মিলন
গ্রামের দুই বন্ধু একসাথে খেলা করতো, পড়াশোনা করতো, আবার একসাথে বদমাইশি করতো। তাদের মধ্যে এত মিল এটা অন্য কোথাও দেখা যায় না। তারা যখন স্কুল ছুটির পর একসাথে বসে বসে গল্প করতো, এক সাথে বসে বসে টিফিন খেতো দেখে যেন মনে হতো তারা জমজ ভাই। তাদের দুজনের মধ্যে বন্ধুত্ব ছিল অগাধ ভালোবাসা। এই ভালবাসায় বন্ধুত্বে কোন খাদ ছিল না। তবে একদিন একটা বাজে ঘটনা ঘটে গেল। দুই বন্ধুর মধ্যে বন্ধুত্ব ভেঙে গেলো। হয়েছেটা কি আসলে তা হল সুমন হেডমাস্টারের দেওয়া একটা খুব দামী ছবি তাও আবার কাঁচ দিয়ে বাঁধানো। সেটা একদিনের জন্য নিজের বাড়িতে রাখার দায়িত্ব পেয়েছে সুমন। স্কুলের মধ্যে দায়িত্ব বলতে সুমনের দায়িত্ব সবথেকে বেশি তাই বোধহয় হেডমাস্টারমশাই সুমনকে একাজের জন্য বেছে নিয়েছেন। তবে দায়িত্ব পলে। সুমনের আর কিছু নেই। সুমন সবথেকে বেশি যেটাকে গুরুত্ব দেয় তা হলো দায়িত্ব কে। হেডমাস্টারমশাই সুমনকে ছবিটা হাতে তুলে দিয়েছিলেন এবং বললেন, যে কালকে আমি এইখানে একটা মিটিংএ আসব, এই ছবিটা আমার তখনই লাগবে কারণ আমি চাইনা যে ছবিটা আমি বাড়ি নিয়ে যাওয়ার পথে যদি কিছু হয়ে যায় তাই আমি তোমাকে এটা দিয়ে যেতে চাই আমি জানি যে তুমি এটা যত্নসহকারে রাখতে পারবে। কিছুক্ষণের মধ্যেই সুমনে বাড়ি থেকে একটা ফোন আছে সুমনের মা অসুস্থ হয়ে পড়েছে তাই তাকে ডাক্তার-খানা নিয়ে যেতে হবে। তার বাবা এখন বাড়িতে নেই তাকেই নিয়ে যেতে হবে। তাই সুমন করলো কি রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে তার সব থেকে প্রিয় বন্ধু সঞ্জীব কে বলল ভাই তুই আগে এই ছবিটা রেখে দে আমি মাকে ডাক্তার দেখিয়ে বিকালে আমি ছবিটা নিয়ে যাব কারণ আমি চাই না যে আমি বাড়িতে অনুপস্থিত থাকায় ছবিটা কোন ক্ষতি হয়ে যায়। তাই তোর দায়িত্বে আমি আপাতত রেখে যাচ্ছি। মাকে সুস্থ করে তুলি বিকালে মধ্যে আমি এটা নিয়ে যাব। সঞ্জীব ছবিটা কে নিয়ে নিল এবং বাড়ি চলে গেল। সুমন ও তার মাকে হাসপাতালে নিয়ে গেল চিকিৎসার জন্য। এদিকে সঞ্জীব যখন ছবিটা নিয়ে বাড়ি যাচ্ছে পাড়ার কয়েকটি ছেলে বাড়িতে ঢুকতে গিয়ে সঞ্জীব এর হাত থেকে অজান্তেই ছবিটা পড়ে যায় এবং ভেঙে যায়। সঞ্জীবের মাথায় তখন বজ্রাঘাত পড়ে গেল তখন মনে মনে ভাবলো, এবার কি হবে সঞ্জীব আমাকে এতো দায়িত্ব সহকারে জিনিসটা দিয়ে গেল এ আমি কি করলাম আমার হাত থেকে কি হয়ে গেল। আর হবার কি ছিল সঞ্জীব আর কোন পথ খুঁজে পেল না শেষে যখন সুমন তার মাকে হাসপাতালে ডাক্তার দেখিয়ে সুস্থ করে তুলল এবং বিকালে এসে ছবিটা নিতে এল। সঞ্জীবের মাথা তখন নিচে। সুমন বললো, ভাই ছবিটা দে। সঞ্জীবের কোন উত্তর নেই সুমন বললো, কিরে ছবিটা দে। তখন দুঃখ্যের সহিত বলল, ক্ষমা করে দে আমাকে। ছবিটা হাত থেকে পড়ে ভেঙে গেছে। একেবারে চমকে উঠল এবং বলল কি বলছিস রে কি করে হলো। সঞ্জীব বলল আর বলিস না পাড়ার ছেলেরা দুষ্টামি করে ঘরে ঢুকতে গেছে আর আমার এমন ঢেলে দিয়েছে হাত থেকে পড়ে ভেঙে গেছে। সুমন ভাবল সে হয়তো ইচ্ছে করেই ছবিটা ভেঙে দিয়েছে। রাগের মাথায় সে ওখান থেকে বাড়ি চলে গেল এবং তাদের মধ্যে যে বন্ধুত্ব সেখানে ফাটল ধরে গেল। এভাবে দীর্ঘদিন চলতে চলতে প্রায় দুমাস একে অপরের সঙ্গে কোনো কথা বলেনি। কোন দেখা করেনি। এভাবে আরো সময় যেতে লাগল তিনমাস চার মাস এইভাবে প্রায় ছ'মাস পর সঞ্জীবের বাবার অফিস থেকে একটা চিঠি এলো। তাদের ট্রান্সফার হয়ে যাচ্ছে। তারা এখান থেকে ছেড়ে বিদেশে চলে যেতে হবে কারণ তার বাবার অফিসের বদলি হয়েছে। তাই বাক্স-পেটরা সব গুছিয়ে নিয়েছে তারা পরের দিন গাড়ি আসবে এবং পরদিন সকালে তারা বেরিয়ে যাবে। এই খবরটা সুমনের কাছে পৌঁছে ছিল। পরের দিন যখন গাড়ি এলো সব মালপত্র তুলে দিল সঞ্জীব বলল তার বাবা-মা সবাই গাড়ির মধ্যে বসে ছিল গাড়ি ছাড়ার সময় ঠিক তখনই একজন পেছন থেকে ডেকে উঠল দাঁড়ান দাঁড়ান দাঁড়ান। সঞ্জীব জানলা দিয়ে মুখ বের করে দেখলো তার বন্ধু সুমন। সুমন সঞ্জীব কে গাড়ি থেকে নেমে আসার কথা বলল। সুমনের কথামত সঞ্জীব গাড়ি থেকে নেমে এল। সুমন বলল ভাই তুই আমাকে ক্ষমা করে দে তখন আমি বুঝতে পারিনি আসলে আমার কাছে তখন বন্ধুত্ব অপেক্ষা দায়িত্বটি বড় ছিল। সেখানে তোকে আমি অজান্তে অনেক ভুলভাল কথা বলেছি তোকে অপমান করেছি সেই জন্য এতদিন পর্যন্ত আমি তোকে মুখ দেখাতে পারিনি।লজ্জায় আমি তোর কাছে আসতে পারিনি কিন্তু এই খবরটা শুনে খুব দুঃখ পেয়েছি যে তুই আর আমাদের সঙ্গে থাকতে পারবি না। তোকে অন্য জায়গায় চলে যেতে হবে দয়া করে আমাকে ক্ষমা করে দে। সঞ্জীব তখন বলে উঠলো বন্ধুত্বের মধ্যে ক্ষমা কথাটা আসা উচিৎ নয়। আমরা বন্ধু আমরা একে অপরের কষ্টে পাশে থাকবো সবসময়। আজ তোর আমার মধ্যে একটা ভুল-বোঝাবুঝি হয়েছে ঠিকই কিন্তু তার জন্য যে এতদিন দেখা বলিসনি, এতদিন তোর সঙ্গে কোন কথা নেই এতে আমি অনেক দুঃখ পেয়েছি। এইভাবে দুই বন্ধুর মধ্যে মিল হয়ে গেল। তারা একে অপরের গলা জড়িয়ে ধরলো। তাদের চোখ থেকে জল বেরিয়ে আসছিল। এটাই হল আসল বন্ধুত্ব এবং গল্পের নিরিখে তাদের এতদিনের না দেখা করা, অভিমানকে, দুঃখ-কষ্টকে, চেপে রাখা এবং অবশেষে তা প্রকাশ করা তাদের দুজনের মধ্যে এই যে মেলবন্ধন বা মিলন গল্পটে প্রতীক চিহ্ন হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।তাই গল্পের নামকরণ স্বার্থক বলে মনে হয়েছে।
© All Rights Reserved
© All Rights Reserved