...

1 views

মা উপাখ্যান ❤️🌸
(১)

পাহাড়ের কঠিন হৃদয়ে মাতৃত্বের কোমল গদি হয়ে আছো তুমি,কখনো বা নয়নতারা হয়ে ফুটে আছো চোখে,

আবার কখনো দেবী অন্নপূর্ণার মতো দু-হাত তুলে আশীর্বাদ করছো আমায়।

তোমার আঁচলেই আমার সূর্যোদয়, তোমার আঁচলেই আমার সূর্যাস্ত।

জীবনের বাঁকা পথে তোমার সাথে দেখা।

আর আজ আমার পাঁজরে পাঁজরে তোমার অস্তিত্ব বয়ে চলেছে নদীর মতো।

আমার প্রাণের শিকড়ের সাথে তোমার অস্তিত্ব ওতোপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে।

এই জীবনের প্রত্যেকটা জ্যামিতিতে এক তীব্র ব্যক্তিত্বের গন্ধ,

যার নাম ' মামনি '।

এই জীবনের প্রত্যেকটা আনন্দে এক দীর্ঘ জারদৌসির নকশা দেখেছি যার নাম ' মামনি '।

                                        (২)

ব্যর্থতার অশ্রু,ভয়ের ফ্যাকাশে অবয়ব,যন্ত্রণার ড‍্যালা,লড়াইয়ের শক্ত মাটি-

এতকিছুর মাঝখানে একমাত্র তুমিই আমার বেঁচে থাকার কারণ।

আমার রক্তে মজ্জায় প্রবাহিত আপনজন তুমিই ' মামনি '।

তুমিই আমার লাল,নীল,হলুদ,সবুজ রামধনু টিপ,মা মা সুর,গন্ধ,আঁচল....

আর,জলের মতো জীবনও....

ওতে ডুবে গেলে যেন ঈশ্বর....

যে তাঁতের সুতোয় জড়িয়েছ নাড়ির মতো,

আলো,বাতাস,জলকে একসাথে মিশিয়ে সমস্ত অন্ধকার মুছেছ আমার জীবন থেকে,

সেই তাঁতের সুতোই আমার প্রাণভোমরা,আমার শিরা-উপশিরায় প্রবাহিত হিমোগ্লোবিন।

জন্মদাত্রী মা না হলেও তার মতোই জুড়ে আছো তুমি রক্তে,অস্তিত্বে,জীবনে এবং মস্তিষ্কের ' স্মৃতি ' নামক অ্যালবামে।

                                     (৩)

খানিকটা যশোদার মতোন স্নেহে,মায়া,মমতায় তোমার জুড়ি মেলা ভার....

চোখের পাতায় একখানা গোটা পৃথিবী এঁকেছি তোমার নামে;

যেই মিষ্টি গড়নে রোজ প্রজাপতিরা এসে বসে,

আর বলে-

" এমন মাতৃত্বের গঠন যাঁর, তাঁর পঞ্চইন্দ্রিয়ে নেহাৎ আঁখের গুড় ঠাসা "।

নইলে এমন আলতো স্বরে কেউ ডাকতে পারে ?

এক এক সময় সমস্ত শ্রবণক্ষমতাটুকু দিয়ে শুনতে ইচ্ছে করে ওই ডাকের প্রতিটা স্পন্দন,শব্দ,প্রতিভা....

যেন কোনো মা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ কোনো স্বরলিপি বুনে যাচ্ছে তার মেয়ের জন্য।

                                   

          মেহগনি গুণে পরিপূর্ণ কোনো মাতৃসত্বা ;

          ভোরের শিরাপ ;

          সাঁঝের জ্যোৎস্না ;

           কাগজ ফুল ;

           আশার চিনামাটি ;

            পানিফল -

             সব তুমি।

            আর; এক সহস্র বছর ধরে-

             চোখের আয়নায়-

              বটের ঝুড়ির মতো ঝুলে থাকা স্বপ্নও তুমি।

(৪)
ক্যালেন্ডারের প্রত্যেকটা তারিখেও বসে থাকো তুমি,আবার 

অবচেতনেও পদ্মের মতো ফুটে থাকো,শাড়ির আঁচলে অমন আতরের গন্ধ,

যেন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ কোনো ডিটারজেন্ট দিয়ে ধোয়া,নাকি তীক্ষ্ণ কোনো স্নেহের গন্ধ ??

কি জানি !!

' মা ' শব্দের বিস্তার কতটা জানিনা,তবে শব্দটার প্রত্যেকটা কোশ যেন যষ্টি মধুতে পরিপূর্ণ,যার রূপ,বর্ণ, গন্ধ যেন অলীক কোনো আবিষ্কার এবং খোঁজ।

স্বচ্ছ প্রতিমার মতো রক্ত,মাংসে গড়া তুমি,

কখনো বেনারসি,কখনো তাঁত, আবার কখনো জামদানিতে

ইলোরার ভাস্কর্যের মতো নিখুঁত একপিঠ চুল,ধানের দুল, আর; মাতৃত্বের চন্দন মেখে দাঁড়িয়ে থাকো আমার সামনে....

আমি দেখতে পাই.....

রোজ....

হয়তো খানিকটা মেঘ জমে আকাশে,কখনো বা অঝোরধারায় বৃষ্টি নামে....

বাস্তবের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে তোমার আমার দূরত্ব বুনতে গিয়ে কেঁদে ফেলি....

ভাবি, আর কতদূর গেলে তোমার আঁচল অব্দি পৌঁছতে পারব...

সেই পবিত্ৰ আঁচল, যার ওপর এক ঐশ্বরিক আবরণ তুলি দিয়ে এঁকে গেছে নক্ষত্রেরা....

যেখানে দুঃখেরা কমতে কমতে দশমিক বিন্দুর মতো...

পড়ে থাকে শুধু আনন্দের মৌচাক....

                                 ( ৫ )

কখনো কখনো কামানের রুষ্ট অভিমুখে বর্ষার জলেরা তোমার নামের জ্যোৎস্না মেখে বসে থাকে।

ধ্বংস জাগাতে দেয় না,

ছড়িয়ে দেয় মাটি,

ছড়িয়ে দেয় সার,

আর তা থেকেই লতিয়ে ওঠে সৃষ্টির ফুল,

মরচে ধরা লোহার গায়েও জড়িয়ে যায় ধর্মফুলের তোড়া,

গড়ে ওঠে এক সুন্দর পৃথিবী।

সুনীল আসমান,মায়া জঙ্গল আর স্নিগ্ধ নদীতে ভরে ওঠে মনের উঠোন, 

তৈরি হয় এককোটি চরিত্রের বেঁচে থাকার আবহাওয়া...

তাদের বুকভরা নিঃশ্বাস জোগায় সেই পবিত্র নাম,যাঁর মাতৃত্বের ছায়ায় একইভাবে বেড়ে উঠেছি আমি....

আদ‍্যাশক্তির মতো বিস্তীর্ণ তুমি.....

অথবা,কোনো মন্দিরের কলিজায় থাকা ভক্তি.....

                       

             

               মাটির ঘরে আঁকা আলপনা তুমি;

               তুলসীতলায় জ্বালা কোনো প্রদীপের সলতে তুমি;

               এই পৃথিবীর বাসী মেরুতে লেগে থাকা বিশুদ্ধ চাঁদ   

               তুমি;

               অন্ধকারে জেগে থাকা হাজার সূর্য তুমি;

               তোমার মুখের হাসি দেখে হই যে নদী পার;

                নৌকা বলে - এমন রূপসী স্নেহের মুখ দেখিনি কভু

                 আর।

( ৬)

তুমি আমার আন্তর্জাতিক সম্পদ ; যাঁকে ইটের মাধ্যমে সাজিয়ে তিল তিল করে গড়ে তুলেছি জীবনের প্রবাহের ওপর....

যেন একটা বাড়ি.....

আর একসমুদ্র শ্রদ্ধা টুথপেস্টের ফেনার মতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে...

যেখানে মা,মেয়ের আত্মার সাথে পারস্পরিক, মজ্জাগত....

এককথায়, আপন....

বড্ড আপন কেউ....

একেবারে গলার কাছের কোনো অক্ষর...

নাকের গভীর কোনো শ্বাস....

বিশ্বাস....

             

                        ( ৭)

এখন মাটির পুতুল হয়ে দাঁড়িয়ে আছি বাস্তবের পাহাড়ে।

নির্ভরশীলতার পাউডার দিয়ে নিকোনো এই আত্মা একদিন ঠিক স্বাধীন কোনো পায়রার মতো ডানা বাঁধবে রঙিন সুতোয়,উড়ে যাবে কোনো ব্যক্তিত্বের রামধনুতে...

আর,তোমায় উপহার দেবে আসমানের সবচেয়ে দামি নক্ষত্রটা..

অথবা,টয়ট্রেনে করে নিয়ে যাবে কোনো প্রাকৃতিক জুয়েলার্সে,যেখানে সারি সারি সবুজ উদ্ভিদের মেলা,ভগবতীর দিব্যদেহে সবুজ ঘাসের তৃপ্তি,আর,তালগাছের গন্ধে অন্ধ চাঁদ জ্যোৎস্না মুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকে...

ওরা জানে, ঠিক কাকে নিয়ে এসেছি ওদের কাছে...

ওরা জানে,তুমি আমার সাত জন্মের মাতৃনন্দিনী,ঝাউয়ের মুকুট পরিয়ে তোমায় রোজ পুজো করি...

ওরা জানে...

মামনির আঁচল..

যেখানে পোস্ত এর দানার মতো নেশা,আসক্তি...

আর নরম তুলোর মতো প্রীতি ...

                        (৮)

কোনো প্ল্যাটিনাম ভোরে জাগা মাছরাঙা তুমি ;

যাঁর আকন্ঠ মাতৃসুধা ;

অথবা;আসমুদ্রহিমাচলবিস্তৃত স্নেহের তরল...

মন্ত্র,উপদেশ ও প্রীতির উৎসও তুমি..

এককথায়;অঙ্গপ্রত্যঙ্গে বয়ে চলা জীবন তুমি মামনি।

তারাকাঠির মতো আলোর সৃজন হয় তুমি থাকলে।

মাটিগুলোও ছড়িয়ে যায় আসমানে;

রামধনুর শিরায় শিরায়..

কাজললতার টিপ পরে থাকে পৃথিবী।

(৯)

তোমার জন্য এক একটা বজ্রপাতও ক্ষুধার্তের মতো গিলতে পারি;

আবার,হিম হয়ে জমেও থাকতে পারি সুমেরুতে।

তোমার স্নেহের সংস্পর্শে এলে আমার মনের পাহাড়ে দাঁড় করানো সব কামান বর্ষার জলে ভিজে যায়;

আর,অ, আ, ক,খ বলতে বলতে কচিকলাপাতা শিশুর মতো ঘুমিয়ে পরে...

প্রতিশ্রুতি দেয়,সুপ্ত আগ্নেয়গিরির মতো আর কোনোদিনও জাগবেনা,

স্বীকার করে,

অমন নরম আঁচলের খুঁটি ধরে নৃশংস হওয়া যায় না;

বাঁধতে হয় প্রীতিখড়ের বিড়ি..

এভাবেই , একে একে...

লালচে কানকোর মতো লোহিত সাগরে জমা অধর্মের পারদ গলিয়ে ফেলতে হয়..

বুনে নিতে হয় সারল্য এর উল...

ঠিক তোমার মতো পবিত্র,নিষ্পাপ এক প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠবে ওই উলের গ্রন্থিতে।

                        (১০)

গাঁদা ফুলের কোরকে জমা কথাগুলো-

 বলেছিলাম তোমাকে।

আর তুমি মাতৃত্বের মতো প্রস্ফুটিত হয়েছিলে-

আমার কপালের চন্দ্রবিন্দুতে।

জীবনের তিক্ত শিরাপ যখনই উথলে উঠেছে-

তখনই নক্ষত্রের মতো স্নিগ্ধ স্নেহে ভরিয়েছ আমার মনের জামদানি।

পর্বতশৃঙ্গের চূড়ায় তোমার নাম লেখা।

ওখানে-

বটের ছায়া;

ওখানে-

কচি হামি।

জানো ?

বেতের ঝুড়িতে করে রোজ তোমার দায়িত্ব নেওয়ার স্বপ্ন তুলি।

শেষ বয়স অব্দি কেউ না থাকুক-

আমি থাকবো।

তোমার দেহের বয়স্ক কোশ থেকে নির্গত-

পেচ্ছাবে;

মলে;

এবং,তোমার ক্লান্ত মনের কোটরে-

আনারসের কোয়া হয়ে।

(১১)

মাঝে মাঝে মনে হয়,রূপকথার পরী হয়ে সোনার কাঠি ছুঁইয়ে দিই তোমার দুঃখগুলোয়,

আর,মুহূর্তেই ওরা পরিণত হোক সুখে;

মৌরি ফুলের মতো ফুটে থাকুক সৌভাগ্য।

বিশ্বাস করো,আপ্রাণ চেষ্টা করি তোমায় ভালো রাখতে..

কতটা পারি জানিনা..

জানো তো মামনি ?

তোমার চোখের শক্তিশেলে এক অদ্ভুত চৌম্বকীয় তরঙ্গ কাজ করে ...

যা আমায় প্রত্যেক মুহূর্তে মায়ার মতো টানে..

আর বলে-

আয় আমার আঁচলে জড়িয়ে নিই মাধবীলতার লতানো জরায়ুতে সুপ্ত কোনো শিশুর মতো।

এই আন্তরিক টান আমায় কতদূর নিয়ে যাবে জানিনা..

তবে,প্রাণের শুরুর গোড়া থেকে অন্তিম শিকড় অব্দি তুমি জড়িয়ে আছো মামনি..

হৃদয়ের গভীর কোনো ক্ষয়প্রাপ্ত গ্রন্থি তোমার নামে আনকোরা হয়ে ওঠে।কখনো কখনো এমন পবিত্র নাম শুনে অন্ধকারও নত হয়ে যায়।

   

                     (১২)

রামধনু তোমায় বেগুনী, নীল,আসমানী,সবুজ,হলুদ ইত্যাদি যাবতীয় মাতৃত্বের রং দিয়েছে।

শিলনোড়ায় শুকতারা বেঁটে দিয়েছে।

প্রিজমে ওই রঙের ,ওই ঔজ্জ্বল্যের প্রতিফলন..

মায়া,মমতা,স্নেহ,প্রীতি আর ত্যাগের কণা ওই রঙের ভেতর..

খড়, মাটি,প্রতিমা কিংবা পেন্সিল, তুলি,ছবির ভেতর আন্দোলিত জীবন তুমি।

শুধু কথা দিয়ে তোমায় বর্ণনা করা যায় না,তোমায় বর্ণনা করতে হলে উপন্যাসের গভীরতায় হেঁটে যেতে হয়..

জানতে হয় তার বৈশিষ্ট্য, ভূমিকা এবং সারসংক্ষেপ..

পিয়ানোর তারে ছন্দ হয়ে ঘুরে বেড়াতে হয় মনের আনন্দে..

কখনো কখনো আবার তোমায় হিজল ফুলে সাজিয়ে আরাধনা করতে হয়...

তবেই তোমার স্মরণাপন্ন হওয়া যায়।

                (১৩)

যদি কখনো নক্ষত্রের গতিবিধি মেনে তোমায় চুল বেঁধে দিই,

টিপ পরিয়ে দিই,

নেবে তো সেই পরম যত্ন ?

আশীর্বাদ কুড়োতে দেবে তো আমায় মামনি ?

বাতাসের গ্রন্থিতে গ্রন্থিতে যে অনু,পরমাণুর শৃঙ্খল,তাতেও তোমার নামের কোনো অক্ষর গাঁথা।

কী ভীষণ সুন্দর তোমার শাড়ির ওই ঘাসসবুজ পাড় !! 

কত রাশি রাশি নক্ষত্র সেখানে ঘূর্ণনের আবর্তের মতো !!

কত রাশি রাশি ফুলের কুঁড়ি সেখানে বিস্তৃত হয়ে ফোটে !!

(১৪)

কোনো এক হৈমন্তী গ্রীষ্মের আর্দ্র ময়েশ্চার তুমি;

অথবা,কোনো চৈতন্য বায়ু,যা পান করলে সুস্থ হয় মনের কোশ।

মামনি মানে মিষ্টি কাঠের গন্ধ আমার নাকে;

মামনি মানে কোনো উজ্জ্বল আধ্যাত্মিক থান আমার আত্মায়;

মামনি মানে অভাবী মনে আতপচালের ভাত;

মামনি মানে পৃথিবী শ্রেষ্ঠ কোনো উপনিষদের উৎস;

মামনি মানে ধুমকেতুর মতো ছুটে আসা কোনো ঈশ্বর।

                 (১৫)

তাঁর হাতে বানানো এক একটা খাবার যেন কোনো অলীক রান্নাঘরে রাঁধা..

পবিত্র ঠাকুরঘরে যেমন দেবী অধিষ্ঠিত থাকেন,ঠিক তেমনই তুমিও..

যাঁর ধার্মিক জল মাটিতে পরলেই গড়ে ওঠে এক একটা মহাপীঠ..

স্নেহ,প্রীতি সমেত এক একটা শাখাপ্রশাখা,মূল আর কান্ড..

* সমাপ্ত *

@Suja9946 মামনি তোমার জন্য ❤️🌸