...

2 views

গল্প: বদনামের ভাগীদার
গল্প: বদনামের ভাগীদার

আমি মা কাকিমাদের কাছ থেকে শুনেছি ভাল ছেলে হয়ে থাকতে অর্থাৎ সত্যি কথা বলতে হয়, গুরুজনদের শ্রদ্ধা করতে হয়, তাদের কথার অমত হতে নাই, চুরি করা পাপ ইত্যাদি ইত্যাদি। রাখাল বালকের গরুর দলে বাঘ আসার গল্প ও শুনেছি বা পড়েছি যেটা আসলে বদনাম বা অবিশ্বাস প্রসুত গল্প । শুধু আমি নই হয়ত আমাদের সময়কার সকলেই এসব জানে । কিন্তুু আজ যে এমন একটা ঘটনা আমার সঙ্গে ঘটবে তা কল্পনা ও করিনি।
আমার ফ্ল্যাটের হলঘরে দুটো টিউব লাইট ছিল প্রায় কুড়ি বছর থেকে বা এখনো আছে সেই ফ্ল্যাট কেনা অবধি। কিন্তুু আগে ঐ লাইটগুলো ইলেক্ট্রিক চোক তাই প্রায় 60 ওয়াটের, তবে 150 টাকায় পুরো নতুন সেট হয়ে যেত । মাঝে মাঝে 6টাকার স্টার্টার , 4টাকার হোল্ডার ,কয়েক বছর পর চোক 30-35 টাকার বা টিউব বদলি করতে হত। তার পর এল ইলেক্ট্রনিক চোখ ,স্টার্টার গায়েব, খুব ভাল কথা, ওয়াট ও একটু কমল। এর পর এল টি- 5 সেট, লাভ অনেকটা‌ যেহেতু 36 ওয়াটের , দেখতে আমার মত স্লিম ,গিন্নির ও খুব পছন্দ, অবশ্য আমি যে স্লিম হ‌ওয়ায় গিন্নির খুব পছন্দের তার দাবি কিন্তু করছিনা। কেন সেটা বলে আর আঙুল ব্যাথা করছিনা। চল্ল বছর কয়েক। এবার এল টি-3 , আমার চেয়েও স্লিম কিন্তুু এই সেট কম্প্যাক্ট ইউনিট। ওয়াট মাত্র 28। খুব লাভ । তবে কিনা দাম 350-400 টাকা। বেশ চল্ল বছর দুই। এখন সমস্যা হল মাঝে মাঝে দুটোই খামখেয়ালিপনা করতে থাকে। তবে হ্যাঁ একসাথে দুজনে বদমায়েসি কখনো করেনি। হয়ত আমার উপর দয়া হয় - বেচারার লেখালেখির অসুবিধা হবে!
যা হোক ডাইনিং এর দিকটার টিউব টা প্রবেশ পথেরটার সঙ্গে বদলি করতেই ঐটা একদম ভদ্রলোক হয়ে গেল। হয়তো বা গিন্নির ভয়ে। কেননা গিন্নি মাঝে মাঝে খাবার সময় বলত দুটো নতুন সেট এনে লাগাও তো খুব ডিস্টার্ব হয় , যেটা মনে হয় এই টিউব টা শুনে ফেলেছিল। তবে আমি ইলেক্ট্রিক লাইনের লোক সহজে পয়সা খরচ করবার পাত্র ন‌ই। এভাবে বেশ কিছুদিন চল্ল ভাল‌ই। তারপর প্রবেশ পথের টা আবার মাঝে মাঝে রাগ করে, আমি থাপ্পর মেরে তার রাগ ভাঙাই। এমনি করেই চলছে। একদিন গিন্নির র হল জ্বর ,মাথা ব্যাথা, কান ব্যাথা ইত্যাদি। শুয়ে শুয়ে আদেশ করল আজ সুন্দরী আসবেনা বলেছে ফোণে ,ওর ছেলের নাকি পা ভেঙেছে তুমি ঘরটা ভাল করে ঝাড়ুদিয়ে দাও তার পর স্নান সেরে খিঁচুরি বানাও আমি ভাত রুটি খেতে পারবনা গলায় ব্যাথা । আমি ভাল করে ঝাড়ু দেওয়ার চক্বরে প্রবেশ পথের টিউব টা অন করলাম কিন্তুু ফক্বর টা তার বদনাম মতই আলো দিলনা। আমি যথারীতি থাপ্পর দিলাম ,জ্বলল না, উপর্যুপরি থাপ্পর দিতে দিতে ভেঙে পড়ল কেঁদে হা‌ঁউ মাঁউ শব্দে।
গিন্নি কি হল কি হল করে বিছানা থেকে বাইরে র ঘরে সব দেখে, জেনে বল্ল লাইন আছে কি যে ওটা জ্বলবে?বুদ্ধিভ্রষ্ট হয়েছে নাকি? ততক্ষণে টিউবটার লাল অশ্রু আমার থাপ্পর মারা আঙুল দুটো বেয়ে ঝরতে শুরু করেছে সোফার উপরে বদনামের ভাগীদার হিসেবে। তাই দেখে গিন্নি- 'খুব হয়েছে আর ঝাড়ু দিতে হবেনা, এদিকে এস , দেখি ব্যান্ডেজ আছে কিনা' !

**KRN**
08.02.2024.T
Writco : 09.02.2024