...

1 views

ভৌতিক প্রেমমূলক গল্প - " আসক্তি "


" আসক্তি হলো এক অদ্ভুত মাদকতা,যা আমাদের মতো দুর্বল চিত্তের মানুষগুলোকে ডুবিয়ে রাখে নেশায়,আকাঙ্ক্ষায় এবং কামনায়।
অন্যদিকে, আসক্তি সাঁওতালি উলুধ্বনির মতো খানিকটা অলৌকিক,পৈশাচিক এবং মহাপৌরুষও বটে.."
- কথাগুলো বলতে বলতে বইয়ের পাতা উল্টায় অরিত্র।পাশে তার একনিষ্ঠ শ্রোতা ওরফে ছাত্রী,ঐন্দ্রিলা এতক্ষণ খুব মনযোগ দিয়ে শুনছিলো কথাগুলো।কিন্তু,খুব আশ্চর্য হয়ে কৌতূহলবশত সে প্রশ্ন করে অরিত্রকে -
" আচ্ছা,অরিত্রদা,পড়ার বইয়ে নিশ্চয় আর আসক্তির ব্যাখ্যা জানতে চায়নি, তাছাড়া,তুমি তো বিখ্যাত গল্প ' পূর্ণতা পায়নি ' এর অন্যতম চরিত্র ঋত্বিকাকে তার প্রেমিকের জন্য আত্মক্ষয়ের কথা বলছিলে,
তাহলে তার সাথে এই ' আসক্তি ' বিষয়টার কি সম্পর্ক ? "
" আছে ,আছে।অত উতলা হলে হবে ? গভীর থেকে গভীরতর নীহারিকার ব্রহ্ম মুহূর্তরা লুকিয়ে আছে,তাই মরচে পরার আগেই ওদের বাস্তবের আলো দেখাতে হবে তো,নইলে যে কামানের গোলা, তারাকাঠির ফুলকি ওদের
পুড়িয়ে দেবে রে "।
" ধুর,কি যে বলো তুমি,তার নেই ঠিক ঠিকানা।"
" হা,হা,হা...এই কথাটা বেশ বলেছিস!যার কোনো ঠিক নেই!তার কি আর কোনো ঠিকানা থাকে ? পুরোনো স্মৃতির পুষ্টি আমাদের খামোখা ই সুস্থ করে রাখে..."
" আচ্ছা,শোন... তাহলে যেই পড়াগুলো দিলাম আজ...মনে থাকবে তো ?
পড়ে আসবি কাল,আর পড়া না পারলে মনে আছে তো ?
গোটা কয়েক কানমোলা আর থাপ্পড়.."
" না,না,বাবা,ওতে আর কাজ নেই , ঢের মনে থাকবে আমার পড়ে আসার কথা , তবে , আজ বাড়ি গিয়ে একটু তোমার ওই ' আসক্তি ' বিষয়টা নিয়ে গবেষণায় বসতে হবে ভাবছি।
যাগ গে,এখন আসি,অনেক বেলা হলো,বাড়িতে মেলা কাজ পরে আছে।"
" উফ..তোকে নিয়ে আর পারা গেল না..শুধু পাকামি.. হুম..আয়..সাবধানে যাস.."।
পরের দিন বাড়িতে গিয়ে ঐন্দ্রিলা ভাবতে থাকে সেসব পুরোনো দিনের কথা,যেই দিনগুলোয় সে অরিত্রদার সাথে রং খেলায় মেতেছে এবং অষ্টমীর অঞ্জলী সেধেছে
কিন্তু তখন অরিত্র সমগ্রটা তার পড়া হয়নি ভালো করে..
আর,আজ হঠাৎ ই বোধহয় তার মনে আসক্তির সংজ্ঞাটা উদিত হয়।
দক্ষিণ এর জানালার মতো এত মুক্ত এর পাঁজর,তা বোধহয় এর আগে ঐন্দ্রিলার অজানা ছিল।
" এর আগে অরিত্র ঐন্দ্রিলাকে বেশ কয়েকবার ছুঁয়েছে,তবে সেই ছোঁয়ার ধরণগুলো বেশ অন্যরকম ছিল।
প্রাণবায়ু যেমন যন্ত্রণার আগুনকে স্পর্শ করে যায়, ঠিক তেমনিই ছিল তার পরশ।"
তবে কি ঐন্দ্রিলা এতদিনে অনুভব করলো অরিত্রদার জীবনের গোপন রহস্যটা ?
পরের দিন সকালে উঠেই পড়তে চলে যায় ঐন্দ্রিলা।তবে আজ তার সাজ অন্যদিনের থেকে একটু আলাদা।
ঠোঁটের স্লেটে ঘষা রামধনু লিপস্টিক, চোখে বন্য আইলাইনারের চেতনা টানা হয়েছে যেন এক বিশুদ্ধ আন্তজার্তিকরণে,শ্রাবস্তীর কারুকার্যের মতো এক পিঠ খোলা চুল,আর,দেশলাই কাঠি দিয়ে আঁকা লাল সিঙ্গার টিপ।
পরনে বাসন্তীরঙা শালোয়ার কামিজ।
সূর্যোদয় হতেই সবুজের অন্তরাল থেকে দেখা যায় একগোছা প্রেমের শব্দদুল,যার গভীর কোনো নকশা থেকে বেরিয়ে আসছে চার অক্ষরের শব্দতরঙ্গ - ' অরিত্রদা '।
তবে কোনো সাড়া পাওয়া যায় না প্রথমবার।
কাজেই সুযোগের ব্যবহার হিসেবে খাটের ওপর সাজানো ডায়েরিগুলো ঘাঁটাঘাঁটি করতে থাকে ঐন্দ্রিলা।
এবং একসময় রহস্যের উন্মোচন হয়।
ডায়েরিতে বড়ো বড়ো অক্ষরে লেখা -
" প্রিয় ঐন্দ্রিলা,তোর আসক্তি আমার চোখের তারায় সারাক্ষণ প্রজাপতির মতো ঘুরে বেড়ায়, ঢেউয়ের মতো ওঠা নামা করতে করতে ওরা আমার সিগারেটে আগুন হয়ে ধরা দেয় , আর ধোঁয়া হয়ে নিভে যায় , তোর অনুভূতির রেণু সবসময় আমাকে স্নানে ভিজিয়ে রাখে।"
" ব্যাস, বাকিটুকু আর পড়ার প্রয়োজন পরে না ঐন্দ্রিলার।
এটুকুতেই যেন তার হৃদ্ স্পন্দন অরিত্রদার বলা ওই নীহারিকা অব্দি..."
মিনিট দশেক পরে অরিত্র এসে ঐন্দ্রিলাকে বসতে বলে,আর খাটের ওপর ডায়েরিগুলো ওইভাবে উচ্ছিষ্ট হয়ে পরে থাকতে দেখে আশঙ্কায় ভোগে সে।
" ঐন্দ্রিলা তুই কি আমার ডায়েরিগুলো পড়েছিস ? আমায় না বলে এভাবে পড়ে কিন্তু তুই মোটেই ঠিক কাজ করিস নি।"
তারপরই চারপাশটা কেমন যেন নীরবতায় ভরে যায়।
আবেগ যেন হৃদয়ের থলি ফেটে বেরিয়ে পরে ওদের,অন্যদিকে,আসক্তির টানে ওরা একে অপরকে জড়িয়ে ধরে,তারপর ওদের দুটো লোহা শরীরকে টেনে আনে ঠোঁটের চুম্বক,এক অসাধারণ চুম্বনে লিপ্ত হয় ওরা।
এভাবেই আরো গভীর থেকে গভীরতর ব্রহ্মমুহূর্তে ওরা ডুবে যায়...
মিশে যায় দুটো শরীরের শর্ত এবং বাধা...
ওদের ওই অবস্থায় দেখে ফেলে পরিবারের লোকজন,আর,সমাজের কাছে তো আবেগের কোনো ক্ষমা নেই ,কাজেই অরিত্রদার কাছে পড়তে আসা চিরকালের মতো বন্ধ হয়ে যায় ঐন্দ্রিলার।
তারপর থেকে ঐন্দ্রিলা নিমজ্জিত থাকে আসক্তির প্লবতায়, আর,বুঝতে পারে,ভালোবাসার মধুমাস কিভাবে একসময় যন্ত্রণার বিষমাসে পরিণত হয়...
মনে পরে ' পূর্ণতা পায়নি ' গল্পের ' ঋত্বিকা ' চরিত্রের সেই আত্মক্ষয়ের কথা..
আর,এভাবেই,কিছুক্ষণ পরে সে ও ওই আত্মক্ষয়েই নিজেকে সমর্পণ করে ফেলে।
চারিদিকে তখন রক্তের স্রোত,আর,অপূর্ণতার সোঁদা গন্ধ..
তারপর,কেটে যায় বেশ কয়েক বছর..
সমস্ত বিরহের তরঙ্গকে অতিক্রম করে অরিত্র তখন তিন বছরের বিবাহিত পুরুষ।
তবে,আফসোস একটাই , আসক্তির সিঁদুর গুলে ঐন্দ্রিলার কপালে পরিয়ে তার আর মহাপুরুষ হওয়া হলো না...
বিলীন হওয়া হলো না চৈতন্যে..
এখন সে তার তিন বছরের বিবাহিতা স্ত্রী এর সাথে সহবাস করে,আর,এই সময়েই একদিন ঐন্দ্রিলার পিশাচ এসেছিল ওদের ঘরে,আর,বীর্য দিয়ে লিখে রেখেছিল -
" অরিত্রদা তুমি তোমার ঐন্দ্রিলাকে আরেকবার ছুঁয়ে দেবে ? তাহলেই সে ভুতে
বিলীন হয়ে যাবে , আর কোনোদিন আসবে না তোমার কাছে আসক্তির অধিকার নিয়ে।"


© সাহিত্যের নায়াগ্রা❤️