...

14 views

জনমানবহীন জীবন্তপুর
গ্রামটার নাম জীবন্তপুর। অন্যতম পুরাতন গ্রামের মধ্যে একটি। নদীর ধারে অবস্থিত গ্রামটিতে একটা রেলস্টেশন ছাড়াও দুটো ঘাট ছিল, একটিতে পণ্যদ্রব্য ইত্যাদি আমদানি রপ্তানি হতো অন্যটিতে মানুষজন যাতায়াত করত। সড়কপথ একটা ছিল যেটা রেলপথ ছাড়া শহরের সঙ্গে গ্রামটির যোগাযোগের অন্যতম রাস্তা তবে তা ছিল কাঁচা।

হাজার তিনেক মতো বসবাস করত গ্রামটিতে। একটা শ্মশান যাতে দুটি বৈদ্যুতিক চুল্লি সরকারের তরফ থেকে তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। মৃত মানুষকে চুল্লিতে পোড়াতে খরচ একটু হত। গ্রামে যাদের আত্মীয় পরিজন আছে তাদের তেমন অসুবিধা হতো না কিন্তু অসুবিধা তখন হতো যখন কোন পাগল, ভিখারি বা স্বজনহারা কেউ মরতে কারণ তাদের জন্য টাকা কে দেবে? 

একবার গ্রামে ভয়াবহ মহামারি দেখা দিল। প্রচুর লোক মরতে থাকায় চুল্লি পাওয়া মুশকিল হয়ে গেল। একদিকে মৃতদেহ না পড়লে পচন ধরবে। তাই কর্তৃপক্ষ ঠিক করল একটা চুল্লি ব্যবহার করা হবে সেইসব মৃতদেহের জন্য যারা অর্থ দিয়ে পোড়াবে এবং অন্যটি ব্যবহার হবে তাদের জন্য যাদের কেউ নেই অর্থাৎ বিনা পয়সায় যাদের পোড়াতে হবে এবং এটাও ঠিক করা হল যে যেহেতু তাদের পোড়াতেই হবে তাই একসঙ্গে তিনজন করে পোড়ানো হবে তাহলে মৃতদেহের পরিমাণ দ্রুত কমবে এই আর কি - 

যথারীতি তিনটে মৃতদেহ ঢোকানো হলো। তাদের মধ্যে একজন গ্রামের মাস্টার, বিয়ে করেনি। বাবা মা মরে যাওয়ার পর একাই ছিল। আর একজন পার মাতাল নান্টু, শহরের বিশাল কারখানায় চাকরি করতো কারখানা উঠে যাওয়ায় জমানো টাকা নিয়ে গ্রামে ফিরে এসেছিল। তবে সেই টাকায় কতদিন আর চলে, টাকার পরিমাণ ক্রমশ শেষ হয়ে যাচ্ছে দেখে চিন্তায় নেশা শুরু করে এবং টাকা পয়সা শেষ করে না খেতে পেয়ে মরলো। বয়স কতই বা হবে পঞ্চাশ পঞ্চান্ন। আরেকজন যে ছিল সে ছিল পাগল, পড়াশোনায় খুব ভালো ছিল কিন্তু আশানুরূপ চাকরি না পাওয়ার হতাশায় চলে গেছিল এবং ধীরে ধীরে পাগল।

চুল্লিতে তিনটি মৃতদেহ ঢুকলো। মাস্টার, নান্টু ও পাগল ছেলেটির। হয়ত মহামারী না হলে এদের কাউকেই মরতে হতো না। যাক পোড়ানো পর্ব শেষ হলো অন্য মৃতদেহ ঢুকতে শুরু করল।

কিছুদিন পর মহামারীর প্রকোপ থেকে যারা বেঁচে গেছিল তাদের জীবনযাত্রা পুনরায় চলছে। গ্রামের লোক ভূত বিশ্বাস করে। একদিন তিন-চারজন গ্রামের পাঠশালার পাশ দিয়ে যাচ্ছিল দেখল মাস্টারমশাই চেয়ারটাতে বসে আছে।

অনেকে আবার নান্টু মদ খেয়ে রাতে যে রাস্তা দিয়ে চিৎকার সুরে গান করতে করতে ঘরে ফিরত, সেই রাস্তায় রাত হলেই গান শুনতে পাচ্ছে।

কেউ কেউ দেখছে পাগল ছেলেটি ছুটে চলে যাচ্ছে। এইসব ঘটনায় গ্রামের লোকেরা ভয় পেয়ে গেল। ভাবলো যেহেতু এই তিনজনকে একসঙ্গে পুরানো হয়েছে তাই তাদের আত্মারা শান্তি পায়নি। আর তাই এসব ঘটনা ঘটছে। মহামারীতে প্রচুর লোক মারা গেছিলো। বেঁচে ছিল যারা, ওরা গ্রাম ছেড়ে চলে গেল অন্য জায়গায়। সেই থেকে জীবন্তপুর গ্রাম জনমানব শূন্য হয়ে আছে।

- সপ্তদীপ সাহা।

Photo taken from Google.
© Saptadip Saha