...

4 views

বুনোদাদুর বন্যরা
#বুনোদাদুর_বন্যরা
#সায়নদীপা_পলমল

“কাকু গ্রামে ঢোকার মুখে একটা বুলডোজার দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম!”
“হুম রে, বুনো দাদুর বাড়িটা ভাঙা হবে।”
“সেকি! কেন?”
“কারখানা তৈরির জন্য জমিটা লাগবে হেমন্ত কাকার।”
“কারখানা! এখানে! কেন?”
“সে আর আমি কি করে বলবো! নে নে তাড়াতাড়ি মুড়ি গুলো খেয়ে নে দিকি, কত বেলা হলো ভাত খেতে হবে তো আবার।”
“হ্যাঁ খাচ্ছি। আচ্ছা কাকু ঠাম্মা তো বলতো বুনো দাদু নাকি বাড়িটা স্কুল তৈরি করার জন্য দিয়ে গেছেন, তাহলে ওটা ভেঙে কারখানা তৈরি হবে কিভাবে?”
“বুনো দাদু স্কুল তৈরি করার ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন কিন্তু লেখাপড়া করে বাড়ি সুদ্ধ জায়গাটা দেওয়ার আগেই তো উনি…”
“গ্রামে তো একটাও স্কুল নেই আজও, হেমন্ত দাদুকে বলো না তোমরা সবাই মিলে।”
“দূর বোকা, হেমন্ত কাকু যদি শোনার লোকই হত তাহলে বহু বছর আগেই ওখানে স্কুল তৈরি হয়ে যেত। টাকার কুমির হয়ে গেছে রে লোকটা, আশেপাশের জমিগুলোও তো কিছু টাকা ধরিয়ে হাতিয়ে নিয়েছে। গরিব লোকগুলোকে পার্টির লোক ধরে এনে ভয় দেখিয়েছে আর তারাও তাই মেনে নিয়েছে। গ্রামটা আর আগের মতো থাকবে না রে রোদ।” একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন কাকু। কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পর রোদ আবার জিজ্ঞেস করলো,
“আচ্ছা কাকু কারখানা তৈরি করতে গেলে তো অনেক পারমিশন জোগাড় করতে হয় শুনেছি, হেমন্ত দাদু এতো সহজে পারমিশন পেয়ে গেল?”
“কাকার তো অনেক বড় বড় লোকের সাথে ওঠা বসা আছে, তাই পারমিশন পেতে নিশ্চয় অসুবিধা হয়নি।”
“তাহলে কাকু ঘরটা ভাঙা হলে চামচিকে গুলো কোথায় যাবে?”
“তারা কি আর আছে রে খ্যাপা। কালই তো কাকার লোকেরা এসে ঘরের ভেতরে আগুন লাগিয়ে দিলো, সব কটা চামচিকে পুড়েছে। সে কি আওয়াজ, উফফ যে না শুনেছে সে কল্পনাও করতে পারবেনা।”
“মেরে ফেললো!”
“হুম।” কাকুর মুখে এই সংক্ষিপ্ত উত্তরটাই রোদের বুকের ভেতরটাকে দুমড়ে মুচড়ে দিতে থাকলো; অতো গুলো চামচিকেকে মেরে ফেললো!

মুড়ি খেয়ে ঘুরতে বেরোলো রোদ। ঠিক ঘুরতে নয় অবশ্য, ওর ইচ্ছে শেষবারের মতো বুনো দাদুর বাড়িটা একবার দেখবে। কতো স্মৃতি জড়িয়ে আছে এই বাড়ির সঙ্গে। বুনো দাদু ছিলেন রোদের দাদুর এক তুতো কাকা, তাই তিনি মোটেও রোদের বুনো দাদু নন, রোদের বাবা-কাকদের দাদু কিন্তু গোটা গ্রামসুদ্ধ লোকই কোনো অজানা কারণ বশত লোকটাকে “দাদু” বলেই সম্বোধন করে আর তাই রোদরাও বলে বুনো দাদু। এই বুনো দাদু মানুষটাকে রোদ কখনো চোখে দেখেনি, তবে ঠাম্মার মুখে গল্প শুনে রোদ মনে মনে বুনো দাদুর একটা ছবি এঁকে ফেলেছে। ঠাম্মার মুখে শুনেছে নিঃসন্তান বুনো দাদু নাকি নিরক্ষর ছিলেন কিন্তু এক আশ্চর্য ক্ষমতা ছিল তার। তিনি নাকি পশু, পাখি আর গাছপালা এসবের সঙ্গে কথা বলতে পারতেন। তাই তো বুনো দাদুর বাগানের আম, কাঁঠাল গাছে নাকি প্রত্যেকবছর যে ফল হতো তা গোটা গ্রামের লোক ফেলে ছড়িয়ে খেয়েও শেষ হতো না। কথাটা অবশ্য মিথ্যে নয়, রোদ জানেনা বুনো দাদুর আশ্চর্য ক্ষমতার গুণ তাঁর মৃত্যুর পরেও কাজ করে কিনা তবে ও নিজের চোখে দেখেছে বুনো দাদুর বাগানে আম কাঁঠালের বাড় বাড়ন্ত। শুধু তাই নয়, রোদ শুনেছে পৈতৃক সূত্রে পাওয়া সাত বিঘা জমিতে বুনো দাদু যাই চাষ করতো তাতেই নাকি ব্যাপকহারে ফলন হতো, এমনকি যে বছর গ্রামে আর কারুর ভালো ফসল হতো সে বছরও বুনোদাদুর জমি ভরা থাকতো।

এসব তো গেল গাছের কথা। ঠাম্মা বলতেন বুনো দাদু নাকি বাড়িতে অনেকরকম পশু, পাখি পুষতেন। গরু, ছাগলের সঙ্গে ছিল বিড়াল, খরগোশ, টিয়া, ময়না এরকম আরও কতো কি। কোনো পাখিকে তিনি খাঁচায় রাখতেন না, পাখিগুলো সারাদিন নিজেদের ইচ্ছে মতো উড়ে বেড়াত কিন্তু বুনোদাদুকে ছেড়ে কখনোই যেতো না। রোদ দেখেছে এখনো বুনো দাদুর বাগানে কতরকম পাখি খেলা করে। তবে সবচেয়ে আশ্চর্যের যেটা ছিল সেটা হলো বুনোদাদু নাকি চামচিকে পুষতেন। হ্যাঁ, বুনোদাদুর বাড়ির একটা গোটা...