...

2 views

মোবাইল
বাচ্চা খেতে না চাইলে হাতে ধরিয়ে দিচ্ছেন মোবাইল| নিজের ছোট্ট বাচ্চাটিকে একটু ভালোবেসে খাওয়াতে পারেন না? আমার মনে হয় যদি বেশি টাকা থাকে, তাহলে বাড়িতে একটা কাজের লোক রাখুন কাজ করার জন্য| কিন্তু নিজের বাচ্চাকে নিয়ে সময় কাটান, খেলা করুন| মনে রাখবেন, একজন বাচ্চা কিন্তু মোবাইল বোঝে, মোবাইল কিন্তু বাচ্চা বোঝে না|

আমরা প্রত্যেকেই জানি দৈনন্দিন জীবন যাত্রায় মোবাইলটা প্রয়োজন| কিন্তু একজন বাচ্চার জন্য তো, ইদানিং পড়াশোনা ছাড়া মোবাইলের কোনো প্রয়োজন নেই| এখন একজন দুই বছরের বাচ্চা মোবাইল ছাড়া কিছুই খেতে চায় না| শিশুর এই খারাপ অভ্যাসের জন্য দায়ী কিন্তু একমাত্র বাবা মা|

ছোট্ট বাচ্চার মধ্যে অনেক ধরনের সমস্যা দেখা যায়, তার মধ্যে বেশিরভাগ শারীরিক ও মানসিক সমস্যার কারণ মোবাইল, যা অভিভাবকরা বুঝতে চান না| এখনকার বাচ্চারা মোবাইলে এত আসক্ত হয়ে পড়ছে যে, বাবা মা যদি সারাদিন বাচ্চার হাতে মোবাইল ধরিয়ে বাইরে চলে যায়, সেই বাচ্চা শুধু বাবা মা নয় খিদেও ভুলে যাবে|

আমাদের বড়োদেরই মোবাইলেরই জন্য কত সমস্যা দেখা দেয় কিন্তু আমরা মোবাইলকে কোনোভাবেই দায়ী করি না| কারণ আমরা সবকিছু ছেড়ে দিলেও মোবাইল ছাড়তে পারবো না|

বাচ্চার বয়স ২০বছর না হলে, কখনোই তাদের নিজস্ব মোবাইল দেওয়া উচিত নয়| আজকাল মানুষ মোবাইলে এত বেশি আসক্ত হয়ে পড়েছে যে, বাবা মায়েরা ভুলে যাচ্ছে, সন্তানকে মানুষের মতো মানুষ করতে হলে হাতে মোবাইল দিয়ে নয়, ভালোবেসে আচার ব্যবহার শেখাতে হবে| এখনকার বাবা মায়েরা সন্তানের প্রতি দায়িত্ব পালনের থেকে মোবাইলের প্রতি দাসত্ব পালন বেশি করেন|

আপনার সন্তানের সামনে আপনি যেমন আচরন করবেন, আপনার সন্তান সেটাই শিখবে| ছোটো বাচ্চারা কোনো কিছু শুনে শেখার আগে, কেনো কিছু ঘটনাকে দেখে শেখে|

কিছু বাবা মা তো আবার সবার কাছে বলে, মোবাইলে আমি যা জানি না, আমার ৫বছরের ছেলে/মেয়ে সব জানে|
কেন আপনি জানেন না সবকিছু? অথচ আপনার অতটুকু বাচ্চা আপনার থেকে বেশি জানে,
"মোবাইল ব্যবহারকারী কোনো বয়স্ক ব্যক্তি না বাচ্চা, সেটা মোবাইল বোঝে না"| বয়স্ক ব্যক্তি বা একজন বাচ্চা কিন্তু সহজেই মোবাইল বোঝে|

একজন বাচ্চা খুব সহজেই কোনো কিছুর প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে| মোবাইলে যখন কোনো বাচ্চা আসক্ত হয়ে পড়ে, তখন সে বাইরের জগতের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে| সে কারোর কথা শোনে না, সে জানে না বাইরের মানুষের সাথে কীভাবে ব্যবহার করতে হয়, সে জানতে পারে না কীভাবে মানুষ সম্মান করতে হয়, কীভাবে মানুষকে ভালোবাসতে হয়| বাচ্চারা ফোন নিয়ে নিজের জগতেই থাকতে বেশি পছন্দ করে এবং ধীরে ধীরে অসামাজিক হয়ে যায়। খেলাধূলা ও অন্যান্য শারীরিক পরিশ্রমও করতে চায় না| এমনকি তারা মোবাইলে আসক্ত হয়ে নিজের বাবা মাকেও ঠিকমতো ভালোবাসতে ভুলে না|

মোবাইলের বদলে শিশুদের সামনে বই পড়ুন, গল্প করুন, ছবি আঁকুন, কবিতা আবৃতি করুন, গান শেখান, নাঁচ শেখান, গল্পের ছলেই আপনি বিভিন্ন পড়াশেনা বিষয়ক, সাধারণ জ্ঞান বিষয়ক কথা নিয়ে আলোচনা করুন| দেখবেন আপনার বাচ্চা তাই শিখবে|

বাচ্চার সামান্য শরীর খারাপ হলেও বাবা মা, তার সন্তানের মাথার কাছে বসে রাতের পর রাত জেগে কাটিয়ে দিতে পারে, তবে কেন বাবা মা তাদের সন্তানের ভালোর জন্য মোবাইল দূরে রাখতে পারছেন না?

কোনো বাচ্চা অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহার করলে স্নায়ু, চোখ ও কানের সমস্যা দেখা দিতে পারে। মোবাইলের রেডিয়েশন বাচ্চাদের মস্তিষ্কের প্রচণ্ড ক্ষতি করে।

১। প্রয়োজন ছাড়া বাচ্চার সামনে ফোন ব্যবহার করবেন না-
বাচ্চারা বড়দের কাছে প্রতিনিয়ত যা দেখে তাই তারা নকল করতে পছন্দ করে| তাই আপনি যদি তার সামনে সবসময় মোবাইল নিয়ে বসে থাকেন তাহলে আপনার বাচ্চাও তাই শিখবে| আপনার বাচ্চার সামনে মোবাইলে অন্যের সাথে আনন্দ উপভোগ করার থেকে, আপনি আপনার বাচ্চার সাথে আনন্দ উপভোগ করুন| নাহলে এই ব্যাপারটা আপনার বাচ্চার জন্য ক্ষতির কারণ হবে| ফলস্বরূপ ভবিষ্যতে আপনার সাথেই এমন ব্যাপার ঘটবে যে, আপনার বাচ্চা সামনে থাকা মানুষের সাথে কথা বলতে পছন্দ করবে না|

২। বাচ্চাকে সৃজনশীল কোনো কাজের মধ্যে ব্যস্ত রাখুন-

ছোট থেকেই আপনার বাচ্চার সামনে নানারকম সৃজনশীল কাজ করার চেষ্টা করুন। তাতে আপনার বাচ্চার মনোযোগ সেইদিকেই প্রতিষ্ঠা হবে| যেমন- ছবি আঁকা, খেলাধূলা করা, গান গাওয়া, বৃক্ষরোপন ও পরিচর্যা করা ইত্যাদি। বই পড়ার মতো অভ্যেস তৈরি করান, প্রয়োজনে ওর সামনে বসে গল্পের বই পড়ুন।

৩। মোবাইল ফোন বাচ্চা ভোলানো কোনো খেলনা নয়-

অনেক বাবা-মা আছে, যারা বাচ্চাকে খাওয়ানোর জন্য, তার হাতে মোবাইল ধরিয়ে দেয়। এই অভ্যাস আপনার বাচ্চার জন্য একেবারেই ঠিক নয়। বাচ্চাকে ভোলানোর জন্য প্রয়োজনে মাঝে মাঝে টিভি দেখতে দিন কিন্তু মোবাইল দিয়ে কখনওই ওর অভ্যাস ও মানসিকতা খারাপ করবেন না।
© Sarifa Khatun