...

5 views

স্বরচিত ছোটগল্প - ' আধ্যাত্মিক ' 🕯️🔱 🌺


ভক্তির পবিত্র কণাগুলো কী সাদা ! কী শান্তি ! হৈমন্তী আলো ! চৈতন্য ! আর অবশেষে বিলীন হয়ে যাওয়া ঈশ্বরে ...
নীরব কোনো সবুজ আয়তক্ষেত্রে অধিষ্ঠিত হয়ে ধ্যানে মগ্ন মহাপুরুষ ওম চিহ্নে ব্রহ্মের নিকট পৌঁছোয়,আর,মোক্ষলাভের প্রার্থনায় নিজেকে সমর্পণ করতে করতে কখন যে সে বায়ুর সাথে মিশে শূন্য হয়ে যায়,তা কল্পনা করাও দুঃসাধ্য।
এককথায়,পরমাত্মা আর আত্মার মিলনে এক অবিনশ্বর কোশ তৈরি হয়,যার কোনো রক্ত নেই , জীবন নেই , রোগ নেই ...
অথচ সে পরম আনন্দ,পরম শান্তি..
মন্দির,মসজিদ,স্বর্গ,আল্লা,ভগবান সবটুকু যেন ওই একটা কোশেই জমতে জমতে পাহাড় হয়ে যায় ..
তখন সবাই মানুষ হওয়ার লোভ ত্যাগ করে দেয় একান্ত স্বইচ্ছায়, বাস করতে চায় অশরীরে ,শৈবালে , ছত্রাকে আর তৃপ্তিতে।
এমনই এক মহাপুরুষ পদ্মলোচন।
শক্তিপুর গ্রামের এক ব্রাহ্মণ পরিবারের ছেলে ছিল সে।
ওরফে পূজারী।
গ্রামের সকলে তাঁকে দেবতা বলে মান্য করতো।
আজ হঠাৎ নিজের বাড়ির প্রতিষ্ঠিত দেবী মাকে পুজো করতে করতে সে অজ্ঞান হয়ে যায়।
বাড়ির লোকের কাছে এই ঘটনা আশ্চর্য নয়,কারণ, তারা এর আগেও বহুবার তাঁকে দেব-দেবীর পুজো করতে করতে জ্ঞান হারাতে দেখেছে।
তবে এর কারণটা আজও তাদের কাছে ইন্দ্রজালের মতো মায়াবী।
পাশ থেকে পদ্মলোচনের মা উদ্ বিঘ্ন হয়ে বারবার একই কথা আওড়াতে থাকেন - " পদ্মলোচন ! বাছা আমার ! জেগে ওঠ ! দেবী মায়ের পুজো যে এখনো অসম্পূর্ণ।"
মিনিট দশেক পর চোখ খোলে পদ্মলোচন।
তবে এবার আগের বারের থেকে আলাদা কিছু প্রকাশ পাচ্ছিল তার চোখের প্রতিবিম্বে।
পদ্মলোচনের সেই চোখজোড়া যেন এক অপরূপ হলুদ জ্যোতিতে পরিপূর্ণ হয়ে গেছে,কাঁচা হলুদের মতো এই অদ্ভুত আলোর বিবেকে স্নান করে বাড়ির সকলে তখন পবিত্র,তাদের মনের সমস্ত কৌতূহল যেন মহাশূন্যে বিলীন হয়ে গেছে।
তারপর ?
তারপর , দেবী মায়ের স্নেহ কেশবাষ্পে , চুমকি বস্ত্র শিল্পে এবং , ঝাউ মুকুট সজ্জিত অবয়বে ডুবে যায় পদ্মলোচন।
ঠাকুরঘরের রন্ধনশিল্পে রাখা হয় খিচুড়ি, পাঁচ রকম ভাজা ও পায়েস।
" নে মা খা তো দেখি , হাঁ কর ! কতক্ষণ খাসনি ! শুধু অন্নপূর্ণার মতো আমাদের দিয়েই গেলি , তোর এই নিঃস্ব পাকস্থলী , আমি ছাড়া আর কে বুঝবে বল ! "
অত্যন্ত তৃপ্তিভরে সেদিন খেয়েছিলেন দেবী মা,খালি পাতে পরে ছিল দুফোঁটা নোনা জল,আর,একখানা লাল জবা!
আর কেউ এর তাৎপর্য না বুঝলেও পদ্মলোচন খুব নিখুঁতভাবেই উপলব্ধি করতে পেরেছিল এর মর্মার্থ।



© সাহিত্যের নায়াগ্রা❤️