...

4 views

প্রেতপুরী স্টেশন
শেষ ট্রেনটাও দুরন্ত গতিতে স্টেশনের পাঁচ নাম্বার প্লাটফর্ম দিয়ে চলে গেলো রোহিতের চোখের সম্মুখ দিয়ে। এদিকে ঘড়িতে ঢং ঢং শব্দে রাত্রি বারোটার ঘন্টা বেজে ওঠে। সাথে সাথে স্টেশনটাও জনশূন্য হয়ে পড়ে। চারিদিকে নিস্তব্ধ পরিবেশ আর ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক।

রোহিত ক্লান্তির সুরে স্টেশনের এক বেঞ্চে মুখ নিচু করে বসে স্টেশন ভুমির দিকে তাকিয়ে রইল। সে এই মুহুর্তে কী করেবে তা নিয়ে গভীর চিন্তায় মগ্ন। কারণ পরবর্তী ট্রেন সকাল আটটায়। এদিকে তার বাড়ি ফেরাটা নিতান্ত জরুরি। বাড়িতে তার মা অসুস্থ। পরদিন সকালে মা' কে নিয়ে ডাক্তার বাবুর অফিসে যেতেই হবে।

অবশেষে কোনো উপায় না পেয়ে রোহিত সেই বেঞ্চের উপর বিশ্রাম নেয়। রাত্রি তখন দুটো বাজে, রোহিত সেই মুহূর্তে গভীর নিদ্রায় আচ্ছন্ন। তখনই হঠাৎ এক ট্রেনের হুইসেল তার কানে ভেসে আসে এবং সে ঘুম কাটিয়ে ওঠে। দ্যাখে একটা যাত্রীবাহী ট্রেন স্টেশনের দিকে মন্থর গতিতে ক্রমশ এগিয়ে আসছে। এমন সময়ে ট্রেন আসছে দেখে রোহিতের খুব অবাক লাগে ।
ট্রেনটা থামার পর রোহিত ট্রেনের মধ্যে থাকা এক ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করে —কাকু, ট্রেনটা কোথায় থামবে? রামনগর স্টেশনে কি দাঁড়াবে?
অনুগ্রহ করে একটু বলবেন!
—না । রামনগরের দুটি স্টেশনের আগে ট্রেনটা থামবে,
প্রেতপুরী স্টেশন।
—প্রেতপুরী স্টেশন !
—আজ্ঞে হ্যাঁ বাবু।
—আচ্ছা ঠিক আছে। ধন্যবাদ।
এই ধরনের স্টেশনের নাম আগে সে কখনোই শোনেনি তাও আবার রামনগর স্টেশন থেকে মাত্র দুটো স্টেশন পর। তবে আর কোনো উপায় নেই, এই ট্রেনে করে বাড়ি যাওয়ার একমাত্র উপায়। তাই রোহিত ট্রেনের মধ্যে প্রবেশ করে। ঘড়িতে রাত দুটো হলেও ট্রেনে যাত্রীর সংখ্যা কল্পনার বিপরীতে। তবে তা দেখে রোহিতের কিছু মনে হলো না । প্রায় দেড় ঘন্টা অতিক্রান্তের পর ট্রেনটা প্রেতপুরী স্টেশনে এসে থামল।

ট্রেন থেকে নেমে রোহিত বোতলে জল ভরার উদ্দেশ্যে স্টেশনের মধ্যবর্তী এক জলের কলের দিকে যায় । কল চালানোর কিছুক্ষণ পর লক্ষ্য করে কল থেকে নির্গত জলের বর্ণ কটকটে লাল এবং সে বুঝতে পারে এই লাল জল আদতে মানুষের রক্ত। সঙ্গে সঙ্গে সে পিছন ফিরিয়ে দ্যাখে ট্রেনটা স্টেশন থেকে অদৃশ্যমান হয়ে গেলো। আর নিমিষের মধ্যে চারিদিক নিস্তব্ধ ও জনমানবহীন হয়ে যায়। কয়েক মিনিটের মধ্যে ট্রেন ও মানুষের অদৃশ্য হওয়া দেখে রোহিতর মনে চরম ভয়ের আবির্ভাব ঘটে। এতক্ষন কি তাহলে সে এক ভুতুড়ে ট্রেনে করে যাত্রা করেছে এই ভেবে যখন সে দৌড়ে স্টেশন পরিত্যাগ করার জন্য প্রস্তুত হঠাৎ সে দেখতে পায় কিছুটা দূরে সাদা বর্ণের কাপড় পরিহিত এক মহিলা স্বরুপ তার দিকে অতি ধীর মন্থর গতিতে ক্রমশ নিকট আসছে । মহিলা স্টেশনের আলোর সম্মুখীন হলে রোহিত দেখতে পায় এই মহিলা আর কেউ নন, তিনি তার মা কমলা দেবী। মা কে দেখে রোহিত অবাকের সুরে বলে —
মা! তুমি এখানে কি করতে এসেছো? আর এত রাতে এখানে কি করে এলে?
—তোকে শেষ বারের মতো দেখতে এলাম রে খোকা।
এর পরেই কমলা দেবী বাতাসের মধ্যে অদৃশ্য হয়ে গেলো। আর রোহিতের ফোনের রিংটোন বেজে উঠল। ফোন ধরে জানতে পারে তার মায়ের মৃত্যু সংবাদ। কয়েক মিনিট আগে পরলোকে গমন করেন রোহিতের মা । কথাটা শোনার পর রোহিত মায়ের মৃত্যুশোকে ভাবলেষহীন হয়ে মেঝেতে গড়িয়ে পড়ে।