ভুতুড়ে দীঘী
ভুতুড়ে দীঘী
বিমলের আজ উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হয়েছে। এখন হাতে অনেক দিনের ছুটি আছে। রেজাল্ট বের হতে এখন অনেক দেরি। রেজাল্ট বের হলে তারপর কলেজে ভর্তির কথা ভাবা যাবে।
এখন ছুটিতে কোলকাতার বাইরে কোথাও কোনো আত্মীয়র বাড়ি বেড়াতে গেলে ভাল হয়।
বিমলের মা বলল " সাতবেড়ায় তোর মামাবাড়ি থেকে একবার ঘুরে আয়। অনেকদিন হয়ে গেল তুই মামার বাড়ি যাস না। সেই ছোটবেলায় কবে গিয়েছিলি তার পর আর তোর যাওয়া হয় নি।"
মায়ের কথাটা বিমলের মনে ধরল সে বলল " কাল সকালেই হাওড়া থেকে লোকাল ট্রেন ধরে সাতবেড়ার উদ্দেশ্যে রওনা হব।"
বিমল মনে মনে ভাবল সাতবেড়ায় গেলে মামা মামির সাথে দেখাও হবে আর মামাতো ভাইয়ের সাথে সারা গ্রাম ঘুরে বেড়ানো যাবে।
পরদিন সকালে হাওড়া থেকে বর্ধমান লোকাল ধরে বিমল বর্ধমান নামল।
বর্ধমান থেকে বাস ধরে বিমল সাতবেড়া পৌঁছালো তখন প্রায় বিকেল হয়ে গেছে।
সাতবেড়ায় বিমল তার মামাবাড়ি পৌঁছাতেই বিমলের মামা মামি বিমলকে দেখে বেজায় খুশি হলেন।
বিমলের মামা বিমলকে বললেন " না জানিয়ে আসলি কেন? এখন সন্ধ্যা বেলায় এই পাড়াগায়ে মাছ মাংস ভাল মন্দ খাবার কিছু পাবো না। যা পাওয়া যাবে তা কাল সকালে।"
বিমল বলল " তোমায় এইসব কিছু ভাবতে হবে না। মামিমা যা রাঁধেন তাই সুস্বাদু।"
কিছুক্ষণ পর বিমল , বিমলের মামা ও বিমলের মামাত ভাই অজয় সবাই মিলে গল্প করতে লাগল। মামিমা রান্নাঘরে গেলেন রান্নার ব্যবস্থা করতে।
বিমলের মামা বললেন " তা হ্যাঁ রে বিমল রেজাল্ট বের হবার পর কি বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করতে চাস।"
বিমল বলল " ইতিহাসে অনার্স নিয়ে পড়ার ইচ্ছা আছে। আশা করছি উচ্চমাধ্যমিকের রেজাল্ট ভালই হবে।"
কিছুক্ষণ পর মামি খেতে ডাকলেন। রান্না ছিল খুবই সামান্য ডাল ভাত , একটা চচ্চড়ি আর ডিম ভাঁজা কিন্তু খেতে দারুণ সুস্বাদু হয়েছে। মামির রান্নার হাত দারুণ।
রাতে খাবার পর বিমল তাড়াতাড়ি শুতে চলে গেল সারাদিনের ক্লান্তিতে কিছুক্ষণের মধ্যেই সে ঘুমিয়ে পরল।
পরদিন সকালে বিমল আর অজয় সারা গ্রাম ঘুরে বেড়ালো।
বাড়ি ফিরে এসে দুপুরে বেশ জমিয়ে খাওয়া দাওয়া হল। বিমলের মামি আজ চিংড়িমাছের মালাইকারি ও রুইমাছের দই কালিয়া রান্না করেছিল।
বিকেলের দিকে বিমল আর অজয় আবার ঘুরতে বের হল।
সন্ধ্যা বেলায় বিমল অজয়ের ঘরে বসে গল্প করছিল।
কথায় কথায় ভুত প্রেতের কথা উঠল।
বিমল বলল " অজয় তোদের গ্রামে কি কোন ভুতুড়ে বাড়ি আছে?"
অজয় বলল " ভুতুড়ে বাড়ি নেই তবে একটা ভুতুড়ে দীঘী আছে। সেখানে কেউ মাছ ধরতে যায় না সকলের বিশ্বাস সেখানে নাকি মেছো ভুত আছে।"
বিমল বলল " এইসব ভুতটুত সব মিথ্যা। ভুত বলতে কিছু নেই। কিছু বাজেলোক এইসব কথা রটিয়েছে যাতে কেউ ওই দীঘীতে মাছ ধরতে না যায়।"
অজয় বলল " তোর কথায় যুক্তি আছে।"
বিমল বলল " আজ রাতে সবাই যখন ঘুমিয়ে পরবে তখন আমরা ওই দীঘীতে মাছ ধরতে যাব আর প্রমাণ করে দেবো সেখানে ভুতটুত কিছু নেই। তুই তোর মাছ ধরার ছিপটা নিয়ে নিবি।"
অজয় বলল " ঠিক আছে তাই হবে।"
রাতে খাওয়া দাওয়ায় পর সবাই যখন ঘুমিয়ে পরে বিমল আর অজয় ছিপ নিয়ে সেই দীঘীর কাছে পৌঁছে যায়। দীঘীটার নাম চৌধুরি দীঘী। এককালে এই গ্রামের জমিদার নগেন্দ্রনাথ চৌধুরি এই দীঘীটা তৈরি করান তাই দীঘীটার নাম হয় চৌধুরি দীঘী।
বিমল আর অজয় সেখানে পৌঁছাতেই বিমল দীঘীতে ছিপ ফেলে মাছ ধরার চেষ্টা করতে থাকে। মাছ ধরার টোপ হিসেবে তারা কিছু পিঁপড়ের ডিম আর কেঁচো আগে থেকেই যোগার করে রেখেছিল।
ছিপ ফেলে বিমল মাছের অপেক্ষায় বসে থাকে। কিছুক্ষণ পর তারা দেখতে পায় একটা লোক তাদের থেকে একটু দুরে বসে আছে। বিমল অজয়কে লোকটার দিকে ইশারা করে বলল " এই লোকটা কখন এলো?"
অজয় বলল " কি জানি আমি তো দেখিনি সে কখন এলো।"
বিমল আর অজয় লোকটাকে ভাল করে দেখতে লাগল লোকটার পরনে একটা খাটো ধুতি আর একটা চাদর দিয়ে সে নিজের নাক মুখ ঢেকে রেখেছে।
তারা দেখতে পেল লোকটা দীঘী থেকে কি যেন তুলে খাচ্ছে।
বিমল লোকটার সামনে এগিয়ে এসে বলল " আপনি কে ভাই এখানে এত রাতে কি করছেন?"
লোকটা কোনো উত্তর দিল না।
বিমল আবার জিজ্ঞাসা করল। এবারও লোকটি কোনো উত্তর দিল না।
লোকটা একমনে খেয়েই যাচ্ছে। বিমল এবার লোকটার কাঁধে হাত রেখে একটা হাল্কা ঝাকুনি দিল।
লোকটা এবার তাদের দিকে ফিরে তাকালো। চাঁদের আলোয় বিমল আর অজয় দেখল লোকটা একটা আস্ত কঙ্কাল সেটার মুখটা একটা কঙ্কালের করটি সেটার চোখের জায়গায় দুটো গর্ত তাতে ভাঁটার মত যেন আগুন ঠিকরে বের হচ্ছে। লোকটা কাঁচা মাছ চিবিয়ে খাচ্ছে। হঠাৎ লোকটা হাওয়ায় মিলিয়ে গেল অদৃশ্য হয়ে গেল। এই দৃশ্য দেখে বিমল আর অজয়ের শিরদাঁড়া দিয়ে একটা হিমেল স্রোত বয়ে গেল। বিমল আর অজয় সেখানেই অজ্ঞান হয়ে পরে গেল।
পরদিন সকালে বিমল নিজেকে বিছানায় আবিষ্কার করল। সে এখন তার মামাবাড়িতেই রয়েছে।
তার জ্ঞান ফিরতেই তার মামা বলল " সেই ভুতুড়ে দীঘীতে তোরা কি করতে গিয়েছিলি?"
দুদিন পর বিমল কোলকাতায় তার বাড়ি ফিরে গেল।
এখনো বিমলের সেই ভুতুড়ে দীঘীটার ঘটনা মনে পড়লে তার ভয়ে গা শিউরে উঠে।
(শেষ)
© All Rights Reserved
বিমলের আজ উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হয়েছে। এখন হাতে অনেক দিনের ছুটি আছে। রেজাল্ট বের হতে এখন অনেক দেরি। রেজাল্ট বের হলে তারপর কলেজে ভর্তির কথা ভাবা যাবে।
এখন ছুটিতে কোলকাতার বাইরে কোথাও কোনো আত্মীয়র বাড়ি বেড়াতে গেলে ভাল হয়।
বিমলের মা বলল " সাতবেড়ায় তোর মামাবাড়ি থেকে একবার ঘুরে আয়। অনেকদিন হয়ে গেল তুই মামার বাড়ি যাস না। সেই ছোটবেলায় কবে গিয়েছিলি তার পর আর তোর যাওয়া হয় নি।"
মায়ের কথাটা বিমলের মনে ধরল সে বলল " কাল সকালেই হাওড়া থেকে লোকাল ট্রেন ধরে সাতবেড়ার উদ্দেশ্যে রওনা হব।"
বিমল মনে মনে ভাবল সাতবেড়ায় গেলে মামা মামির সাথে দেখাও হবে আর মামাতো ভাইয়ের সাথে সারা গ্রাম ঘুরে বেড়ানো যাবে।
পরদিন সকালে হাওড়া থেকে বর্ধমান লোকাল ধরে বিমল বর্ধমান নামল।
বর্ধমান থেকে বাস ধরে বিমল সাতবেড়া পৌঁছালো তখন প্রায় বিকেল হয়ে গেছে।
সাতবেড়ায় বিমল তার মামাবাড়ি পৌঁছাতেই বিমলের মামা মামি বিমলকে দেখে বেজায় খুশি হলেন।
বিমলের মামা বিমলকে বললেন " না জানিয়ে আসলি কেন? এখন সন্ধ্যা বেলায় এই পাড়াগায়ে মাছ মাংস ভাল মন্দ খাবার কিছু পাবো না। যা পাওয়া যাবে তা কাল সকালে।"
বিমল বলল " তোমায় এইসব কিছু ভাবতে হবে না। মামিমা যা রাঁধেন তাই সুস্বাদু।"
কিছুক্ষণ পর বিমল , বিমলের মামা ও বিমলের মামাত ভাই অজয় সবাই মিলে গল্প করতে লাগল। মামিমা রান্নাঘরে গেলেন রান্নার ব্যবস্থা করতে।
বিমলের মামা বললেন " তা হ্যাঁ রে বিমল রেজাল্ট বের হবার পর কি বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করতে চাস।"
বিমল বলল " ইতিহাসে অনার্স নিয়ে পড়ার ইচ্ছা আছে। আশা করছি উচ্চমাধ্যমিকের রেজাল্ট ভালই হবে।"
কিছুক্ষণ পর মামি খেতে ডাকলেন। রান্না ছিল খুবই সামান্য ডাল ভাত , একটা চচ্চড়ি আর ডিম ভাঁজা কিন্তু খেতে দারুণ সুস্বাদু হয়েছে। মামির রান্নার হাত দারুণ।
রাতে খাবার পর বিমল তাড়াতাড়ি শুতে চলে গেল সারাদিনের ক্লান্তিতে কিছুক্ষণের মধ্যেই সে ঘুমিয়ে পরল।
পরদিন সকালে বিমল আর অজয় সারা গ্রাম ঘুরে বেড়ালো।
বাড়ি ফিরে এসে দুপুরে বেশ জমিয়ে খাওয়া দাওয়া হল। বিমলের মামি আজ চিংড়িমাছের মালাইকারি ও রুইমাছের দই কালিয়া রান্না করেছিল।
বিকেলের দিকে বিমল আর অজয় আবার ঘুরতে বের হল।
সন্ধ্যা বেলায় বিমল অজয়ের ঘরে বসে গল্প করছিল।
কথায় কথায় ভুত প্রেতের কথা উঠল।
বিমল বলল " অজয় তোদের গ্রামে কি কোন ভুতুড়ে বাড়ি আছে?"
অজয় বলল " ভুতুড়ে বাড়ি নেই তবে একটা ভুতুড়ে দীঘী আছে। সেখানে কেউ মাছ ধরতে যায় না সকলের বিশ্বাস সেখানে নাকি মেছো ভুত আছে।"
বিমল বলল " এইসব ভুতটুত সব মিথ্যা। ভুত বলতে কিছু নেই। কিছু বাজেলোক এইসব কথা রটিয়েছে যাতে কেউ ওই দীঘীতে মাছ ধরতে না যায়।"
অজয় বলল " তোর কথায় যুক্তি আছে।"
বিমল বলল " আজ রাতে সবাই যখন ঘুমিয়ে পরবে তখন আমরা ওই দীঘীতে মাছ ধরতে যাব আর প্রমাণ করে দেবো সেখানে ভুতটুত কিছু নেই। তুই তোর মাছ ধরার ছিপটা নিয়ে নিবি।"
অজয় বলল " ঠিক আছে তাই হবে।"
রাতে খাওয়া দাওয়ায় পর সবাই যখন ঘুমিয়ে পরে বিমল আর অজয় ছিপ নিয়ে সেই দীঘীর কাছে পৌঁছে যায়। দীঘীটার নাম চৌধুরি দীঘী। এককালে এই গ্রামের জমিদার নগেন্দ্রনাথ চৌধুরি এই দীঘীটা তৈরি করান তাই দীঘীটার নাম হয় চৌধুরি দীঘী।
বিমল আর অজয় সেখানে পৌঁছাতেই বিমল দীঘীতে ছিপ ফেলে মাছ ধরার চেষ্টা করতে থাকে। মাছ ধরার টোপ হিসেবে তারা কিছু পিঁপড়ের ডিম আর কেঁচো আগে থেকেই যোগার করে রেখেছিল।
ছিপ ফেলে বিমল মাছের অপেক্ষায় বসে থাকে। কিছুক্ষণ পর তারা দেখতে পায় একটা লোক তাদের থেকে একটু দুরে বসে আছে। বিমল অজয়কে লোকটার দিকে ইশারা করে বলল " এই লোকটা কখন এলো?"
অজয় বলল " কি জানি আমি তো দেখিনি সে কখন এলো।"
বিমল আর অজয় লোকটাকে ভাল করে দেখতে লাগল লোকটার পরনে একটা খাটো ধুতি আর একটা চাদর দিয়ে সে নিজের নাক মুখ ঢেকে রেখেছে।
তারা দেখতে পেল লোকটা দীঘী থেকে কি যেন তুলে খাচ্ছে।
বিমল লোকটার সামনে এগিয়ে এসে বলল " আপনি কে ভাই এখানে এত রাতে কি করছেন?"
লোকটা কোনো উত্তর দিল না।
বিমল আবার জিজ্ঞাসা করল। এবারও লোকটি কোনো উত্তর দিল না।
লোকটা একমনে খেয়েই যাচ্ছে। বিমল এবার লোকটার কাঁধে হাত রেখে একটা হাল্কা ঝাকুনি দিল।
লোকটা এবার তাদের দিকে ফিরে তাকালো। চাঁদের আলোয় বিমল আর অজয় দেখল লোকটা একটা আস্ত কঙ্কাল সেটার মুখটা একটা কঙ্কালের করটি সেটার চোখের জায়গায় দুটো গর্ত তাতে ভাঁটার মত যেন আগুন ঠিকরে বের হচ্ছে। লোকটা কাঁচা মাছ চিবিয়ে খাচ্ছে। হঠাৎ লোকটা হাওয়ায় মিলিয়ে গেল অদৃশ্য হয়ে গেল। এই দৃশ্য দেখে বিমল আর অজয়ের শিরদাঁড়া দিয়ে একটা হিমেল স্রোত বয়ে গেল। বিমল আর অজয় সেখানেই অজ্ঞান হয়ে পরে গেল।
পরদিন সকালে বিমল নিজেকে বিছানায় আবিষ্কার করল। সে এখন তার মামাবাড়িতেই রয়েছে।
তার জ্ঞান ফিরতেই তার মামা বলল " সেই ভুতুড়ে দীঘীতে তোরা কি করতে গিয়েছিলি?"
দুদিন পর বিমল কোলকাতায় তার বাড়ি ফিরে গেল।
এখনো বিমলের সেই ভুতুড়ে দীঘীটার ঘটনা মনে পড়লে তার ভয়ে গা শিউরে উঠে।
(শেষ)
© All Rights Reserved