...

2 views

বিমূর্ত স্বীকারোক্তি – 2
কাগজ ! পড়েছ একবারও? চুলের স্খলিত অন্ধকারে যেমন ঢাকা পড়ে যায় মেয়েটির লাল খোঁপাখানি, তেমনি ওখানে আমার অনাস্বাদিত লোহিত বিষাদগুলি কালো সুলেখা কালির একনিষ্ঠ অক্ষরমালায় যত্ন করে লুকিয়ে রাখা আছে, বিংশ শতকের দিনলিপির মতো করে। আমাদের অঙ্গগুলোর কোনোটাই উচ্ছিষ্ট নয়। তাই ওরা ঢাকা পড়ে আছে। কোনোটা হোঁচট খেলেও বাকিরা সেটার বহি:প্রকাশ ঘটাতে চায় না। কি হবে ঘটিয়ে? কাগজে যেটুকু ছাপা থাকে তা তো বিমর্ষ রূপ বিশেষ, ব্যাকরণের সমাসের মতন, যেখানে জল আর আকাশ বিলীন হয়ে পড়েনি। সবাই কি সেখানে লিখে রাখে সব? কেউ কেউ পারে। বাকি সমগ্র জগৎসংসারের কাছে এ এক অসম্পূর্ণ অধ্যায়। আর আমি বইয়াকরণ নই, যে নিজ গুণে ভাষার নতুন ব্যাখ্যা দিয়ে পাণিনি হতে বসার ঔদ্ধত্য দেখাবে। আমার সে যোগ্যতা নেই। আছে একজোড়া হাত। অস্থিসন্ধির সমাগ্রহ। অভুক্ত আমিখানি। এবং তাৎপর্যহীন বাক্যমন্ডলী; যারা নিজেদের, অর্থাৎ বাক্যের শ্রেণীবিভাগ সম্পর্কেই বিন্দুমাত্র ওয়াকিবহাল না। কারণ তারা নিজেরাও বোঝেনা : প্রশ্ন না আবেগ, কোনটা তাদের প্রকাশ? কাগজের কথায় সবসময় ভরসা করতে নেই। তবে সর্বজনীন মহোৎসবের চেয়ে সেগুলির গ্রহণযোগ্যতা বেশি। কারন তারা মুদ্রিত। বেরিয়ে এসেছে, যখন হয়তো চোখ ছলছল হয়ে তারাদের দিকে চেয়ে ছিল, বলে বোঝাতে চেয়েছিল অনেক কিছু। কিন্তু ব্যর্থ হয়েছে, তাই আবার তাদের পরিমার্জিত করে নিতে হয়েছে তোমার চোখে ধরা দেবার আগে। আসলে শিল্পীর মানসিক ব্যর্থতাই শিল্পের সফলতার কারণ, এ আমি বুঝেছি ঢের আগে। এই লেখার মধ্যে কি যে মাদকতা আছে, তাও আমি জানি, প্রত্যক্ষ করি। ওহে কালের কল্লোলিনী, তুমি কি আমার শব্দ পাও? তুমিই আমার শেষ আশ্রয়; যা কিনা এই সাত মহাদেশ কক্ষনো দিতে পারেনি। আমার লেখার প্রবাহের দিক নিয়ে গবেষণা বিশেষ করিনা বলেই লেখাগুলোর আধেক কেন্দ্রীভূত হয়না দেহে – পাঠকের মাইটোকন্ড্রিয়াগুলিও ঝিমিয়ে থাকে; নিস্তেজে নিমজ্জিত চরকির মতো ইতস্তত করে। পাঠক? পঠনে রত হতে পাথেয় হয়নি যে তারা! তাই আমি কুঁড়িই রয়ে গেলেম, পেলেম না কোনো আগ্রহ, অন্বয়। আর এটাই আমার অনাড়ম্বতার মূল। নদীর দুধারে যখন বৈচিফলের কূল দেখি – তখন মনে পড়ে অনেক কথা; মাথায় আসে – মাইল পেরিয়ে বৃদ্ধ স্রোতগুলি মিশে গেছে সাগরের নোনা জলে; আর আমিও হারিয়ে যেতে বসেছি বাংলার বুক থেকে। সে যাওয়াই যেন সার্থকতা, বাঞ্ছনীয় এবার !


© soumik299