গাঁওকোর
#নারী_দিবস
#ছোটগল্প
#গাঁওকোর
#সায়নদীপা_পলমল
গাঁওকোর
সায়নদীপা পলমল
“ওহ নো ওওও … প্লিজ…”
অপ্রান্ত থেকে চিৎকারটা ভেসে আসতেই চমকে উঠে সেদিকে তাকায় রিশা। দেখে গাড়ির সঙ্গে বাঁধা একটা গরু শিং উঁচিয়ে খুর ঘষছে মাটিতে আর তার সামনেই প্রপাত ধরণীতলে পড়ে আছে আণিকা। চিৎকারটাও ওরই গলা দিয়ে বেরিয়েছে। দেবদত্ত ছুটে গিয়ে মাটির থেকে তুলে নেয় ওকে। পায়ে পায়ে সেদিকে এগিয়ে যায় রিশা, “কি করে পড়লে ওখানে?”
“আ… আমি তো জাস্ট এই কার্টটার একটা ছবি নিতে গিয়েছিলাম আর তাতেই ও ক্ষেপে গেল।” ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে কথাগুলো বলে আণিকা।
“রিল্যাক্স”, আণিকার পিঠ চাপড়ে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করে রিশা, “কিচ্ছু হয়নি। ডোন্ট ওয়ারি।”
আণিকা একটু স্বাভাবিক হয়ে আসতেই ওর কাছ থেকে সরে আসে রিশা, মাথাটা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখতে শুরু করে গ্রামটাকে। খড়ের চাল, টিনের ছাউনি দেওয়া ঝুপড়ি, ধানের মরাই, গরু ভর্তি গোয়ালগুলো দেখতে ভারতবর্ষের আর পাঁচটা গ্রামের মত সাধারণ হলেও রিশা জানে এই গ্রামটা আদপে দেশের আর পাঁচটা গ্রামের মত নয়। গোটা ভারতবর্ষ যখন শতাব্দী প্রাচীন যুক্তিহীন রীতিনীতিগুলোকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যাওয়ার উল্লাসে মত্ত, এমনকি গ্রামাঞ্চলগুলোও পা বাড়াতে শুরু করেছে সামনের দিকে তখন এই দেবলপুরের মত কিছু গ্রাম এখনও বিদ্যমান যাদের পদক্ষেপ সর্বদা পশ্চাদবর্তী। শিক্ষার প্রদীপ এখানে তেলের অভাবে ধুঁকছে সর্বদা, যেটুকু আলো আবার আসে কোনোক্রমে সেটুকুও যেন অন্ধকারের দাসত্বেই খুঁজে নেয় নিজের সুখ।
রিশা, দেবদত্ত আর প্রাচীন… ওরা তিনজনেই এঞ্জেল ফাউন্ডেশন নামে এক এন.জি.ও’র কর্মী আর আণিকা থাকে ইউনাইটেড স্টেটসে। ওখানকারই এক সংস্থার প্রতিনিধি হয়ে তার ভারতে আসা। ওই সংস্থার সঙ্গে এঞ্জেল ফাউন্ডেশন যৌথভাবে এখন ভারতের পিছিয়ে পড়া গ্রামগুলিতে মেয়েদের হিতের জন্য কাজ করতে তৎপর। ইতিমধ্যেই বেশ কিছু এলাকায় সাফল্যও এসেছে তাদের। আর তাই তাদের আজকের কর্মস্থল মধ্যপ্রদেশের এই গ্রামটি, নাম দেবলপুর।
★★★★★
মেঝেতে পাতার চাদরটা গায়ে জড়িয়ে জড়সড় হয়ে বসল ফুলমতি। গা’টা শিরশির করছে তার। আকাশটা অনেকক্ষণ থেকেই অন্ধকার হয়ে আছে কিন্তু ফুলমতি জানে এটা সন্ধ্যার অন্ধকার নয়। এখন শেষ দুপুর কিংবা বড়জোর বিকেল হতে পারে কেননা আই খানিক আগেই এই ঝুপড়ির সামনে খাবার আর জল রেখে গেছে। অন্ধকারটা যত বাড়ছে ততই ঝুপড়ির পেছনে থাকা ঘন জঙ্গলটা থেকে হরেক রকম আওয়াজ ভেসে আসছে প্রতিমুহূর্তে। মাঝে মাঝে সে আওয়াজের তীব্রতা এতটাই ভয়ঙ্কর যে কেঁপে কেঁপে উঠছে ফুলমতি। তলপেটের চিনচিনে ব্যাথাটা আজও গেল না, আই অবশ্য বলেছিল অন্তত দিন তিনেক লাগবে ব্যাথাটা যেতে আর আজ তো সবে দু’দিন। এখনও একটা পুরো দিন সহ্য করতে হবে এই যন্ত্রনা। কিন্তু পেটের ব্যাথাটা চলে গেলেও অন্য যন্ত্রনাটা কি মিটবে আদৌ! আই তো বলেছে এবার থেকে প্রতি মাসে পাঁচদিন তাকে কাটাতে হবে এই গাঁওকোরে। এতদিন সে দেখতো আই, চাচী সবাই মাঝেমাঝেই যেন বাড়ির থেকে কোথায় চলে যেত কয়েকদিনের জন্য, সেই সময় খুব মন খারাপ করত ফুলমতির...
#ছোটগল্প
#গাঁওকোর
#সায়নদীপা_পলমল
গাঁওকোর
সায়নদীপা পলমল
“ওহ নো ওওও … প্লিজ…”
অপ্রান্ত থেকে চিৎকারটা ভেসে আসতেই চমকে উঠে সেদিকে তাকায় রিশা। দেখে গাড়ির সঙ্গে বাঁধা একটা গরু শিং উঁচিয়ে খুর ঘষছে মাটিতে আর তার সামনেই প্রপাত ধরণীতলে পড়ে আছে আণিকা। চিৎকারটাও ওরই গলা দিয়ে বেরিয়েছে। দেবদত্ত ছুটে গিয়ে মাটির থেকে তুলে নেয় ওকে। পায়ে পায়ে সেদিকে এগিয়ে যায় রিশা, “কি করে পড়লে ওখানে?”
“আ… আমি তো জাস্ট এই কার্টটার একটা ছবি নিতে গিয়েছিলাম আর তাতেই ও ক্ষেপে গেল।” ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে কথাগুলো বলে আণিকা।
“রিল্যাক্স”, আণিকার পিঠ চাপড়ে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করে রিশা, “কিচ্ছু হয়নি। ডোন্ট ওয়ারি।”
আণিকা একটু স্বাভাবিক হয়ে আসতেই ওর কাছ থেকে সরে আসে রিশা, মাথাটা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখতে শুরু করে গ্রামটাকে। খড়ের চাল, টিনের ছাউনি দেওয়া ঝুপড়ি, ধানের মরাই, গরু ভর্তি গোয়ালগুলো দেখতে ভারতবর্ষের আর পাঁচটা গ্রামের মত সাধারণ হলেও রিশা জানে এই গ্রামটা আদপে দেশের আর পাঁচটা গ্রামের মত নয়। গোটা ভারতবর্ষ যখন শতাব্দী প্রাচীন যুক্তিহীন রীতিনীতিগুলোকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যাওয়ার উল্লাসে মত্ত, এমনকি গ্রামাঞ্চলগুলোও পা বাড়াতে শুরু করেছে সামনের দিকে তখন এই দেবলপুরের মত কিছু গ্রাম এখনও বিদ্যমান যাদের পদক্ষেপ সর্বদা পশ্চাদবর্তী। শিক্ষার প্রদীপ এখানে তেলের অভাবে ধুঁকছে সর্বদা, যেটুকু আলো আবার আসে কোনোক্রমে সেটুকুও যেন অন্ধকারের দাসত্বেই খুঁজে নেয় নিজের সুখ।
রিশা, দেবদত্ত আর প্রাচীন… ওরা তিনজনেই এঞ্জেল ফাউন্ডেশন নামে এক এন.জি.ও’র কর্মী আর আণিকা থাকে ইউনাইটেড স্টেটসে। ওখানকারই এক সংস্থার প্রতিনিধি হয়ে তার ভারতে আসা। ওই সংস্থার সঙ্গে এঞ্জেল ফাউন্ডেশন যৌথভাবে এখন ভারতের পিছিয়ে পড়া গ্রামগুলিতে মেয়েদের হিতের জন্য কাজ করতে তৎপর। ইতিমধ্যেই বেশ কিছু এলাকায় সাফল্যও এসেছে তাদের। আর তাই তাদের আজকের কর্মস্থল মধ্যপ্রদেশের এই গ্রামটি, নাম দেবলপুর।
★★★★★
মেঝেতে পাতার চাদরটা গায়ে জড়িয়ে জড়সড় হয়ে বসল ফুলমতি। গা’টা শিরশির করছে তার। আকাশটা অনেকক্ষণ থেকেই অন্ধকার হয়ে আছে কিন্তু ফুলমতি জানে এটা সন্ধ্যার অন্ধকার নয়। এখন শেষ দুপুর কিংবা বড়জোর বিকেল হতে পারে কেননা আই খানিক আগেই এই ঝুপড়ির সামনে খাবার আর জল রেখে গেছে। অন্ধকারটা যত বাড়ছে ততই ঝুপড়ির পেছনে থাকা ঘন জঙ্গলটা থেকে হরেক রকম আওয়াজ ভেসে আসছে প্রতিমুহূর্তে। মাঝে মাঝে সে আওয়াজের তীব্রতা এতটাই ভয়ঙ্কর যে কেঁপে কেঁপে উঠছে ফুলমতি। তলপেটের চিনচিনে ব্যাথাটা আজও গেল না, আই অবশ্য বলেছিল অন্তত দিন তিনেক লাগবে ব্যাথাটা যেতে আর আজ তো সবে দু’দিন। এখনও একটা পুরো দিন সহ্য করতে হবে এই যন্ত্রনা। কিন্তু পেটের ব্যাথাটা চলে গেলেও অন্য যন্ত্রনাটা কি মিটবে আদৌ! আই তো বলেছে এবার থেকে প্রতি মাসে পাঁচদিন তাকে কাটাতে হবে এই গাঁওকোরে। এতদিন সে দেখতো আই, চাচী সবাই মাঝেমাঝেই যেন বাড়ির থেকে কোথায় চলে যেত কয়েকদিনের জন্য, সেই সময় খুব মন খারাপ করত ফুলমতির...