রাক্ষসী বৌ
রাক্ষসী বৌ
সে বহু কাল আগের কথা। সূর্যশেখর নামে এক বণিক বাস করত। তাকে বানিজ্য করতে দেশের নানান স্থানে ভ্রমণ করতে হতো।
একবার দুর এক দেশে ভ্রমণ করতে গিয়ে এক ব্যবসায়ীর সাথে সেই বণিকের পরিচয় হয় আর সেই সাথে দুজনের খুব বন্ধুত্ব হয়। একদিন ব্যবসায়ী সেই বণিক কে দুপুরে মধ্যাহ্ন ভোজনের আমন্ত্রণ করে। সেই মত বণিক ব্যবসায়ীর বাসায় হাজির হয়। ব্যবসায়ীর পাঁচ বছরের একটি কন্যা সন্তান ছিল তাকে দেখে বণিকের খুব পছন্দ হয় সে ব্যবসায়ী কে বলে "আমি তোমার মেয়ের সাথে আমার আট বছরের ছেলের বিবাহ দিতে চাই "। ব্যবসায়ী এই কথা শুনে খুব আনন্দিত হয়ে বলে "খুব ভালো প্রস্তাব আমি রাজি"।
তারপর শুভ দিন দেখে ব্যবসায়ীর পাঁচ বছরের মেয়ের সাথে বণিকের আট বছরের ছেলের বিবাহ হয়ে যায়। চারদিন খুব ধুমধাম করে বিবাহ অনুষ্ঠান হয়। অনেক লোক বিবাহ অনুষ্ঠানে ভোজন করে যায়।
এক সপ্তাহ খুব আনন্দে কাটাবার পর বণিক ব্যবসায়ী কে বলে "বন্ধু এবার বিদায় দাও আর তোমার মেয়ের যখন পনেরো বছর বয়স হবে আমার ছেলে এসে তাকে শশুরবাড়ি নিয়ে যাবে "। ব্যবসায়ী তাতে রাজি হয়। শেষে বণিক ও তার পরিবার ব্যবসায়ীর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে যায়।
কালের নিয়ম অনুযায়ী বেশ কিছু বছর পার হয়ে যায় বণিকের ছেলের বয়স হয় আঠার বছর তার নাম চন্দ্রশেখর। একদিন বণিক তার ছেলেকে ডেকে বলল "বাবা এখন তুমি অনেক বড় হয়েছো বৌ মা ও নিশ্চয় এখন অনেক বড় হয়েছে। তুমি তোমার শ্বশুরবাড়ি গিয়ে বৌমা কে নিয়ে আসো।"
দিনক্ষণ ঠিক করে একদিন চন্দ্র ঘোড়ায় চেপে তার শশুরবাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয় সে তার সাথে একজন চাকর কে নিয়ে যায়। সেখান পৌঁছাতে তাদের সাতদিন সময় লাগে। সেখান পৌঁছে চন্দ্র তার শ্বশুরমশাই কে প্রণাম করে বলল "এবার আপনার মেয়ে কে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দীন।"
ব্যবসায়ী বলল "বাবাজীবন তুমি আমাদের জামাই। তুমি এতদিন পরে এলে তোমায় এই ভাবে তো যেতে দিতে পারি না এখানে দু চার দিন থেকে তারপর না হয় যাবে।" অগত্যা চন্দ্র দু চার দিন থাকতে রাজি হল।
প্রথম দুদিন খুব ভালমন্দ খাওয়ানো হল জামাই কে।
রাতে যখন চন্দ্রর বৌ শোবার ঘরে এলো তখন চন্দ্র তার বৌ এর শাড়ি তে রক্তের দাগ দেখতে পেল। সে তার বৌ কে জিজ্ঞাসা করল "তোমার শাড়ি তে রক্তের দাগ কেন?"
বৌ বলল "আজ পাঁঠা কাটা হয়েছিল তো আমি সামনে ছিলাম তাই বোধহয় রক্তের ছিটা ফোটা পরেছে আমি লক্ষ করিনি ঠিক আছে আমি শাড়ি পাল্টে আসছি।"
চন্দ্রর বৌ এর হাবভাব দেখে মনে হল বৌ মিথ্যে কথা বলছে। সে আর কিছু না বলে শুয়ে পরল। রাতে হঠাৎ চন্দ্রর ঘুম ভেঙে গেল সে দেখতে পেল তার বৌ বিছানায় নেই। সে সারা রাত জেগে বসে রইল কিন্তু তার বৌ এল না। তার কিরকম একটা সন্দেহ হল।
পরদিন রাতে চন্দ্র ঘুমের ভান করে শুয়ে রইল। রাত যখন গভীর হল চন্দ্র টের পেল তার বৌ চুপি চুপি দরজা খুলে বাইরে বের হয়ে যাচ্ছে। চন্দ্রও চুপি চুপি দরজা খুলে বাইরে এসে বৌ এর পিছু নিলো। বেশ কিছুক্ষন হাঁটার পর চন্দ্রর বৌ একটা জঙ্গল মত জায়গার ভিতর ঢুকল। চন্দ্রও পা টিপে টিপে সেই জঙ্গলটার ভিতর গিয়ে ঢুকল।
জঙ্গলটার ঠিক মাঝ বরাবর একটা কুঁড়ে ঘর আছে তার এক পাশে একটা ষাঁড় গাছে বাধা অবস্থায় আছে। ঘরের দাওয়ায় একটা বুড়ি বসে আছে। ঘরটার এক পাশে একটা মশাল জ্বলছে।
চন্দ্রর বৌ বুড়িটার কাছে যেতেই বুড়িটা খোনা গলায় হেসে হেসে কথা বলতে লাগল। মশালের আলোয় চন্দ্র দেখল বুড়িটার চোখ গুলো ভিসন লাল। বুড়িটা যখন কথা বলছিল তার বড় বড় গজদাঁত গুলো দেখা যাচ্ছিল। চন্দ্র একটা গাছের আড়ালে লুকিয়ে সব দেখছিল।
বুড়িটা চন্দ্রর বৌ কে বলল "দাঁড়া খাবার বন্দোবস্ত করি।"
এই কথা বলে বুড়িটা গাছে বাধা ষাঁড়টার কাছে গেল আর তার হাত দুটো দিয়ে ষাঁড়টার গলা চেপে ধরল। বুড়িটার হাতে বড় বড় ধারালো নোক ছিল সেই নোক গুলো ষাঁড়টার গলায় সে ঢুকিয়ে দিল। ষাঁড়টা মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করতে লাগল আর দাপাদাপি করতে লাগল। বুড়িটা ষাঁড়টা কে জাপটে ধরল। চন্দ্র এইসব দেখে একেবারে হতবাক হয়ে গেলো ভয়ে তার শিরদাঁড়া দিয়ে একটা হিমেল স্রোত বয়ে গেল। সে ভাবতে লাগল বুড়িটার গায়ে এত অমানুষিক শক্তি কি করে হল সে অতবড় একটা ষাঁড় কে জাপটে ধরল। নিশ্চয় বুড়িটা কোন সাধারন মানুষ নয় হয়তো রাক্ষসী, পিশাচি বা অন্য কিছু।
ষাঁড়টা কিছুক্ষণ ছটফট করে মারা গেল। সেটার গলা দিয়ে প্রচুর রক্ত ঝরতে লাগল। বুড়িটা চন্দ্রর বৌ কে বলল" গাছ থেকে কিছু কলাপাতা নিয়ে আসি।" চন্দ্র লক্ষ করল সে যেখানে দাড়িয়ে আছে তার পাশেই একটা কলাগাছ। সে প্রাণ বাঁচাতে সেখান থেকে পালিয়ে গেল। ঐ সাংঘাতিক বুড়ির পাল্লায় পরলে আর রক্ষা নেই। চন্দ্র মনে মনে ঠিক করল বাড়ি নিয়ে গিয়ে বৌ কে সব জিজ্ঞাসা করবে না বলতে চাইলে দরকার হলে মারধোর করবে।
পরদিন সকালে চন্দ্র তার শ্বশুরমশাই কে বলল "বাবা অনেক দিন থাকা হল এবার বাড়ি যাবার অনুমতি দিন।"
ব্যবসায়ী বলল "ঠিক আছে বাবাজীবন তাহলে আজ রওনা হতে পার।"
চন্দ্র তার বাড়ি যাবার জন্যে প্রস্তুত হতে লাগল। তার শশুর তার জন্য ও তার বাড়ির জন্য অনেক উপহার ও তার মেয়ের দেখাশোনা করবার জন্য মেয়ের পছন্দ মত একটি দাসি দিল।
চন্দ্র ও তার চাকর একটি ঘোড়ায় এবং চন্দ্রর বৌ ও তার দাসি অন্য একটি ঘোড়ায় চেপে চন্দ্রর বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হল।
পথ চলতে চলতে তারা একটি রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে পরল। দুদিকে জঙ্গল তার মাঝখানে ছিল রাস্তাটা। চন্দ্র বলল "এখানে আজকের রাতটা কাটিয়ে দিই কাল সকালে আবার রওনা হওয়া যাবে এখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে একটু পর চারদিক অন্ধকার করে রাত নামবে আজ আর পথ চলা ঠিক নয়।" চন্দ্র তার চাকর কে বলল তাবু খাটাতে। চাকর টা জঙ্গলের একটা পরিস্কার জায়গা বেছে নিয়ে তাবু খাটাতে লাগল।
চন্দ্রর বৌ হঠাৎ বলল "জল ফুরিয়ে গেছে আমার খুব তেষ্টা পেয়েছে ওই যে পাশে ঝোপ টা দেখা যাচ্ছে তার থেকে খানিক দুরে গেলেই একটা জলাশয় আছে। আমি একটু জল পান করে আসি।"
চন্দ্র বলল "ওখানে জলাশয় আছে তা তুমি কি করে জানলে?"
চন্দ্রর বৌ বলল "আমি বাবা মার সাথে এই জায়গায় আগে এসেছি।"
চন্দ্র বলল "ঠিক আছে তবে যাও কিন্তু একা যেওনা আমার চাকরটা তোমার সাথে যাবে।"
চন্দ্রর বৌ ও চন্দ্রর চাকর জঙ্গলের দিকে চলে গেল।
অনেকক্ষণ হয়ে গেল তারা কেউ ফিরে এল না। চন্দ্র চিন্তিত হয়ে ভাবতে লাগল "সেখানে কি কোন মজার দৃশ্য আছে যে দুজনেই দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখছে ফিরে আসার কথা ভুলে গিয়ে না এবার আমাকেই গিয়ে ব্যাপারটা দেখতে হচ্ছে।"
এইকথা ভেবে চন্দ্র নিজেই ওদের কে ডেকে আনতে সেই জলাশয়ের দিকে অগ্রসর হল।
কিছুটা যাবার পর সে জলাশয় টা দেখতে পেল কিন্তু তার বৌ ও চাকর টা তার নজরে এল না। হঠাৎ সে একটা চাপা গোন্গানির আওয়াজ শুনতে পেল তার নজরে পরল ভয়াবহ একটা দৃশ্য যেটা দেখার জন্য সে একেবারে প্রস্তুত ছিল না। সে দেখতে পেল তার চাকর টা মরে পরে আছে আর তার বৌ সেই মৃত দেহের পাসে বসে সেটার মাংস ছিড়ে ছিড়ে খাচ্ছে। মৃতদেহটার পেট চিরে তার মধ্যে থেকে কলিজাটা বেড় করে আস্ত চিবিয়ে খেয়ে দেহটার হাত পা খেতে শুরু করেছে যেভাবে মানুষ পেয়ারা চিবিয়ে খায় ঠিক সেই ভাবে।
রাক্ষসীটার দুকশ বেয়ে রক্ত ঝরে পরছে গোন্গানির আওয়াজ রাক্ষসী টার গলা থেকে বের হচ্ছিল। চন্দ্র এই দৃশ্য দেখে ভয়ে একেবারে কাঠ হয়ে গেল তার শিরদাঁড়া দিয়ে একটা হিমেল স্রোত বয়ে গেল। সে ভাবতে লাগল "হে ভগবান এ কার সাথে আমার বিয়ে হয়েছে। ভগবান আমায় রক্ষা কর।"
হঠাৎ রাক্ষসীটার নজর চন্দ্রর উপর পরল কি হিংস্র তার চোখ দুটো যেন ভাঁটার আগুনের মতো। রাক্ষসী টা চন্দ্রর দিকে তেড়ে আসতে লাগল চন্দ্র খুব ভয় পেয়ে দৌড়ে পালাতে লাগল যেদিকে তার ঘোড়াটা বাধা আছে।
ঘোড়াটার কাছে পৌঁছে সে আর এক ভয়াবহ দৃশ্যের মুখোমুখি হল তার বৌএর দাসিটা একটা ঘোড়া মেরে সেটার মাংস খুবলে খেতে লাগল ও রক্ত চেটে খেতে লাগল আর একটা ঘোড়া নেই হয়তো ভয়ে পালিয়ে গেছে।
চন্দ্র দিক বিদিক শূন্য হয়ে দৌড়াতে লাগল দৌড়াতে দৌড়াতে সে একটা শিব মন্দিরের সামনে অজ্ঞান হয়ে পরে গেল।
পরদিন সকালে যখন তার জ্ঞান ফিরল সে নিজেকে একটা বিছানায় আবিষ্কার করল শোয়া অবস্থায় তার চারপাশে বেশ কিছু লোকজন। সে পরে জানতে পারল মন্দিরের পুরুত ঠাকুর তাকে অজ্ঞান অবস্থায় দেখে লোকজন ডেকে এনে তাকে বাড়ি নিয়ে আসে।
চন্দ্রর পুরোপুরি সুস্থ হতে দুদিন লাগল। তাকে পুরুত ঠাকুর ও অন্যরা জিজ্ঞাসা করল কি হয়েছিল । সে তখন সব ঘটনা খুলে বলল শুনে সবাই হতবাক হয়ে গেল।
চন্দ্র যখন তার বাড়ি ফিরে এল তখন তার মুখ থেকে সব ঘটনা শুনে তার বাড়ির লোক ভয়ে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেল।
(শেষ)
© All Rights Reserved
সে বহু কাল আগের কথা। সূর্যশেখর নামে এক বণিক বাস করত। তাকে বানিজ্য করতে দেশের নানান স্থানে ভ্রমণ করতে হতো।
একবার দুর এক দেশে ভ্রমণ করতে গিয়ে এক ব্যবসায়ীর সাথে সেই বণিকের পরিচয় হয় আর সেই সাথে দুজনের খুব বন্ধুত্ব হয়। একদিন ব্যবসায়ী সেই বণিক কে দুপুরে মধ্যাহ্ন ভোজনের আমন্ত্রণ করে। সেই মত বণিক ব্যবসায়ীর বাসায় হাজির হয়। ব্যবসায়ীর পাঁচ বছরের একটি কন্যা সন্তান ছিল তাকে দেখে বণিকের খুব পছন্দ হয় সে ব্যবসায়ী কে বলে "আমি তোমার মেয়ের সাথে আমার আট বছরের ছেলের বিবাহ দিতে চাই "। ব্যবসায়ী এই কথা শুনে খুব আনন্দিত হয়ে বলে "খুব ভালো প্রস্তাব আমি রাজি"।
তারপর শুভ দিন দেখে ব্যবসায়ীর পাঁচ বছরের মেয়ের সাথে বণিকের আট বছরের ছেলের বিবাহ হয়ে যায়। চারদিন খুব ধুমধাম করে বিবাহ অনুষ্ঠান হয়। অনেক লোক বিবাহ অনুষ্ঠানে ভোজন করে যায়।
এক সপ্তাহ খুব আনন্দে কাটাবার পর বণিক ব্যবসায়ী কে বলে "বন্ধু এবার বিদায় দাও আর তোমার মেয়ের যখন পনেরো বছর বয়স হবে আমার ছেলে এসে তাকে শশুরবাড়ি নিয়ে যাবে "। ব্যবসায়ী তাতে রাজি হয়। শেষে বণিক ও তার পরিবার ব্যবসায়ীর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে যায়।
কালের নিয়ম অনুযায়ী বেশ কিছু বছর পার হয়ে যায় বণিকের ছেলের বয়স হয় আঠার বছর তার নাম চন্দ্রশেখর। একদিন বণিক তার ছেলেকে ডেকে বলল "বাবা এখন তুমি অনেক বড় হয়েছো বৌ মা ও নিশ্চয় এখন অনেক বড় হয়েছে। তুমি তোমার শ্বশুরবাড়ি গিয়ে বৌমা কে নিয়ে আসো।"
দিনক্ষণ ঠিক করে একদিন চন্দ্র ঘোড়ায় চেপে তার শশুরবাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয় সে তার সাথে একজন চাকর কে নিয়ে যায়। সেখান পৌঁছাতে তাদের সাতদিন সময় লাগে। সেখান পৌঁছে চন্দ্র তার শ্বশুরমশাই কে প্রণাম করে বলল "এবার আপনার মেয়ে কে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দীন।"
ব্যবসায়ী বলল "বাবাজীবন তুমি আমাদের জামাই। তুমি এতদিন পরে এলে তোমায় এই ভাবে তো যেতে দিতে পারি না এখানে দু চার দিন থেকে তারপর না হয় যাবে।" অগত্যা চন্দ্র দু চার দিন থাকতে রাজি হল।
প্রথম দুদিন খুব ভালমন্দ খাওয়ানো হল জামাই কে।
রাতে যখন চন্দ্রর বৌ শোবার ঘরে এলো তখন চন্দ্র তার বৌ এর শাড়ি তে রক্তের দাগ দেখতে পেল। সে তার বৌ কে জিজ্ঞাসা করল "তোমার শাড়ি তে রক্তের দাগ কেন?"
বৌ বলল "আজ পাঁঠা কাটা হয়েছিল তো আমি সামনে ছিলাম তাই বোধহয় রক্তের ছিটা ফোটা পরেছে আমি লক্ষ করিনি ঠিক আছে আমি শাড়ি পাল্টে আসছি।"
চন্দ্রর বৌ এর হাবভাব দেখে মনে হল বৌ মিথ্যে কথা বলছে। সে আর কিছু না বলে শুয়ে পরল। রাতে হঠাৎ চন্দ্রর ঘুম ভেঙে গেল সে দেখতে পেল তার বৌ বিছানায় নেই। সে সারা রাত জেগে বসে রইল কিন্তু তার বৌ এল না। তার কিরকম একটা সন্দেহ হল।
পরদিন রাতে চন্দ্র ঘুমের ভান করে শুয়ে রইল। রাত যখন গভীর হল চন্দ্র টের পেল তার বৌ চুপি চুপি দরজা খুলে বাইরে বের হয়ে যাচ্ছে। চন্দ্রও চুপি চুপি দরজা খুলে বাইরে এসে বৌ এর পিছু নিলো। বেশ কিছুক্ষন হাঁটার পর চন্দ্রর বৌ একটা জঙ্গল মত জায়গার ভিতর ঢুকল। চন্দ্রও পা টিপে টিপে সেই জঙ্গলটার ভিতর গিয়ে ঢুকল।
জঙ্গলটার ঠিক মাঝ বরাবর একটা কুঁড়ে ঘর আছে তার এক পাশে একটা ষাঁড় গাছে বাধা অবস্থায় আছে। ঘরের দাওয়ায় একটা বুড়ি বসে আছে। ঘরটার এক পাশে একটা মশাল জ্বলছে।
চন্দ্রর বৌ বুড়িটার কাছে যেতেই বুড়িটা খোনা গলায় হেসে হেসে কথা বলতে লাগল। মশালের আলোয় চন্দ্র দেখল বুড়িটার চোখ গুলো ভিসন লাল। বুড়িটা যখন কথা বলছিল তার বড় বড় গজদাঁত গুলো দেখা যাচ্ছিল। চন্দ্র একটা গাছের আড়ালে লুকিয়ে সব দেখছিল।
বুড়িটা চন্দ্রর বৌ কে বলল "দাঁড়া খাবার বন্দোবস্ত করি।"
এই কথা বলে বুড়িটা গাছে বাধা ষাঁড়টার কাছে গেল আর তার হাত দুটো দিয়ে ষাঁড়টার গলা চেপে ধরল। বুড়িটার হাতে বড় বড় ধারালো নোক ছিল সেই নোক গুলো ষাঁড়টার গলায় সে ঢুকিয়ে দিল। ষাঁড়টা মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করতে লাগল আর দাপাদাপি করতে লাগল। বুড়িটা ষাঁড়টা কে জাপটে ধরল। চন্দ্র এইসব দেখে একেবারে হতবাক হয়ে গেলো ভয়ে তার শিরদাঁড়া দিয়ে একটা হিমেল স্রোত বয়ে গেল। সে ভাবতে লাগল বুড়িটার গায়ে এত অমানুষিক শক্তি কি করে হল সে অতবড় একটা ষাঁড় কে জাপটে ধরল। নিশ্চয় বুড়িটা কোন সাধারন মানুষ নয় হয়তো রাক্ষসী, পিশাচি বা অন্য কিছু।
ষাঁড়টা কিছুক্ষণ ছটফট করে মারা গেল। সেটার গলা দিয়ে প্রচুর রক্ত ঝরতে লাগল। বুড়িটা চন্দ্রর বৌ কে বলল" গাছ থেকে কিছু কলাপাতা নিয়ে আসি।" চন্দ্র লক্ষ করল সে যেখানে দাড়িয়ে আছে তার পাশেই একটা কলাগাছ। সে প্রাণ বাঁচাতে সেখান থেকে পালিয়ে গেল। ঐ সাংঘাতিক বুড়ির পাল্লায় পরলে আর রক্ষা নেই। চন্দ্র মনে মনে ঠিক করল বাড়ি নিয়ে গিয়ে বৌ কে সব জিজ্ঞাসা করবে না বলতে চাইলে দরকার হলে মারধোর করবে।
পরদিন সকালে চন্দ্র তার শ্বশুরমশাই কে বলল "বাবা অনেক দিন থাকা হল এবার বাড়ি যাবার অনুমতি দিন।"
ব্যবসায়ী বলল "ঠিক আছে বাবাজীবন তাহলে আজ রওনা হতে পার।"
চন্দ্র তার বাড়ি যাবার জন্যে প্রস্তুত হতে লাগল। তার শশুর তার জন্য ও তার বাড়ির জন্য অনেক উপহার ও তার মেয়ের দেখাশোনা করবার জন্য মেয়ের পছন্দ মত একটি দাসি দিল।
চন্দ্র ও তার চাকর একটি ঘোড়ায় এবং চন্দ্রর বৌ ও তার দাসি অন্য একটি ঘোড়ায় চেপে চন্দ্রর বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হল।
পথ চলতে চলতে তারা একটি রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে পরল। দুদিকে জঙ্গল তার মাঝখানে ছিল রাস্তাটা। চন্দ্র বলল "এখানে আজকের রাতটা কাটিয়ে দিই কাল সকালে আবার রওনা হওয়া যাবে এখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে একটু পর চারদিক অন্ধকার করে রাত নামবে আজ আর পথ চলা ঠিক নয়।" চন্দ্র তার চাকর কে বলল তাবু খাটাতে। চাকর টা জঙ্গলের একটা পরিস্কার জায়গা বেছে নিয়ে তাবু খাটাতে লাগল।
চন্দ্রর বৌ হঠাৎ বলল "জল ফুরিয়ে গেছে আমার খুব তেষ্টা পেয়েছে ওই যে পাশে ঝোপ টা দেখা যাচ্ছে তার থেকে খানিক দুরে গেলেই একটা জলাশয় আছে। আমি একটু জল পান করে আসি।"
চন্দ্র বলল "ওখানে জলাশয় আছে তা তুমি কি করে জানলে?"
চন্দ্রর বৌ বলল "আমি বাবা মার সাথে এই জায়গায় আগে এসেছি।"
চন্দ্র বলল "ঠিক আছে তবে যাও কিন্তু একা যেওনা আমার চাকরটা তোমার সাথে যাবে।"
চন্দ্রর বৌ ও চন্দ্রর চাকর জঙ্গলের দিকে চলে গেল।
অনেকক্ষণ হয়ে গেল তারা কেউ ফিরে এল না। চন্দ্র চিন্তিত হয়ে ভাবতে লাগল "সেখানে কি কোন মজার দৃশ্য আছে যে দুজনেই দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখছে ফিরে আসার কথা ভুলে গিয়ে না এবার আমাকেই গিয়ে ব্যাপারটা দেখতে হচ্ছে।"
এইকথা ভেবে চন্দ্র নিজেই ওদের কে ডেকে আনতে সেই জলাশয়ের দিকে অগ্রসর হল।
কিছুটা যাবার পর সে জলাশয় টা দেখতে পেল কিন্তু তার বৌ ও চাকর টা তার নজরে এল না। হঠাৎ সে একটা চাপা গোন্গানির আওয়াজ শুনতে পেল তার নজরে পরল ভয়াবহ একটা দৃশ্য যেটা দেখার জন্য সে একেবারে প্রস্তুত ছিল না। সে দেখতে পেল তার চাকর টা মরে পরে আছে আর তার বৌ সেই মৃত দেহের পাসে বসে সেটার মাংস ছিড়ে ছিড়ে খাচ্ছে। মৃতদেহটার পেট চিরে তার মধ্যে থেকে কলিজাটা বেড় করে আস্ত চিবিয়ে খেয়ে দেহটার হাত পা খেতে শুরু করেছে যেভাবে মানুষ পেয়ারা চিবিয়ে খায় ঠিক সেই ভাবে।
রাক্ষসীটার দুকশ বেয়ে রক্ত ঝরে পরছে গোন্গানির আওয়াজ রাক্ষসী টার গলা থেকে বের হচ্ছিল। চন্দ্র এই দৃশ্য দেখে ভয়ে একেবারে কাঠ হয়ে গেল তার শিরদাঁড়া দিয়ে একটা হিমেল স্রোত বয়ে গেল। সে ভাবতে লাগল "হে ভগবান এ কার সাথে আমার বিয়ে হয়েছে। ভগবান আমায় রক্ষা কর।"
হঠাৎ রাক্ষসীটার নজর চন্দ্রর উপর পরল কি হিংস্র তার চোখ দুটো যেন ভাঁটার আগুনের মতো। রাক্ষসী টা চন্দ্রর দিকে তেড়ে আসতে লাগল চন্দ্র খুব ভয় পেয়ে দৌড়ে পালাতে লাগল যেদিকে তার ঘোড়াটা বাধা আছে।
ঘোড়াটার কাছে পৌঁছে সে আর এক ভয়াবহ দৃশ্যের মুখোমুখি হল তার বৌএর দাসিটা একটা ঘোড়া মেরে সেটার মাংস খুবলে খেতে লাগল ও রক্ত চেটে খেতে লাগল আর একটা ঘোড়া নেই হয়তো ভয়ে পালিয়ে গেছে।
চন্দ্র দিক বিদিক শূন্য হয়ে দৌড়াতে লাগল দৌড়াতে দৌড়াতে সে একটা শিব মন্দিরের সামনে অজ্ঞান হয়ে পরে গেল।
পরদিন সকালে যখন তার জ্ঞান ফিরল সে নিজেকে একটা বিছানায় আবিষ্কার করল শোয়া অবস্থায় তার চারপাশে বেশ কিছু লোকজন। সে পরে জানতে পারল মন্দিরের পুরুত ঠাকুর তাকে অজ্ঞান অবস্থায় দেখে লোকজন ডেকে এনে তাকে বাড়ি নিয়ে আসে।
চন্দ্রর পুরোপুরি সুস্থ হতে দুদিন লাগল। তাকে পুরুত ঠাকুর ও অন্যরা জিজ্ঞাসা করল কি হয়েছিল । সে তখন সব ঘটনা খুলে বলল শুনে সবাই হতবাক হয়ে গেল।
চন্দ্র যখন তার বাড়ি ফিরে এল তখন তার মুখ থেকে সব ঘটনা শুনে তার বাড়ির লোক ভয়ে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেল।
(শেষ)
© All Rights Reserved