...

3 views

খোলা চিঠি 🌹

🌹খোলা চিঠি🌹
শ্রী রাজু গরাই ১৬ই ডিসেম্বর ২০২৩

শেষ হয়ে এল বেলা, দিন ঘণ্টায় ঘণ্টা মিনিটে মিনিট সেকেন্ডে বদলে যায়... কিন্তু, অসাধারণ মুহূর্ত আর আসে না...
এখনও অবুঝ সকালের মিঠে রোদ ফুল মুকুলে
যে দিন গেছে চলে ব্যথা পুরাতন বলে
শ্যামল তৃণে পা ফেলে পুনঃ চাহি নদীকূলে।
মাঝে মাঝে অপেক্ষায় থাকে বিমর্ষ বিকাল,
একদিন ঠিক আঁধার মুছবে ফুটন্ত সকাল!

অন্তরা, জানো কি তুমি! যে ছবি আঁকত মন, কল্পনার অনুভূতি লেপনে। সেখানে এখন দীর্ঘ বিরহের অভিমান নিত্য, বিন্দুমাত্র সন্দেহ প্রকাশ করে না; নিঃশব্দে বারি বর্ষণ করে ছলছল আঁখি আর নক্ষত্রলোকের ভেসে যাওয়া দৃশ্যে নিজেকে উপস্থিত করে বলে তোমরা কি বলতে পারবে --

ভোরের সান্নিধ্যে যে ফুল ফুটেছিল মুখ তুলে
রং কি বিধাতায় দিয়েছিল না নিজের ভুলে।
হৃদয় দিয়েছিল রোহিনীকে
জীবন তাই কি ফ্যাকাশে।
চাঁদ বুঝি শীতলতা ছড়ায় এখন
অতীত ইতিহাস আভাসে !

ধূসর পাংশুল মাঠের মতোই জগৎজুড়ে এখন বিরহ গভীর ভাবে ঝনঝন বাজে হিয়ার মাঝে। মনে পড়ে, বলেছিলাম..... দ্বারকেশ্বরের ভাঙা পাড় ডিঙিয়ে কচি দূর্বাঘাসের উপর কোমল পায়ে এগিয়ে যাওয়ার সময় দেখেছিলেম তোমার ছন্দে উত্তাল ঝড় আকাশ-পাতাল ভেদ করে আমায় ডুবিয়ে দিতে। সবুজ ক্যানভাসে যে ছবি আঁকত মন, সেখানেই চুরমার হয়ে যেত আমার পিছুটান। দেখতাম নানা রঙের প্রজাপতি ফুলে ফুলে উড়ে বেড়াচ্ছে আর ভ্রমর গুন গুন করছে মালতীলতায় দুলতে থাকা পুবালিবাতাসের ছন্দে, তারই একপাশ দিয়ে বইতে থাকা ঝর্ণাধারায় মনপবণ ভিজতে ভিজতে পৌষালী পূর্ণিমার জ্যোৎস্নায় সিঁড়ি বেয়ে নেমে এসেছে মর্ত্যে, যেখানে তোমার উপস্থিতি ক্ষণজন্মা'র মতো। রাঙিয়ে দিয়ে গেছে প্রতিটা মুহূর্ত।

কোন এক মেঠো গাঁয়ের কোলে সন্ধ্যা নামছে সোনালী ধানক্ষেত ছুঁয়ে, শীতল বাতাস কুয়াশা ছড়িয়ে দিচ্ছে কেটলি থেকে বেড়িয়ে আসা উষ্ণ ধোঁয়ার মতো করে চারিধারে, সন্ধ্যাধূপের সুবাস...
তখন ভেবেছিলাম ---
এই পৃথিবীর সব রঙে মিশে যাবো,
হবো একাকার।
অনুভূতির দেয়াল জুড়ে থাকবে না যন্ত্রনা
স্বাধীনতা দেবে অধিকার।

হৃদয়ের রঙে নিজেকে কেন মিলিয়ে নিলে না? কেনো আলতো ছোঁয়ায় ডানা ভিজিয়েছি বলতে পারলে না! মজে যাওয়া স্রোতহীন নদী ভেবে দূরে সরিয়ে দিলে।
এখনও স্পর্শকাতর হয়ে উঠি তুমি স্বপ্নে এলে, এগিয়ে যায় হাত বাড়িয়ে, হঠাৎ নিদ্রাভঙ্গ হলে শূন্যতায় বুকটা খাঁ খাঁ করে ওঠে। বেআইনি নোটিশ জারি করি অস্থির আকাশে। চোখ বন্ধ করে স্থির হয়ে বসি, পূর্বরাগের হৃদকম্পন অনুভব করতে করতে জেগে উঠি আবার। দেখি তুমি সেই আগুন, যা আমাকে একদিন পুড়িয়ে খাক করেছিলে জমাট বাঁধা রক্ত ধারায়।

সেদিন ফজরের নামাজ শেষে যখন রাস্তায় নেমেছিলে, নিস্তব্ধতা ভেঙেছিল হিমালয়ের বুকে, বরফের বৃষ্টি তখনও নিখোঁজ ছিল, হঠাৎই ডাগর চোখের সযতনে বাঁধা পড়ে আমার ছোট্ট পৃথিবী। শান্ত গগনে শতাব্দী প্রাচীন অবুঝ আমি বুঝেছিলাম তোমার ঠিকানায় আমার একমাত্র ঠিকানা যেখানে দলা পাকানো ঢেউ এলোমেলো বসন্তের সৌন্দর্যকে আরও সাহসী ও আকর্ষণীয় করে তুলেছে। হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের মউনা লোওয়া আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত কয়েকগুন বাড়িয়ে দিয়েছে, বাড়িয়ে দিয়েছে পূর্ণিমা নিশীথে জোয়ারের বেগ। সংকীর্ণ গণ্ডীরেখা ভেঙে তচনচ করে দিয়েছে নিখুঁত। প্রতিধ্বনি উঠে এসেছিল শুক্লপক্ষের নিভে যাওয়া স্রোতহীন অন্ধকার ভেঙে হঠাৎ প্লাবনে.....
দেখেছিলেম তোমার কোমল আখিঁ
দেখেছিলেম তোমার সোনালী স্বপ্নের সাধ
ঐ আকাশের নীলে ঐ হৃদয়ের বিলে
শোনিতের অনন্ত স্রোতে দুজনে ডুবেছি অবাধ।

দেবদারু বন সদাই কাঁপে বাতাসের বেগে, বুকে যেন তাঁর বাজে নুপুর। পাড়ি দিতে চাই সেও, আলগা রাতের আঁধার অরণ্য পেরিয়ে শুভ্র বরফের চাদর সরিয়ে, যেথা হিমকুঞ্চিত জরায়ু ছিঁড়ে ভোরের সোনালী আলো উষ্ণ অভ্যর্থনায় আলিঙ্গন করে। রাশি রাশি কাঠগোলাপের সৌন্দর্যে শব্দের আলপনায় যখন তুমি বিদ্রোহের সুরে বলে ওঠো ----

আমি তোমাকে ভালোবাসতে পারবো না
তুমি ভুলে যাও !
গোলাপ কি দিয়েছি কখনও ?
যে আমার দিকে হাত বাড়াও!
ব্যথা দিয়েছি সহেছো নীরব থেকে
দূরে থেকো, আর এসো না পিছু ডেকে ।।

বিষন্ন বিষম রাত মাথাকুটে একাকীত্বের অসহায় উত্তাপে, নেমে আসে অকাল বৃষ্টি। শীতের রাত শীতলতায় ভয়ানক জবুথবু তবুও একখণ্ড ভঙ্গুর স্বপ্নকে বুকে জড়িয়ে উত্তর খুঁজছিল অজান্তে গড়িয়ে পড়া অশ্রুর ঝিলিকে...।
হঠাৎই কালো মেঘের সীমান্তে চেনা একচিলতে রোদ্দুর আকাশময় এঁকে দিয়েছিল ঈষৎ স্বাধীনতা।
কতকাল বলতে পারো,
আর কতকাল কাটবে তোমা অপেক্ষায়!
হিমায়িত আবেগ মরছে মাথাকূটে
শরীর ধুঁকছে, মৃতপ্রায়।
যেভাবে যেখানেই থেকো, ভালো থেকো...
শুভেচ্ছা শততো।

ইতি তোমার একান্ত আপন
‌ রাজ
আপন নিবাস,
১৬ই ডিসেম্বর ২০২৩
রাত্রি - ৮টা ১০মিনিট
© কলমে...শ্রী রাজু গরাই
#writerRajuGarai #writer #RajuGarai #Love&love #letter #relationship #nature #Heart #antara