...

2 views

"মৃত্যুর এক বছর পূর্তি"
-" দেখো,আমি বেশি ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বলবো না,কারণ ইশারা তুমি এমনিও বুঝতে পারো না ।
তোমাকে ভালো লাগে,কারণ তুমি সত্যিই ভালো , এর অনেক কারণ আছে,যা তোমায় এতটা আলাদা বানায় -
তোমার সেই মিষ্টি কথাগুলো,যা শুনলে আমি আমার দিনরাত কাটাতে পারি...
তোমার সেই মিষ্টি হাসি,যাকে দেখলে আমি আমার সব কষ্ট ভুলতে পারি....
তোমার সেই গভীর চোখ,যেখানে আমি অনায়াসে ডুবে যেতে পারি...
তোমার সেই আমার ওপর রাগ করা, এখন এই রাগ জিনিসটাও যে তোমার,তো ভালো তো হবেই...
তুমি জানো,না জানো,কিন্তু জানা উচিত, যে তোমার খুশিতে কেউ একজন খুশি,আর তোমার দুঃখে হয়ে সবচেয়ে বেশি দুখী......"

সত্যি এরকম কত চিঠি,কত গল্পঃ,কত কবিতা লিখেছিলাম সেই সময়....আজ ভাবলে হাসি ছাড়া আর কিছু পায় কি??
এইযে এখন ঝিল পারে বসে, হাতে এই চিঠি নিয়ে আপন মনে ভেবে চলেছি, সেই পুরোনো দিনের কথা,এটাও কি হাস্যকর নয় ??

জানি না আমি, আজ প্রায় দুবছর হয়ে গেছে,এইযে একলাই আসি এখানে,দুবছর আগে পর্যন্ত বন্ধুদের সাথে আসতাম,তারপর খালি ওর সাথে.....আর এখন...একলাই....

* * * * * *

[দু-বছর আগে]
আমরা তিন বন্ধু এখনো ঝিল পাড়ে বসে,বলতে গেলে বাকি দুজন একটু ওপরে বসে,কিন্তু আমি একলা একটু নিচে ঝিলের কাছে বসে আছি....
হঠাৎ পেছন থেকে ওরা ডাক দিল....আমি উঠে পড়লাম,আর এগিয়ে গেলাম ওদের দিকে,তবে যেতে যেতেই হঠাৎ থমকে গেলাম একজনকে দেখে....
মনে হলো এখন এই ঝিল পারে,যেন সময়টা হঠাৎ থমকে গেছে .......অথবা একটু বেশি যেন আস্তে চলছে....
সৌরভ বলে উঠলো -" কি রে, এখানে প্রকৃতিকে উপভোগ করার জায়গায় একজন তো অন্য কিছুই উপভোগ করছে..."
আমাকে উদ্দেশ্য করেই যে কথাটা বললো সৌরভ,সেটা বুঝতে অসুবিধা হয়নি। কারণ তারাও দেখেছে যে আমার চোখ কোথায় গিয়ে আটকেছে।
বললাম:
-"বেকার কথা ভাবিস না, হ্যাঁ মানে আমার চোখ আটকে গেছিলো,কিন্তু...."
-"আরে, এ তো সেই মেয়ে !!" - হঠাৎ প্রীতম বলে উঠলো।
-"মানে বলতে কি চাইছিস??"- সৌরভ জিজ্ঞেস করলো।
-"আরে আমি যতবার তথার মোবাইলে গ্যালারি খুলেছি,ওই মেয়েটার কোনো না কোনো ছবি পেয়েছি।"
কথাটা শোনা মাত্রই দুজন চেঁচিয়ে উঠলো:
-"আরে,সাব্বাস....এই না হলে ছেলে.... প্রেমের ফাঁদে পড়েছে....."

* * * * * * *

[বর্তমান সময়]
সত্যি সেদিন সবাই বুঝে গেছিলো,আমার মনে জায়গা সেই মেয়ে করে তো নিয়েছে। কিন্তু সমস্যা একটাই, তখনও আমি ঐই মেয়েটার সাথে কথা বলিনি একবারও।
কিন্তু সেটা নিয়ে কখনো চিন্তা করতে হয়নি।তার জন্য প্রীতম আর সৌরভ তো ছিলই,ঠিক খবর জোগাড় করে নেয়....আর সেই সাথে কথাও শুরু হয়.... তারপর ধীরে ধীরে এক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে সেই মেয়ের সাথে.....
তানিশা নাম তার...সত্যি এত সুন্দর মেয়ে....আগে খুব কমই দেখেছি,কিভাবে এতটা ভালো লেগে গেলো...জানি না....তবে এখন মনে হয়,তখন ওর সাথে এতটা মিশে,এত বেশি সময় কাটানো কি দরকার ছিল!!
* * * * * * *
[দেড় বছর আগে]
-"কি রে,এত চুপ আছিস কেন? এই যে তোকে এই ঝিল পাড়ে নিয়ে এসেছি, ভালো লাগছে না?"- তানিশা বলে উঠলো।
কিছু বললাম না আমি,শুধু তার দিকে তাকিয়ে রইলাম,আর হাসলাম.....
-"কি রে বলবি তো,হাসছিস কেন??" - তানিশা বলে উঠলো।
বললাম:
-"যে এরকম এক সুন্দর প্রকৃতির মাঝে,এক সুন্দর সঙ্গিনীর সাথে বসে,তার কাছে এই খারাপ লাগা জিনিসটা মানায়??"

তানিশার মুখ লাল হয়ে গেল,বললো:
-"এরম ভাবে বলার কোনো দরকার নেই,শুধু হ্যাঁ বা না বললে কি চলতো না??"
বললাম:
-" যেখানে,তোমার মত একজন সঙ্গিনী উপস্থিত,সেখানে শুধু হ্যাঁ বা না বলাটা আমার কাছে ক্ষতিকর নয়??"

-"কেন?? আমি তোমার কে হই,যে এরম ভাবে বলছো....."- তানিশা বললো।
সত্যি খুব বলার ইচ্ছা হলো,যে তুমি শুধু সঙ্গীই নও,আমার সব কিছু.....কিন্তু পারলাম না বলতে....জানি না কেন....
-"কি রে,উত্তর দে, তাকিয়ে আছিস এরম...."- তানিশা বললো।
-"সত্যি বলতে হ্যাঁ,তুই আমার খুব ভালো বন্ধু...."- কোনরকমে হেসে বললাম।
-"ঠিক বলেছিস,দিনের বেলা দূরবীন দিয়ে দেখলেও,আমার মত বন্ধু পাবি না...."- তানিশা হেসে বললো।

* * * * * * *

[বর্তমান সময়]
সত্যি কোনোদিন বলতে পারিনি,নিজের মনের কথা...আজ যে তানিশা আমার সাথে নেই, এর দোষ কিন্তু আমার । যদি বলে দিতে পারতাম,তাহলে গল্প হয়তো অন্যরকম হতো, তানিশাও হয়তো আমার সাথে থাকতো।

কিন্তু সত্যি কি তাই হতো!!! কারণ এই গল্পের নায়ক আমি হওয়ায় জীবনের সবচেয়ে প্রিয় মানুষকে হারিয়েছি.......

* * * * * * * *

[বছরখানিক আগে]
এই নিয়ে তিনবার কলিং বেলটা বাজালাম,তানিশা খুলছেই না দরজা......ব্যাপার কি ,বুঝতে পারছি না। ফোন করলাম ওকে,কিন্তু ফোনও ধরছে না.....ঠিক আছে কি ও?
হয়তো বাইরে কথাও গেছে... এখন নিজের বাড়ি ফেরা যাক ,সন্ধ্যে বেলা আবার আসা যাবে...

সন্ধ্যে নাগাদ আবার এলাম,কিন্তু একি অবস্থা...কোনো সাড়াশব্দ নেই.....সেই সময় এক মহিলাকে দেখলাম,যিনি তানিশার প্রতিবেশী....
বললাম:
-" আচ্ছা শুনছেন,একটা কথা ছিল....এই বাড়িতে যে থাকে মানে তানিশা,তার কোনো খবর জানেন?"
সেই মহিলা একটু ভাবলেন মনে হলো,তারপর বললেন:
-"জানি না বাবা,কাল রাত্রে তো ঢুকতে দেখেছিলাম বাড়িতে...তারপর আর দেখিনি...."
এই বলে সেই মহিলা চলে গেলেন....সত্যি খুব ভাববার বিষয়,কাল রাত্রে বাড়ি ঢুকেছিল,তারপর সে কোথাও বেরিয়েছে সেটা জানেন না সেই প্রতিবেশী....হয়তো তানিশা বাড়ির মধ্যেই আছে,কোনো খারাপ কিছু হয়নি তো.....
এসব ভাবতে ভাবতে মনে হলো, এ বাড়িতে আমায় ঢুকতেই হবে,তানিশার খবর জানতেই হবে। ছুটে গেলাম তানিশাদের পাড়ার ক্লাবে,সেখানে কয়েকজন লোককে ডেকে আনলাম....
দরজা ভাঙতে হবে,হয়তো তানিশার কিছু হয়েছে...মন বড় অস্থির হয়ে পড়ছে....
সবাই মিলে অনেক কষ্টে দরজা ভাগলাম....আর ভাঙ্গা মাত্রই ভেতর থেকে খুব হালকা কিন্তু একটা ভেপসা গন্ধ নাকে এলো।
ছুটে গেলাম আমি তানিশার ঘরের দিকে,আর গিয়েই যা দেখলাম,সেটা আশা করিনি....
ঘরে খাটের ওপর তানিশা শুয়ে...কোনরকম নড়াচড়া নেই,একই ভাবে পরে রয়েছে...ছুটে গিয়ে ওকে কোলে তুলে নিলাম,জানিনা কি করছি আমি,কিন্তু মন পুরো অস্থির হয়ে পড়েছে.....তবু ওকে কোলে করে বেরিয়ে এলাম,হসপিটাল নিয়ে যেতে হবে বলে.....কিন্তু নিয়ে যাওয়ার আগেই .....সেই পাড়ার লোকেদের মধ্যে একজন আমাকে দাঁড় করালো,বললো:
-" আমাকে দেখতে দাও,আমি একজন ডাক্তার....…"
এই বলে তানিশাকে ঘরে নিয়ে আবার খাটে শুইয়ে দিলাম। সেই ডাক্তার তানিশাকে চেক করে এক করুন দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালো......

* * * * * * * * *

[বর্তমান সময়]
চোখে জল চলে এলো,ঠিক আজকের দিনেই গতবছর তানিশা ছেড়ে চলে গেছিলো...সেই শেষ দেখা হয়েছিল তানিশার সাথে....তারপর ওর এই খবর তার মা-বাবা কে জানানোর পর,ওরাই সব কিছু সামলেছে,আমি যাইনি আর.......

সত্যি তানিশা,তোর আমাদের ছেড়ে চলে যাওয়ার কারণটা কি?....জানিনা তবে,এক তৃষ্ণার্থ ক্লান্ত পথিকও আজ যেন আমার চেয়ে ঢের গুণ বেশি সুখী...
তাই জীবনে একটা জিনিস আমি বুঝেছি,কাউকে জীবনে এতটা ভালোবাসাও উচিত নয়, যে তার অনুপস্থিতি তোমার কাছে সবচেয়ে বেশি কষ্টের কারণ হয়ে ওঠে.....
সত্যি বলতে এখন আমি সেই কষ্টের শিকার....আমি কি পারবো এই কষ্টের মোকাবিলা করতে?? নাকি,সামনে এই অতল জলে নিজেকে সোপে দিলেই মুক্তির পথে পারবো চলতে!!