...

4 views

দুপুরের কথা
ব্যাংকে গেছিলাম, সামনে দাঁড়িয়ে এক বয়স্কা।
অনেক্ষন হলো, ভিড়ে ভিরাক্কায়, বেশ লম্বা লাইন।
সুসভ্য ভাবে দাঁড়িয়ে আমরা, ভগবানের শ্রেষ্ট কীর্তি!
রোদ, গরম করোনা শোক তাপ দুঃখ আরো হাজারো লাখো কারণ কে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এসেছি।
তা প্রায় মিনিট ৩০ পর
ভদ্রমহিলার পালা এলো। আমি পেছনে দাঁড়িয়ে গার্ড এর খৈনি দলা দেখছি। কানে এলো-"কেমন আছেন?"
ব্যাংক টা আহামরি বড় না। চেনা পরিচিতি বেরিয়েই পরে এই মফঃস্বলে। বুঝলাম কাঁচের দেয়াল এর ওপার থেকে কথাটা আসছে মহিলার উদ্দেশ্যে। ভদ্রমহিলা উত্তর দিলেন "ভালো নয়, করোনা তে বড় জামাই মারা গেছে"। গলাটা একটু ভেঙে পড়ল কি ?
তাকালাম ভদ্রমহিলার দিকে। কাঁচের ওপর থেকে আওয়াজ এল, "আঁ? শুনতে পাচ্ছি না জোরে বলুন"
হায়রে! ভদ্রমহিলা আরেকবার ব্যর্থ প্রচেষ্টা চালালেন, গলা কেঁপে উঠছে রীতিমতো। কাঁচের কাছে ঝুঁকে পড়ে বললেন, "কদিন খুব কষ্ট গেল, জামাই টা ছিল না, আপনি চিনতেন, লম্বা চওড়া। এই করোনা তে মরে গেল।"
নিজের শোকের বোঝা টা হালকা করার কি ব্যাকুল চেষ্টা। মানুষ তুমি নাকি সমাজবদ্ধ জীব। হাস্যকর।

নিয়ম, তার ওপর নিয়ম, তস্য তস্য নিয়মের বেড়াজাল এ নিজেই গোত্তা মেরে পরে আছো তুমি মানুষ। তোমার সময় নেই। থাকবে কি করে। মেলাতে ব্যস্ত, হাজার টা সুতো পাক খেয়ে খেয়ে জাল তৈরি করেছো। এর শুরুই বা কোথায়, শেষ ই বা কোথায়।
এখানে থেকে থেকে তুমি কি আদৌ আর মানুষ আছ?

তবে, তাতেও ভদ্রলোকের কানে গেল না। কিন্তু তিনি আর বাকবিতণ্ডা না করে বললেন, "আপনি ওই কাউন্টার এ পাশ করিয়ে আসুন, আসলে মাস্ক আছে তো, তাই শুনতে পাচ্ছি না হেহে"।
ভদ্রমহিলা কি ভাবলেন তখন? জানার ইচ্ছে হচ্ছিল খুব। হয়তো হাসছিলেন মনের মধ্যে খুব। হাসছিলেন এই দাঁত নখ বের করা সমাজের প্রতি, আমাদের প্রতি।
মানুষ, এত দম্ভ, এত লোভ কোথায় নিয়ে ফেলবে? কেও ভাবে না। কেউ পরোয়া করে না। তুমি নিতান্তই ক্ষুদ্র।অসহায়।একা। তোমার মৃত্যু তে তোমার দুঃখে তোমার আনন্দে কারো কিছু এসে যায় না। হাহা!!

এইসব ই ভাবছিলাম, খেয়াল পড়লো যখন ভদ্রলোক অনেক কবার ডাকলেন, কাজ টা হয়ে গেছে। বেরোলাম, লাইন টা ক্রমশ বড়ো হচ্ছে। সর্বগ্রাসী মানব সভ্যতার প্রতিকৃত যেন।।

© শখের লেখক