জীবন যখন শুকায়ে যায়
"সে চলে গেছে"? মায়ের গলা শুনে আমি চমকে উঠি। মা যে কখন থেকে বারান্দায় বসে আছে তা আমি খেয়ালই করিনি। সে বাইরের বাগানটাকে দেখছে। " এই কিছুক্ষণ আগে গেছে"। আমি বললাম ধুলুমাখা রাস্তাটার দিকে তাকিয়ে, যার মধ্য কিছুক্ষন আগে বাবার সাদা গাড়ীটি দাড়িয়ে ছিল। "আবার কবে আসবে"? মা জানতে চাইলো। আমি রাস্তার থেকে চোখ না সরিয়ে বললাম। "জানি না - বলে যায়নি"। আমার কথার উত্তরে মা শুধু "হুঁম" বলল্। "তুমি নীচে এলেনা কেন"? আমি জানতে চাইলাম, মা কফি মগটা হাতে নিয়ে বলল্ --- "কেন আমার কথা জানতে চেয়েছে বুঝি"? মায়ের প্রস্নের কি উত্তর দেবো ভাবতে সময় লাগল, তারপর ভাবলাম সত্যি কথাটাই বলি। "না- তবু আসতে পারতে তো"। মা একটু শুকনো হাসি হেসে বলে - "চায়নি যখন তখন না এসে ভালই করেছি"। মা কফিতে চুমুক দিল। আমি চুপ করে রেলিং এ হেলান দিয়ে দাড়িয়ে ছিলাম।
মাঝে মাঝে মনে হয় সব মায়ের দোষ। মা এতো তাড়াতাড়ি ডিভোর্সটা না নিলেই হতো। বাবা তো Sorry বলেছিল। তাকে একটা সুযোগ দিলেই হতো। আজ আমরা একসাথে থাকতাম। আবার মনে হয় আমি খুব selflish, শুধু নিজের কথাই ভাবি, মায়ের কথা চিন্তাই করিনা। "কিরে কিছু জিজ্ঞাসা করবি নাকি"? মায়ের প্রশ্নে চমকে উঠি। মা এইবার আমার দিকে তাকিয়ে আছে। মায়ের শান্ত চোখ যেন আমার মনের সব গোপন কথা জেনে যাচ্ছে। "আমার টিউশন আছে - তৈরি হয়ে নিচ্ছি", এই বলে মায়ের দিকে আর না তাকিয়ে ঘরে চলে এলাম। মাঝে মাঝে এমন আড়ালে আবডালে লুকিয়ে আমি আমার মায়ের দৃষ্টি এড়াই। তবে সত্যি তা এড়ানো যায় কি? আমি অন্যমনস্ক ভাবে ব্যাগে বই ঢুকিয়ে নেই, চুলটা ভালো করে বেধেঁ নেই। বাবা আসবে বলে ভালো জামা তো পড়াই ছিল। ব্যাগ কাধেঁ নিয়ে যখন মাকে বলতে যাব তখন দেখি মা হারমোনিয়াম নিয়ে বসেছে। "মা আমি আসছি"। মা হারমোনিয়াম মুছতে মুছতে বলল - " কিছু খাবি না"? আমি ব্যাগে রাখা টাকা গুনতে গুনতে বললাম - "না টাকা আছে, ক্ষিদে লাগলে কিছু কিনে নেব। "আসি গো" বলে সিড়ি বেয়ে নিচে চলে আসি। গেট খুলে বের হবার সময়...