...

7 views

মুখোমুখি

মুখোমুখি
সুব্রত বেরা

সুদীপ্ত বাবু গত দুই বছর বিছানার সঙ্গে সখ্য।পাশের চেনা ট্রেন লাইনে ডাউন ট্রেন আসার সময় একটা বাড়তি চঞ্চলতা লক্ষ্য করা যায়।
সেদিনও বাদ পড়েনি।কাজের মেয়ে,যমুনা বললে,’বাবু!আমায় ক্ষ্যামা করবেন।আপনাকে না জানিয়ে বালিশের নিচে রাখা চিঠিটা আমি বৌদিমনিকে...’।
গত বাইশ বছর হলো ,সুপ্রিয়া নিজের চার বছরের কন্যা লাবণ্যকে সাথে করে বেরিয়ে যায় আর ফিরে আসেনি।তার পর থেকেই সুদীপ্ত একদম কেন্দ্রমুখী।হাসিগুলো যেনো বন্ধক দেওয়া হয়েছে।ভবঘুরে রোগগুলো অযত্ন ও অবহেলা শরীরে বাসা বেঁধেছে।
যমুনার মুখে চিঠির কথা শুনতেই জোর করে কোটরের ভিতরে থাকা চক্ষু দুটির পাতা মেলার চেষ্টা করলো।শুকনো চোখের কোনায় একটা অদ্ভুত অশ্রুর দেখা যায়।কাঁপা গলায় বললো,এ তুই কি করলি,জানি ও বড্ড বেশি অভিমানী,ও কখনও আর এখানে আসবে না।’
’বাবু আর চিন্তা করবেন না,আপনি নিশ্চিত সুস্থ্য হয়ে উঠবেন।আপনি আবার আগের মত স্বাভাবিক হয়ে উঠবেন। ডা:লাবণ্য সেন আপনাকে দেখবেন।আজ থেকে আপনার সুস্থ্য না হওয়া পর্যন্ত।
চোখ মেলে ডাক্তারকে দেখার চেষ্টা করলেন,
আর অস্ফুট স্বরে বলল,’সুপ্রিয়া, সু.. প্রি.. আ....’
যমুনা বলে,’বাবু,ইনি সুপ্রিয়া বৌদিমনি নন,ইনি ডা:লাবণ্য সেন।’
’আমি কি ভুল দেখলাম,সেই চোখ ,সেই মুখ,সেই..’সুদীপ্তবাবু একটু বিছানায় উঠে বসার চেষ্টা করলো।
’জানিনা,আপনি আমার মা’র কে হন, মা’ইতো আমাকে দেখার জন্য আর্জেন্ট ডেকে পাঠালো।’,ডা:সেন ,প্রেস্কিপশনের প্যাডটা খুলে জিজ্ঞেস করল,বলুন আপনার নাম?’
’ডা:সুদীপ্ত সেন।’
’আপনি কি সেই বিখ্যাত মনস্তাত্ত্বিক ডা:সুদীপ্ত সেন?আপনার কথা মা প্রায়ই আমাকে শোনায়।আপনার মতো আমাকেও একজন বিখ্যাত মনস্তাত্ত্বিক ডাক্তার হতে হবে।কিন্তু আজ আমার অবাক লাগছে,আজ আমাকে আপনার চিকিৎসা করতে হবে।যাই হোক বলুন আপনার কি হয়েছে?’
’আমি ক্লান্ত।আমি লড়াই করা ছেড়ে দিয়েছি।
দিন ও রাত সমান আনন্দ দেয়।এখন আমি সুস্থ।
আর কিচ্ছু দরকার নেই।এখন বড্ড ঘুম পাচ্ছে আমার।আর তাকাতে পাচ্ছি না...!আর...’

’সুদীপ্ত বাবু!সুদীপ্ত বাবু!সুদীপ্ত বাবু...... ওহ! স্যাড। ’

’বাবু!বাবু!.....একটিবার চেয়ে দেখ,ইনি আপনার মেয়ে,লাবণ্য!’কান্নাটা আঁচলের একপ্রান্ত দিয়ে চেপে দিলেন।

’কি বললেন!ইনি আমার বাবা!’নিস্পলক চোখে সৃষ্টি দেহটা দেখলেন।নিথর দেহ নিস্পলক চোখে মুখোমুখি আজ।কতগুলো প্রশ্নের উত্তর আজও অজানাই রয়ে গেল। বাইরের ডাউন ট্রেনটা বিকট শব্দে বুকের ঠিক মাঝখান দিয়ে ছুটে চলে গেলো।ডা:সেন দেখলেন কখন তার একটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ে গেছে প্রেস্কিপশন এ লেখা ডা:সুদীপ্ত সেন নামটার উপর।মুছতে গিয়ে,’উফফ!নামটা যে ঘেঁটে গেলো একদম।’টপ টপ টপ করে একটার পর একটা অশ্রু গড়িয়ে পড়তে লাগলো সাদা প্রেস্কিপশান এর উপর।
(সমাপ্ত)

সুব্রত বেরা।
#bengali #bengalistory #bangla