রলয়ের মুখের এই করুণ অভিব্যক্তি দেখেই বোধহয় এক্সিস ব্যাংক, ভবানীপুর ব্র্যাঞ্চের হেল্পডেস্ক এক্সিকিউটিভ যুবতীটির হৃদয়ে কিঞ্চিৎ দয়া উৎপন্ন হলো।
-"লিখে নিন ! .... এ.কে-৩০৫, সেক্টর-টু, সল্ট লেক সিটি, কলকাতা-৭০০০৯১. ! .... কিন্তু ওখানে গিয়ে তো.........."
-"আপনাকে অজস্র ধন্যবাদ ম্যাম......!" - কথা শেষ হওয়ার আগেই, পরম কৃতজ্ঞতার সঙ্গে উত্তর দিয়েই, দৌড়ে বেরিয়ে গেলো প্রলয়।
বেরিয়েই একটা ট্যাক্সি নিলো সে সল্টলেকের উদ্দেশ্যে। ট্যাক্সি ছুঁটে চললো ব্যস্ত কলকাতার যানজটের ঢেউ ভেঙে। পকেট থেকে একটা রুমাল বের করে, কপালে জমে থাকা বিন্দু বিন্দু ঘাম মুছতে মুছতেই প্রলয়ের চোখ পড়লো তার মোবাইল ফোনটার দিকে। মোবাইলের ওয়ালপেপারে ওর আর হিয়ার ছবিটার দিকে তাকিয়ে, একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে, নিজের মনেই বলে উঠলো - "হিয়া ! তুই কোথায় ....?... কোথায় হারিয়ে গেলি ....?"
চোখের পাতা জোড়া যেন আর পারছে না উপ়্চে আসা জলকে আটকে রাখতে। হৃৎপিন্ডটা স্বস্থান ছেড়ে লাফিয়ে গলার কাছে উঠে এসে যেন শ্বাস রোধ করে ফেলছে তার। সাত-পাঁচ চিন্তা মাথায় ছোবল বসাচ্ছে অনবরত !
- "এ হলো হিয়া মুখার্জি ! আজ থেকে তোদের ব্যাচেই পড়বে. ... আর প্রলয় ! তুই হিয়াকে সব নোটস গুলো দিয়ে একটু আপডেট করে দিবি, ও-তো দু-মাস পরে ভর্তি হয়েছে ?... হিয়া তুমি প্রলয়ের পাশে গিয়ে বসো। প্রলয় জলপাইগুড়ি জেলা স্কুলের টপার !" - রাহুল স্যার আলাপ করলেন, ফিজিক্সের কোচিং ক্লাসে। সেদিন প্রলয় বাধ্য ছেলের মতোই ঘাড় নেড়ে, একটু সরে বসে, হিয়াকে বসার জায়গা করে দিয়েছিলো তার বেঞ্চে।
জলপাইগুড়িতে উকিল পাড়ার এই জ্ঞানপীঠ কোচিং সেন্টার খুব বিখ্যাত। বহু কৃতী ছাত্র ছাত্রী এখন থেকে পড়ে, খুব ভালো রেজাল্ট করেছে উচ্যমাধ্যমিকে। প্রলয় মাধ্যমিকে অত্যন্ত ভালো নম্বর পেয়ে, জেলা হাই-স্কুলেই এগারো ক্লাসে ভর্তি হয়েছে। সৌম্য স্বভাবের এই সুদর্শন তরুণটিকে তার স্কুলে, এমনকি কোচিংক্লাসেও সমস্ত শিক্ষকেরা অত্যন্ত স্নেহ করে, তার মেধা এবং সুমিষ্ট ব্যবহারের জন্য। বাবা জলপাইগুরির আনন্দ চন্দ্র কলেজের অংকের অধ্যাপক। প্রলয় তার বাবা-মায়ের এক মাত্র সন্তান। তাকে নিয়ে তার মা-বাবার অনেক স্বপ্ন।
- "তোর খাতাটা একটু দেখাবি ? .... এই ছেলে তোকে বলছি ! .... ওফফ... কালা নাকি ?... কি ছেলে-রে বাবা ... ড্যাব ড্যাব করে কেমন তাকিয়ে আছে দ্যাখো !" - প্রবল অস্বস্তি নিয়ে, চাপা গলায় স্বগতোক্তি করলো হিয়া ! একাগ্র চিত্তে রাহুল স্যার ফোর্স চ্যাপ্টারটা পড়িয়ে চলেছেন ... ব্ল্যাক বোর্ডে লিখছেন 'ওয়ার্কডান = ফোর্স X ডিস্প্লেস্মেন্ট' ! প্রলয়ের দৃষ্টি তখন আটকে আছে সেই বিদ্যুৎ-চঞ্চলা, মৃগনয়নীর দিকে। অতঃপর হিয়ার পেন্সিলের খোঁচায় বাস্তবে পা রাখলো সে।
-"খাতাটা একটু দ্যাখা না ! .... আমি আসার আগে স্যার কী কী লেখালেন একটু দ্যাখাবি?" - মুখে বিরক্তি এঁকে, চাপা স্বরেই বললো হিয়া !
- "হ্যাঁ..? ... হ্যাঁ ! হ্যাঁ ! ... এই নে না !.... এটা লিখিয়েছেন !" - চমকে বলে উঠলো প্রলয় ! সলজ্জ সতর্কতায় এগিয়ে দিলো নিজের নোটের খাতাটা। এরপর সারাটাক্ষণ ক্লাসে লজ্জায় আর হিয়ার দিকে সোজাসুজি তাকাতে পারেনি সে। প্রলয় অত্যন্ত মনোযোগী ছাত্র ! কিন্তু, এই প্রথম হিয়াকে দেখে কি যে হলো ওর ... যেন অজস্র প্রজাপতি পাখায় সোনালী রোদ্দুর মেখে চোখের সামনে উড়ে বেড়াচ্ছিল ! ওর আঁড় চোখে অপরাধীর মতো তাকানো দেখে হিয়ার অবশ্য খুব হাসি পাচ্ছিলো। তবে প্রলয়ের এই সারল্যটা বেশ মনে ধরেছিলো হিয়ার !
কোচিং থেকে বেরিয়ে, মনে সাহস জুটিয়ে, প্রলয় হিয়াকে বললো - "হাই! আমি প্রলয় ! ..... প্রলয় চ্যাটার্জি ...!"
চঞ্চলা তন্বী হিয়াও মুখে একখানি মিষ্টি হাসি টেনেই, তার কোমল হাতখানি বাড়িয়ে দিয়েছিলো প্রলয়ের দিকে। ...