...

2 views

শ্যামলা মেয়ের হাসি
শ্যামলা মেয়ে  নাম শুনলেই গ্রামের কোন পথে কলসি কাঁখে করে চলে যাওয়া মেয়ের কথা মনে পরে। আসলে শ্যামলা মানে ঠিক কালো নয়, মাঝারি সুন্দর। আমার জীবনের শ্যামলা মেয়ে  কিন্তু শহরের। শহরের মেয়ে মানে রূপচর্চা করে ঘোসে মেজে সুন্দরী হয়ে যায়। কিন্তু দুঃখের বিষয় দিপার মা মেয়ে মরা যাওয়ার পর রূপচর্চার সুযোগ থাকলো না বা উৎসাহ দেবার লোক থাকলো না।
তবে জীবনে সফলতা অর্জন করায়। গায়ের রঙ নিয়ে আফশোস করা সুযোগ হয়নি। পেশায় শিক্ষিকা হবার জন্য একটু রাগ ভারি। ফলে বিয়ের কথা বলার সাহস তার।
আমার মাসতুতো বোন ওর ছোট ভাইয়ের বউ হবার সুবাদে , উনাদের বাড়ির ছোট খাটো ব্যপারে গিয়ে আজকাল নাক গলাছে। তাই হঠাৎই দীপার বিবাহ নিয়েও মাথা ঘামাতে শুরু করলো।
কালো মেয়েকে নিয়ে কবিতা গল্প উপন্যাস লিখতে পারা যায় কিন্তু স্ত্রী হিসেবে মেনে নেওয়া বোধহয় একটা সুপুরুষ কাছে কঠিন কাজ। মা সেই দিন তাই দীপাকে মাতৃ স্নেহের সাথে কাছে দেখলাম , সুন্দর করে চুল বাঁধা শিখিয়ে দিলেন। এবং উপদেশ দিলেন একটু সাজতে, মানে রূপচর্চা করতে। সাথে  জানিয়ে দিলেন তাঁর জন্য পাত্র দেখা শুরু করেছি আমরা।
উনি বললেন "মেয়েরা মানুষ হয় না, এরা মেয়েই হয়। মানুষ তো পুরুষ! সে যাই হোক, আমি ওসব বিশ্লেষণ বাদ দিয়ে দিয়েছিলাম। শুধু খারাপ লাগে ওদের জন্যে রংচঙ মেখে নিজেকে জোকার বানাতে! দেখতে আসবে শুনে শাড়ি পরতে হয়, পাউডার মেখে ফর্সা হউয়ার চেষ্টা করতে হয়, উঁচু স্যান্ডেল পরে নিজেকে লম্বা দেখাতে হয়! ঠিক এগুলো আমার ভালো লাগে না। বিশ্বাস করুন পথ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় আমার দিকে কোন পুরুষ  উদাস চোখে তাকিয়ে থাকে না বলে আমার কোন দুঃখ নেই।"
বাড়িতে ফিরে এসে ।আর কথা না বাড়িয়ে আমি হংলার মতো মাকে বললাম আমি ওকে বিয়ে করতে চাই। ওর মতামতের অপেক্ষায় না থেকে মা দেখি বিবাহের মার্কেটিং শুরু করলো। বিয়ে ঠিক হয়ে গেলো। আমি কিছুতেই মানতে পারলাম মনের কথা বলার সুযোগ পেলাম না। একবার অন্তত বারান্দায়  কথা বলার সুযোগ পেলাম না। আসলে দেখে শুনে বিয়েতে আপত্তি নেই। কিন্তু আমি যে ওকে ভালবাসি সে কথাটুকুতো জানতেই হবে।

আমাদের বিয়ে ঠিক হয়ে যাওয়ায়।বিয়ের সামগ্রী  আমি দেখি সবকিছু মোটামুটি ভাবে মার্কেটিং ব্যাপারে নাকও গলা ছিলাম।  একজোড়া নিচু স্যান্ডেল কিনেছিলাম আমি উনার জন্য ।সাথে চিরকুট  সেখানে গোটা অক্ষরে লিখে দিলাম “জুতার দোকানে,উঁচু স্যান্ডেল পরে আপনার হাটতে কষ্ট হয় দেখেছিলাম। আর কষ্ট করে হাটতে হবেনা। আমার বউ আমার পাশে আনন্দের সাথে হাটবে, কষ্ট নিয়ে না!”
পরেরদিন বিকালে হঠাৎ উনি দেখি আমার বাড়িতে হাজির। আমি বেশ ভয়ে ভয়ে আছি। চিরকুট পেয়ে বোধহয় আমার সাথে বিবাহ ভেঙে দেবেন উনি। উনি মায়ের কাছে আমার সাথে একা কথা বলার অনুমতি চাইতে, হৃদপিন্ডের স্পন্দন টা আরো বেড়ে গেলো।
উনি বললেন " একটা প্রশ্ন আমার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। উচ্চু স্যান্ডেলটা আমি কিনেছিলাম আমাদের বিয়ের দিনে পড়ার জন্য। আচ্ছা আমার আসলে প্রেমের অভিজ্ঞতা নেই তাই একটা প্রশ্ন ছিলো। লিপ কিস মানে ঠোঁট চুমু খেতে আপনা অসুবিধা হবে না তো আমি বেঁটে বলে।"
আমি বললাম " এখন তাহলে ট্রায়াল নিয়ে নিই, প্রয়োজনে একটা টুল কিনে নেবো,,"
উনি মিষ্টি একটা হাসি হাঁসলো।শ্যামলা মেয়ের হাসিও কিন্তু কবিতার মতো সুন্দর হয়‌।

,,


© Manab Mondal