উল্টো স্রোত
আজকের কথা ...
“কোথায় বেরোচ্ছ জানতে পারি কি?”
“না পারোনা।”
“রণ আয়াম ইওর ওয়াইফ।”
“সো? এই শোনো প্লিজ এই সব বাংলা সিরিয়ালের ন্যাকা বউগুলোর মত শুরু কোরো না।”
“রণ আয়াম প্রেগন্যান্ট। এই সময় তোমাকে আমার সব থেকে বেশি দরকার আর তুমি!”
“হেই সবসময় গ্যাজগ্যাজ কোরো না তো। বাই।”
“রণ… লিশন… কোথায় যাচ্ছ তুমি? রণ…”
মুখের ওপর দড়াম করে দরজাটা ঠেলে বেরিয়ে যায় রণ, দরজার এপারে বসে কান্নায় ভেঙে পড়ে ঈশানি। সে ভাবতেও পারেনা যে রণর জন্য সে একদিন তার সব কিছু ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিল আজ সেই রণরই এ কি রূপ! এখন কোথায় যাবে ঈশানি! কি করবে সে! গা’টা গোলাতে শুরু করেছে, বাথরুমে যাওয়ার আগেই হড়হড় করে বমি হয়ে যায় মেঝেতে। জোরে জোরে শ্বাস নিতে নিতে নিজের পেটের ওপর হাত রাখে ঈশানি; ডাক্তার বলেছিল প্রথম তিন মাস খুব ভাইটাল। এই তিন মাস খুব সাবধানে থাকতে, কোনোরকম শারীরিক বা মানসিক চাপ না নিতে কিন্তু ঈশানির ভাগ্যে কি আর তা আছে! মানসিক চাপের কথা তো না বলাই ভালো আর শারীরিক চাপ… রণর জন্য কোনো কাজের মেয়ে রাখতেও সাহস হয়না তাই এই অবস্থাতেও বাড়ির সব কাজ ঈশানিকে নিজেকেই করতে হয়।
“পায়েলটা কে রণ?” রাত দশটার সময় রণ বাড়ি ঢুকতেই হিসহিসিয়ে জিজ্ঞেস করলো ঈশানি।
“হোয়াট? তুমি পায়েলকে কি করে চিনলে?”
“ইট ডাজ নট ম্যাটার রণ, তুমি শুধু বলো পায়েল কে?”
“আমার গার্লফ্রেন্ড… আর কিছু?”
“রণ...! লজ্জা করলো না তোমার এরকম একটা কথা মুখ ফুটে বলতে?”
“লজ্জা! তোমার কাছে? তোমার কাছে আবার কিসের লজ্জা?”
“আয়াম ইওর ওয়াইফ…”
“এই থামো তো, ওয়াইফ ওয়াইফ কোরো না তো সবসময়। স্লা এঁটো মাল, দয়া করে থাকতে দিচ্ছি এই ঢের। বেশি প্যানপ্যান করলে না ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেব বাড়ি থেকে।”
“কি বললে? বাড়ি থেকে বের করে দেবে? ভুলে যেও না তোমার বাড়ি আর ব্যবসার সমান ভাগীদার আমিও।”
“হুমম তোমার ফ্যান্টাসিতে… হাঃ হাঃ।”
“মানে?”
“বাড়ি ব্যবসার কাগজপত্র গুলো কখনো দেখেছো? সেখানে কখনও খুঁজে পেয়েছো তোমার নাম?”
“মানে?”
“হাঃ হাঃ হাঃ…”
“রণ… ইউ লায়ার… চিটার… আমার সব কিছু নিয়ে তুমি! আমি ভাবতে পারছিনা! তোমাকে আমি মেরে ফেলবো…”
সোফা থেকে উঠে এসে ঈশানি সজোরে খামচে ধরে রণর কলার। রণ জোর করে ঈশানির হাতটা ছাড়িয়ে জোরে একটা চড় মারে ওর বাম গালে, ঈশানি উল্টে পড়ে সোফায়। তারপর আবার চরম আক্রোশে উঠে আক্রমণ করে রণকে, রণও পাল্টা আঘাত হানে। এইভাবে ধস্তাধস্তি চলতে চলতে হঠাৎ করে রণ সজোরে একটা লাথি কষায় ঈশানির পেটে; যন্ত্রনায় কঁকিয়ে ছিটকে পড়ে ঈশানি, দেওয়ালে ওর মাথাটা ঠুঁকে গিয়ে সরু রক্তের রেখা নেমে আসে কপাল চুঁইয়ে। অজ্ঞান হওয়ার আগে শুধু আবছা যেন শুনতে পায় দরজার বাইরে অনেক মানুষের কোলাহল, কেউ যেন দরজায় ধাক্কা দিচ্ছে…
চোখ খুলে ঈশানি বুঝতে পারে সে শুয়ে রয়েছে হসপিটালের বিছানায়, পেটে অসহ্য যন্ত্রনা। গলাটাও শুকিয়ে কাঠ, কাউকে ডাকতে গিয়ে দেখে মুখ দিয়ে গোঁ গোঁ আওয়াজ ছাড়া আর কিছুই বেরোচ্ছে না। একজন বয়স্ক নার্স ওর আওয়াজ শুনে ছুটে আসেন ভেতরে, “বাহ্ এই তো জ্ঞান ফিরে গেছে আপনার।”
নার্সকে কিছু বলতে গিয়েও গলার স্বর জড়িয়ে যায় ঈশানির। নার্স এগিয়ে এসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দেন, “কষ্ট হচ্ছে মা? দাঁড়ান এক্ষুনি ডাক্তারবাবুকে ডাকছি।” চোখ ফেটে জল আসে ঈশানির, বহুদিন বাদে এইটুকু স্নেহের স্পর্শ পেয়েই নিজেকে আর সামলাতে পারেনা সে।
ডাক্তারকে আসতে দেখে ঈশানি মনে যেন একটু বল পায়, অনেক কষ্টে জিজ্ঞেস করে, “আমার বাচ্চা…!” বয়স্কা নার্সটি আবার এগিয়ে এসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বলে, “শান্ত হোন।”
ডাক্তার চোখ দুটো নিচে নামিয়ে বলেন, “সরি মিসেস রয়, আপনার বেবিকে আমরা বাঁচাতে পারিনি।”
“না…!” আর্তনাদ করে ওঠে ঈশানি।
“শান্ত হোন। আওয়াজ শুনে আপনার প্রতিবেশীরা ঠিকসময় দরজা ভেঙে না ঢুকলে আপনার স্বামী আপনাকেও হয়তো… তবে চিন্তা করবেননা আপনার স্বামী এখন জেলের ঘানি টানছেন।” মৃদু হেসে জানান সেই নার্স।
“নার্স ওনার মা বাবাকে ভেতরে আসতে বলুন।” অর্ডার দেন ডাক্তার।
“আমার মা বাবা! ওরা কি করে জানলো!”
“তা তো জানিনা, হয়তো আপনার প্রতিবেশিরাই খবর দিয়েছে।”...