...

4 views

একমাত্র তুই ( অন্তিম পর্ব )
মাতাল হওয়ায় চুল গুলো উড়ছে, চোখ বন্ধ হয়ে এসেছে তনির।সূর্যের লাল আভা এসে পরছে ওর মুখে। ভীষণ মোহময়ী লাগছে আজ ওকে।
হটাৎ একটা শক্ত হাত ওকে টেনে নিল। চমকে উঠল তনি। সামনে দাঁড়িয়ে অম্বর ওর অমু দা।
তনির কথা বেরোচ্ছে না মুখ থেকে,অমু ওর গালে হাত রাখল।তনি কিছু বলতে যাবে তার আগেই নিজের ঠোঁট মিশিয়ে দিল তনির ঠোঁটে। তনির গোটা শরীর যেন অবশ হয়ে গেল। মুহূর্তের মধ্যে অমুর শক্ত হাতটা তনির ঘাড়ে আর একটা হাত তনির কোমরে গিয়ে আকড়ে ধরল তনিকে। তনির হাতও অমুর বুকের ওপর পরেছে নিজের অজান্তেই।
কিছু করতে পারছে না ও,ওর সমস্ত অভিমান, রাগ সব যেন শুষে নিচ্ছে অমু।
কিছু ক্ষণ পর যখন অমু ওকে ছাড়ল,তখন তনির সারা পৃথিবীটা যেন বদলে গেছে, তাকাতে পারেনি আর কোনদিকে ছুটতে ছুটতে ঘরে চলে এল। এসেই দরজা লাগিয়ে দরজায় পিঠ ঠেকিয়ে,মেঝেতেই বসে পরলো। এদিকে অমুও বুঝতে পারছে না কি করে করে ফেললো ও।
তনির মনে এখন ঝড় বয়ে যাচ্ছে। কেন করল ও এরম, ও যদি ওকে ভালো না বাসত তাহলে কখনো এরম করতো না।তাহলে সেদিনের পার্টিতে যা হল সেটা কি?এর উত্তর একজনই দিতে পারে কিন্তু কি ভাবে প্রশ্ন গুলো করবে তনি?ওর এ মুহূর্তে অমুর সামনে যাবার শক্তি নেই। ফোন টা হাতে নিয়েও খুলতে পারল না, কি বলবে, যেমন ছিল তেমনি সুইচ অফ রেখেই আবার চুপচাপ বসে রইল মেঝেতে।
বেশ খানিকক্ষণ পর, দরজা খুলে বাইরে গেল তনি, এর মাঝে অনেক বার ডেকেছে ওর মা ওকে।মায়ের কাছে রান্না ঘরে গেল তনি।
তনির মা--কি রে কখন থেকে ডাকছি।
--হুম কিছু বলছিলে?
--অমু এসেছিল? তখন বোধয় বাগানে ছিলিস?দেখা হল তোর সাথে?
--হুমম , না তো।
--দেখা হয়নি, বললো যে তোর সাথে দেখা করে নেবে যায় হোক।অমু চাকরি পেয়েছে রে।
--কি?
--হ্যাঁ রে, ভালো চাকরি।পাশ করার আগেই কেমন চাকরি পেয়ে গেল বল।তোর সাথে দেখা হয়নি তো, তাই জানিস না।তোর ফোন টাও কি বন্ধ আছে? বলল তোকে ফোনে পাচ্ছে না।
যাকগে কাল ওদের বাড়িতে পুজো আছে। আমাদের তোর মামনি যেতে বলেছে,পুজো আছে ওদের বাড়িতে তুই সকালে চলে যাস।
--কেন?
--কেন কি?ও বাড়ি যাওয়ার জন্য তোর আবার কারণের দরকার নাকি।একটু সাহায্য করিস তোর মামনিকে।
--না মা কাল একটু কাজ আছে একবার রিয়া দের বাড়ি যাব।
মা বুঝলো নিশ্চয় অমুর সাথে ওর ঝগড়া হয়েছে,তারপর আবার এত বড় সুখবরটা ওর মুখ থেকেও শুনতে পেল না তারও অভিমান যোগ হয়েছে বোধয়। তাই ওর মন টাও খারাপ আর ওদের বাড়ি যেতে চাইছে না।
মা--পুজোর কাজে মানা করতে নেই তনি, বন্ধুর বাড়ি পরে চলে যাস, আর তোর মামনি কি সব কাজ একা করবে নাকি?তোর মামনি বারবার বলেছে।
খানিক ভেবে তনি বলল...
--আচ্ছা বেশ।
পরের দিন...
তনি পরের দিন স্নান করে একটা সাদা লাল চুড়িদার পরে ওদের বাড়ি গেল।পুজোর কাজে ওর মামনিকে হেল্প করছিল।
তনি আল্পনা দিচ্ছিল।অমু ওকে ইশারা করল ওর কাছে যেতে, তনি দেখা মাত্রই চোখ সরিয়ে নিল।সামনেই মামনি বসে ফল কাটছিল।
কোনো কাজ না হওয়ায় অমু কাছে এসে বলল,
--মা কোনো হেল্প লাগবে?
অমুর মা-- বাবা! তুই হেল্প করবি?
--হ্যাঁ,দেখ স্নান করে নিয়েছি।
--হ্যাঁ সেতো দেখতেই পাচ্ছি।অন্য দিনতো বলে বলে স্নান করাতে হয়।যাই হোক আপাতত কাজ বাড়াবাড় মত কাজ নেই।তাই তুমি এখন এখান থেকে যাও।অমু
তনির দিকে তাকিয়ে দেখল মামনির কথায় হাসি ফুটে উঠেছে তার ঠোঁটে।
--কি আমি কাজ বাড়ায়?ঠিক আছে চলে যাচ্ছি।শুধু এক কাপ চা আমার ঘরে পাঠিয়ে দাও।
--নবাব পুত্র একেবারে। তনি যা তো চা টা দিয়ে আয় ওর ঘরে।সিঁড়ি দিয়ে ওঠার সময় শুনতে পেল অমু।মাও জানে কেন ওর চায়ের দরকার, কেন তনির মন খারাপ।তিনিও চান সমস্ত মনোমালিন্য মিটে যাক, দু দিনে মেয়েটা বড্ড চুপচাপ হয়ে গেছে। কিন্তু যার জন্য অমু চায়ের বাহানায় দরজার দিকে চেয়ে বসে আছে তার মনে ঢেউয়ের উথাল পাথাল। সেও সামনে যেতে চায় তার, কিন্তু একটা লজ্জা ভয় আর না জানা কিছু অনুভূতি মিলে ওর পা বেঁধে ফেলেছে। নিজের হাতে চা বানিয়েও যেতে পারল না।কাজের মাসিকে দিয়ে চা পাঠিয়ে দিল।দরজার বাইরে পায়ের আওয়াজ পেতেই উঠে বসল অমু,তারপর দেখল মালতী মাসি...
--একি তুমি!
--হ্যাঁ, তনি দিদি চা পাঠাল তোমার জন্য।
--রেখে দিয়ে যাও ,রেগে বলল অমু।
অমু আরো দু একবার করল চেষ্টা,কিন্তু কোনো লাভ হল না।
একটু পরে পুজো শুরু হল। পুজো শেষ হলে পাড়ার সবাই চলে গেলে।শুধু তনিরা থেকে গেল, ওদের দুপুরে ওবাড়িতেই খাবার কথা। তনি, মামনি আর তনির মা তখন রান্না ঘরে।সে সময় অমু ওর মাকে বাইরে থেকে বলল মা আমি একটু বাইরে যাচ্ছি,
--বাবু প্রসাদ খেয়ে যা...
--আমার ঘরে রেখে দিও এক্ষুনি আসছি, এসে খেয়ে নেব,বলতে বলতে গেট খুলল।
একটু পরে অমুর মা বলল...
--এই ছেলেটাকে নিয়ে আর পারিনা। অমু প্রসাদ নেয়নি,ওর ঘরে রেখে আয় তো মা।
তনি --আমি?
তনির মা--হ্যা, নয়ত কি আমরা সিঁড়ি ভেঙে যাব নাকি, মালতী দি ও চলে গেছে।
অগত্যা তনিকে যেতে হল।প্রসাদ নিয়ে টেবিলের ওপর রাখল,চোখ ফিরিয়ে দেখল ঘরটাকে। কতদিন পর ঢুকল ওই ঘরটাতে তনি। প্রসাদের বাটিটার ওপর প্লেট টা ভাল করে চাপা দিয়ে পেছন ফিরতেই কারুর পায়ে পা লেগে হোঁচট খেয়ে পরে যাচ্ছিল, আর তখনই দুটো শক্ত বাহু ধরে ফেলল ওকে।ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলেছিল।
চোখ খুলেই দেখতে পেল সেই চির পরিচিত মুখটা।দু হাত দিয়ে তনিকে ধরে আছে।তনির বুকের ভেতর  যেন একসাথে একশ টা ড্রাম বাজছে
--কি ভেবেছিলি আমার কাছ থেকে পালাতে পারবি?
-- তুমি!
--হুম, তোকে কাছে পাবার জন্য নিজের ঘরেই লুকিয়ে ছিলাম।
--কি?ক ক কেন...
--এত ভয় পাচ্ছিস কেন বলত ?আমি বাঘ না ভালুক?যে তোকে খেয়ে ফেলব
--ন না ভয় কেন পাব!
--তাহলে আমার কাছে আছিলিস না কেন?তনির চুলে আঙ্গুল বোলাতে বোলাতে বলল অমু।
এর উত্তরে কি বলবে তনির জানা নেই, চুপচাপ একটু সরে দাঁড়াল।
অমু-- আচ্ছা ঠিক আছে সরি, তোর পারমিশন ছাড়া কাল ওভাবে...
--আমি এখন আসি... বলেই একটা আলতো ধাক্কা দিয়ে পালাতে গেল তনি, পেছন থেকে ওর হাতটা ধরে ফেলল অমু, তারপর টেনে পেছন দিক থেকে জড়িয়ে ধরল,ওর মুখটা তনির কাঁধে রাখল।
তনির সমস্ত শক্তি যেন শেষ হয়ে গেছে....এক বাঁধনে বাঁধা পরে গেছে ও।
--আমার কাছে আসতে,আমার কাছে থাকতে,একটুও ইচ্ছে করে না,না তোর?আর কত শাস্তি দিবি আমায়? আমার কি দোষ বল ,আমি শুধু কথা বলতেই গিয়েছিলাম। সবকিছুর জন্য সরি বলতে গিয়েছিলাম।আমি সত্যিই ভাবিনি ওরম কিছু করে বসব। তোকে এত মায়াবী লাগছিল। আমি কিরম যেন একটা ঘোরে ছিলাম,সারা জীবন যাকে ভালোবেসেছি তাকে ওভাবে দেখে নিজেকে সামলানো কতটা মুশকিল হয়ে পরেছিল তোকে বোঝানো সম্ভব নয়।
এবার অমুর দিকে ঘুরে তাকাল তনি, কি বললে তুমি, তুমি আমায়...
--ভালোবাসি। এ কথাটা তোকে বলে বোঝাতে হবে বুঝি? তুই বুঝতে পারিস না।
অমুর চোখের দিকে তাকিয়ে আছে তনি।
রেগে আছিস না?জানি সেদিন ওভাবে তোকে ছেড়ে চলে আসাটা এক্কেবারে উচিৎ হয়নি কিন্তু তা বলে এখনও রাগ করে থাকবি।এক্সপ্লেইন করার সুযোগ ও দিবি না?
উত্তেজনায় সরাসরি প্রশ্ন করে বসল তনি,
--তাহলে পৌলমি দিকে তুমি ভালোবাস না?
--কিইই?পৌলমিকে?কি বলছিস তনি, তোকে কেউ কিছু বলেছে?
--ওই দিন পার্টিতে কারা যেন বলছিল...
--শোন তনি, পল আমার খুব ভালো বন্ধু। ও কারুর সাথে খুব একটা মেশে না।শুধু আমার সাথেই যা মেশে তাই সবাই আমাদের নিয়ে কথাও বলে, কিন্তু আমি পরোয়া করি না।আমার মনে হয়েছিল একবার, কেউ যদি তোর সামনে আমাদের নিয়ে কিছু বলে, কিন্তু আমি ভাবিনি তুই কারুর কথায় বিশ্বাস করে এরম ভেবে বসবি।
--কিন্তু পৌলমি দি যে কাকে বলছিল তুমি ওর বয়ফ্রেন্ড?
--ও তুই সেটাও শুনেছিস?ঠিকই শুনেছিস।ওই পার্টিতে ওর এক্স বয়ফ্রেন্ড ও ছিল, ওর কারেন্ট গার্ল ফ্রেন্ড এর সাথে। ওকে দেখানোর জন্যই তো এত কিছু।জানিস মেয়েটা খুব ভাল। ছোট বেলা থেকে অনেক কষ্ট পেয়েছে,ওর বয়ফ্রেন্ড ওকে ইউস করে ছুড়ে ফেলে দিয়েছে তাই তো অত নাটক।ওকে ও দেখাতে চাই যে ও একা নেই, ওকে ছাড়া ও ভাল আছে।সেদিন ওর এক্স এর সাথে আমাকে ওর বয়ফ্রেন্ড বলে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল, আমার সাথে ডান্স ও করেছে ওকে দেখিয়ে... হয়ত তুই তখন আমায় দেখেছিস।আমি ওকে অনেক বার বারণ করেছিলাম ও শোনেনি। কতবার বললাম কত বোঝালাম, কিন্তু পাগল মেয়েটা কান্না কাটি শুরু করল।ভীষণ কষ্ট পেয়েছে মেয়েটা জানিস, তাই খুব মায়া হচ্ছিল তাই করলাম নাটক ওর সাথে, নাহলে যে কি করে বসত।তারপর ওইসব কিছু হওয়ার পর সেদিন তোকে খুঁজতে গিয়ে পেলাম না, এসে দেখি ও ড্রিংক করেই যাচ্ছে।তারপর সবটা তুই জানিস। সেদিন তোর জন্য একটা সারপ্রাইজ প্লান করেছিলাম, কিন্তু ওই ইডিয়ট টা এমন কান্ড করে বসল!ওকে কি করে ওই অবস্থায় একা ছেড়ে দিতাম বল। তবে কি জানিস আর বোধয় ওকেও একা থাকতে হবে না,মিথ্যে নাটক করতে হবে না। ট্যুরে গিয়ে মনে হল খুব তাড়াতাড়ি ওর জীবনেও কেউ আসতে চলেছে।সে গল্প নাহয় পরে বলব, আগে তুই বলত,তুই কি সব ভাবছিলি?কি করে ভাবতে পারলি?
--কেন ভাবব না। পার্টিতে অত কিছু হওয়ার পর কি করে ভাবব যে....তুমি কি আমায় কিছু বলেছ কোনোদিন।
--এখন তো বলছি।তনির দুগালে নিজের দু হাত রেখে অমু বলল....
তনি আমি ছোটবেলা থেকে শুধু তোকেই ভালোবেসে এসেছি।আমার জীবনে একমাত্র তুইই ছিলি, তুইই আছিস,তুইই থাকবি।আমার ওপর একমাত্র তোর অধিকার বুঝেছিস পাগলি।
লজ্জায় গাল গুলো লাল হয়ে গেছে তনির।চোখের কোনায় জল চিকচিক করছে।
অমু--কি রে কিছু বলবি না।
--......
--কি হল বল
--কি বলব?
--এর উত্তরে যা বলা উচিৎ।
--জানিনা
--জানিস না! তাহলে তো আজ ছাড়াও পাবি না।বলেই ওর আরো কাছে টেনে নিল অমু তনিকে,জড়িয়ে ধরল বুকের মাঝে।
--এই এই কি করছ?প্লিজ যেতে দাও... মামনি ডাকছে...
--আপাতত মামনির ছেলের কাছে তুমি বন্দি শোনা।তাড়াতাড়ি ওই তিনটে ম্যাজিকাল ওয়ার্ড বলে ফেল নাহলে ছাড়া তো পাবিই না, শাস্তি আরো বেরে যাবে।
--আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে বলছি।একটু ছাড়।তারপর বলছি।
--আচ্ছা নে ছাড়লাম এবার বল।
তনি দু পা পিছিয়ে এল,
--পেছচ্ছিস কেন?
--তুমি ওখানেই দাঁড়াও, আর চোখ বন্ধ কর নাহলে আমি বলতে পারব না।
--উফফ ঠিক আছে, সুযোগ পেয়েছিস তো করিয়েনে, নে চোখ বুজলাম এবার বল।
--তুমি একটা পাগল।
বলেই ছুটে গেল,কিন্তু দরজার কাছে আসতেই দেখল ছিটকিনি আগেই লাগিয়ে দিয়েছে অমু।দরজায় আটকে ফেলল অমু ওকে একে বারে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে দুজন।
--বেশ তাহলে আমার পাগলামো দেখ।ঠোঁটটা তনির কাছে আনতেই চোখ বন্ধ করে এক নিঃশ্বাসে বলে ফেলল তনি... I LOVE YOU. কিন্তু শেষ রক্ষা হল না কথাটা শেষ হতেই অমু নিজের ঠোঁট দিয়ে ওর দুটো ঠোঁটকে আবদ্ধ করে ফেলল।সমস্ত ভালোবাসা ঢেলে দিল ওর মধ্যে।
নীচে তখন তনির আর অমুর মায়ের মধ্যে কথা হচ্ছে.... বিয়েটা নাহয় তনির graduation compleat হওয়ার পরই হবে।

----------------------------------সমাপ্ত -----------------------
© All Rights Reserved