...

1 views

ব্যর্থ প্রেমিক
সেদিন ও বলেছিলে,"বিশ্বাস করো,আমি তোমায় তোমায় ছাড়া বাঁচবো না।" আমি বোকার মতো তোমার সেই কথা বিশ্বাস করেছিলাম। আমার বন্ধুরা বলেছিল,"এ ভাই ওই মেয়েটার জন্য নিজের জীবন বরবাদ করিস না।"আমি শুনিনি তাদের কথা,বলেছিলাম,"ও আমাকে ভালোবাসে,আমায় ছাড়া ও অন্য কোন পুরুষের দিকে চোখ তুলেও তাকায় না।এসব কথা আর আমায় বলিস না।"ওরা বুঝে গেছিলো সেদিন যে,আমাকে হাজার বোঝালেও আমি বুঝবো না।

আমার নাম রাজ।আর যাকে ভালোবেসে ছিলাম সে অঙ্কিতা।দীর্ঘ সাত বছরের ছিল প্রেম ছিল আমাদের। অবশ্য এখন বুঝি এই ভালোবাসায় কেবল আমি ছিলাম, তার কোন অনুভূতি ছিল না।একেবারে ছিলনা বলা ভুল।আমাদের প্রেমটা হয়েছিল,ইংলিশ কোচিনে।আমি সাধারণ পড়ুয়া ছিলাম। আর অঙ্কিতা পড়াশোনায় খুব ভাল ছিল।কোচিনের একটা অনুষ্ঠানে ওর নাচ দেখে আমি ওর প্রেমে পড়ি।আমি কবিতা আবৃত্তি করতাম।আমার আবৃত্তি শুনে ও নাকি আমার প্রেমে পড়েছিল। এক বন্ধুর মাধ্যমে সে খবর আমি পেয়েছিলাম। খুব আনন্দ হয়েছিল সেদিন। একদিন পড়তে গিয়ে ওর পাশে বসে ছিলাম। পড়বো কি ওর চুলের সুগন্ধে আমি ওর দিকেই তাঁকিয়ে ছিলাম।স্যারের চোখ এড়ালো না,মাকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন।খুব বকা দিয়েছিল মা।আমার সময় পাল্টে দিলেন স্যার,যাতে অঙ্কিতার সঙ্গে আমার দেখা না হয়।তাও রোজ দেখা হতো,স্কুল থেকে ফেরার পথে এক সঙ্গে হাত ধরাধরি করে অনেকটা রাস্তা এক সঙ্গে হেঁটে বাড়ি ফিরতাম।এরপর কলেজ।আমাদের একই কলেজ ছিল।কলেজেও চুটিয়ে প্রেম করতাম আমরা।কলেজের শেষের দিকে মনে মনে ঠিক করেছিলাম,কলেজ শেষ করেই চাকরি করতে হবে,না হলে অঙ্কিতাকে আর পাওয়া যাবে না।

যথা সময়ে কলেজ শেষ হয় আমি চাকরির ইন্টারভিউ দিতে থাকি।অঙ্কিতা ইংলিশ এ মাস্টার্স করছিলো।আমার একটু সন্দেহ হয়,ও আগের মতো আমি দেখা করতে না পারলে আর ঝগড়া করতো না।ওকে জিজ্ঞেস করলে বলতো,"তুমি যে কি বলোনা,তুমি ছাড়া আমার আর কে আছে?আসলে প্রচুর পড়ার চাপ আবার বাড়ি থেকে বলছে সম্বন্ধ দেখবে তাই আরকি একটু চিন্তা হয়।তুমি এখনো চাকরি পেলে না,পেলেই আমি বাড়িতে বলবো আমাদের সম্পর্কের কথা।" আমিও বুঝতাম,তাকে কি ফেজ্ করতে হচ্ছে।কথা না বাড়িয়ে উঠে পড়তাম।

এমন করে আরো কিছু বছর কাটলো,আমি চাকরি পেয়ে গেলাম। অঙ্কিতাকে জানালাম,শুনে ও খুশি হয়েছে বলে মনে হলো না।তখন সরাসরি জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে? ও দেখা করতে চাইলো।আমি গেলাম দেখা করতে।বললো,"সামনের সপ্তাহে আমার বিয়ে,আমার বাবার পছন্দের পাত্র। " এ কথা শুনে আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে।অনেক কথা বলতে ইচ্ছা করছিল,"আমি কি খেলার পুতুল তোমার, সন্দেহ তো আমার হয়েছিল,তোমায় জিজ্ঞেস করেও ছিলাম ,আমায় মিথ্যা কেন বললে।" এসব কিছুই বলতে পারিনি।"ভাল থেকো"বলে উঠে চলে এসেছিলাম। মনটা ভেঙে চুরমার হয়ে গেছিলো সেদিন। অনেক বার বন্ধুরা খবর নিয়েছিল সে সময়।একবছর পর অঙ্কিতার সঙ্গে দেখা হয়েছিল,আমায় জিজ্ঞেস করলো,"কেমন আছো? বিয়ে করেছো?"আমি মাথা নেড়ে জানাই সব ঠিক আছে।ওকে জিজ্ঞেস করি কেমন আছে?সে বলে,"অনেক খোঁজ খবর নিয়ে পরিবার বিয়ে দিলো,আমার বাবা প্রচুর খরচ করে বিয়ে দিয়েছিল। আমার শ্বশুর শাশুড়ির একটু এদিক থেকে ওদিক হলে গায়ে হাত দেয়,ঠিক করে খেতে দেয় না,প্রতি রাতে স্বামীর অত্যাচার এ আর সহ্য হয় না।"আরো কিছু কথা বলে ও বিদায় নিলে,মনে মনে ভাবি "ঈশ্বর আছেন।"মনটা খারাপ হয় একসময় ভালোবেসে ছিলাম যে।

✍️✍️✍️



© Indrani Palit Karmakar