...

1 views

অঞ্জনা ভৌমিক
ছোটবেলা থেকেই অঞ্জনা ভৌমিকের ওপর আমার দারুণ মুগ্ধতা! উঠতি কৈশোরে এমনটাও মনে হত যে, গারল্ ফ্রেনড্ বা বউ হলে যেন অঞ্জনা ভৌমিকের মতনই হয়! এখনও তাঁর ছবি দেখলেই সে কথা মনে পড়ে–মুখে একটু স্মিত হাসিও চলে আসে।

খুব বেশি ছবি করেননি তিনি, কিন্তু উত্তম কুমারের সঙ্গে তাঁকেই আমার সবচে’ ভাল্লাগতো! এখনও লাগে! যদিও সৌমিত্রর সঙ্গেও একটা সফল ছবি করেছেন তিনি, তবুও তিনি আমাদের কাছে আজও যেন উত্তম কুমারেরই নায়িকা! তবে উত্তম কুমারের সঙ্গে জুটি বেঁধে যে ক’টি ছবি করেছেন তিনি, তার মধ্যে তিনটি ছবিতেই তাঁর চরিত্রটি মারা যাচ্ছে—‘রাজদ্রোহী’র চিন্তাবেন, ‘চৌরঙ্গী’র সুজাতা মিত্র এবং ‘রৌদ্রছায়া’র কৌশল্যা। ‘রৌদ্রছায়া’য় অবশ্য উত্তম কুমার অভিনীত চরিত্রটিরও মৃত্যুই দেখানো হয়েছে। ‘মহাশ্বেতা’য় আবার তাঁর চরিত্রটির প্রচণ্ড মানসিক টানাপোড়েন দেখানো হয়েছে। ‘কখনো মেঘ’-এ (১৯৬৮) অঞ্জনাকে সবচেয়ে ব্রাইট লাগলেও দর্শকদের বিচারে তাঁর অভিনীত সেরা ছবি অবশ্যই ‘চৌরঙ্গী’ (১৯৬৮) এবং ‘নায়িকা সংবাদ’ (১৯৬৭) (আমি দেখি নি)। ‘চৌরঙ্গী’তে উচ্চাকাঙ্খী এয়ারহোস্টেস সুজাতা যে স্যাটা বোসের সঙ্গে আলাপ ও প্রেমের পরে তার প্রেমিকাসত্তাটিকেও ফুটিয়ে তুলছে, তার উদাহরণ এ ছবির ‘এই কথাটি মনে রেখো’ গানে খুব সুন্দরভাবে দেখিয়েছেন পরিচালক পিনাকী মুখার্জি। ‘কখনো মেঘ’-এর প্রথমদিকে সীমার যে হীরে-সংক্রান্ত বিষয়ে যে উৎকণ্ঠা ছিল, তা ছবির শেষ দৃশ্যে কেটে যাওয়ায় সীমার আনন্দ ধরা পড়ে তার সঙ্গে নারায়ণ/অশোকের (উত্তম কুমার) খুনসুটিতে। ‘রৌদ্রছায়া’য় (১৯৭৩) ওয়াগন ব্রেকার পিয়ারীলালের (উত্তম কুমার) ঘর বাঁধার সাধ হয় কৌশল্যাকে দেখেই। ‘রাজদ্রোহী’ (১৯৬৬) উত্তমের সঙ্গে অঞ্জনার প্রথম মুখ্যচরিত্রে অভিনয়। রাজদ্রোহী প্রতাপ সিংয়ের আশা-ভরসা সব আবর্তিত হয় জলসত্রচালিকা চিন্তাবেনকে ঘিরে। ছবির শেষ দৃশ্যে চিন্তার অকালমৃত্যু প্রতাপকে যেন ছন্নছাড়া করে দেয়, কিন্তু সর্দার তেজ সিং (কমল মিত্র) তাকে উদ্দীপিত করে নতুনভাবে লাঞ্ছিত-বঞ্চিতদের জন্য সংগ্রাম শুরু করার জন্য। ‘শুকসারী’ (১৯৬৯) ছবিতেও উত্তম কুমারের সঙ্গে তিনিই ছিলেন। উত্তম কুমারের সঙ্গে তাঁর প্রথম অভিনয় ‘থানা থেকে আসছি’ (১৯৬৫) ছবিতে—সেখানে তিনি মুখ্য চরিত্রে ছিলেন না; যদিও উত্তম কুমারের সঙ্গে তাঁর বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দৃশ্য রয়েছে।

মাঝে মাঝে আফশোস হয় অঞ্জনা কেন অসময়ে চলচ্চিত্র জগৎ থেকে সরে গেলেন! তাঁর আরও অনেক কিছু দেওয়ার ছিল দর্শকদের। তিনি সুস্থ থাকুন, এবং আবারও অভিনয়ে ফিরুন, এমনটাই কামনা।

(এই লেখাটি লিখেছিলাম ২০২৩-এর ৫ জানুয়ারি। আজ অঞ্জনা ভৌমিক চলে গেলেন। তাঁর স্মৃতির উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা জানিয়ে একটু পরিমার্জন ও পরিবর্ধন করে আজ আবার পোস্ট করলাম।)

—কৌস্তভ মণ্ডল

© গেছো দাদা