...

1 views

পাপস্খলন পর্ব ১


হঠাৎ করেই আমাদের পিকনিকের তারিখটা ফাইনাল হয়ে গেল।আজ এর আত্মীয়ের বাড়ি নিমন্ত্রণ তো কাল ওর অফিসের মারামত্মক কাজের চাপ,এইসব বজ্র আঁটুনিতে একটা কোনো রবিবার আমরা ম্যানেজ করতে পারছিলাম না যাতে আমরা সব বন্ধুরা একসাথে হয়ে এই জমাটি শীতে একটু আনন্দ,একটু হৈ হুল্লোড় করতে পারব।কিন্তু "শীত দেবতা" র আশীর্বাদে অবশেষে আমরা চিরাচরিত প্রাত্যহিকীর এই একঘিয়েমির মাঝে একটি ঝলমলে দিন পেয়ে গেলাম,বাসের জানলার পাশে বসে গান গাইতে গাইতে তীব্রবেগে ধাবমান সূর্যের সাথে সমান তালে পাল্লা দেবার অমোঘ সুখগুলি ছুঁয়ে ছুঁয়ে অনুভব করার জন্য।আমাদের ব্যস্ত।জীবনের নিত্যনৈমিত্তিক চেনা পরিচিত শাখাপ্রশাখার আবডালে বিচরণ আমাদের। কিন্তু এই গন্ডিটা ছাড়িয়ে দৃষ্টি এতটুকুও যদি প্রসারিত করি,তাহলে আমরা উপলব্ধি করতে পারি,এই রোজনামচায় প্রতিনিয়ত যে শব্দ কথা ভাষা উচ্চারিত হয় তার বাইরেও অনেক অজ্ঞাত অমোঘ শব্দ কথা ভাষা আমাদের চারপাশে আমাদেরকেই বেষ্টন করে আছে ছিল,আছে এবং চিরকাল  খোদিত থেকে যাবে।আজ আকস্মিক ভাবে কুড়িয়ে পাওয়া সেরকমই কিছু বোবা আকুতি,কিছু হাড়হিম করা আর্তনাদ আমি আমার শব্দের মাঝে তুলে ধরার জন্য কলমের দ্বারস্হ হলাম।
বাসে করে পিকনিকের স্পট পর্যন্ত পৌছাতে আরো প্রায় তিন থেকে সাড়ে তিন ঘন্টা মতো সময় লাগবে।বাসের অনর্গল ঝাঁকুনি খেতে খেতে আমাদের প্রত্যেকের ব্রেকফাস্ট প্রায় হজম হয়ে আসার মুখে।ক্লান্তিতে আমরা সবাই যখন এ ওর গায়ে ঢলে এলিয়ে পড়ার পরিস্থিতিতে এমন সময় বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো উদয় হল এক নতুন ঝামেলা। বাসের একটি চাকার টায়ার পাংচার হয়ে গিয়েছে। আমাদের পাতা আনন্দের গালিচায় এইভাবে যে ছাইটা পড়বে তা আমরা ঘুণাক্ষরেও ভাবতে পারিনি। আর অর্থনীতিতে মাস্টার্স করা আমার তো যানবাহনের খোলনলচের অ আ ক খ জ্ঞানটুকুও নেই।এই নতুন সমস্যাটির সমাধানে আমার হাত পা মাথা যেহেতু কোনো কাজেই আসবে না তাই আমি এইদিকে আর আগ্রহ না দেখিয়ে এদিক ওদিক ঘোরতর দিকে মনোনিবেশ করলাম।
মন দিয়ে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলাম চারপাশটা।পাহাড়ী জায়গা।সবুজঘন পাথুরিয়া আবহে মন যেআ কোনো অজানা সাঁওতালদের গ্রাম্য সরলতার মহুয়া-নেশায় চূর হয়ে যেতে থাকল।আমি এগোতে থাকলাম এক পা...দুই পা...তিন পা...পাঁচ পা...
সবাই এখন গাড়ির চাকা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে। এখন আমায় নিয়ে ভাবার মতো ফুরসত কারোর নেই।অতএব এই সুন্দর নির্জনতায় সে কোনো বিঘ্নই ঘটবে না সে বিষয়ে আমার নিশ্চিন্ততা ষোলো আনাই ছিল।আমি অন্বেষণ আর অজানাকে আবিষ্কারের নেশার হাতছানিতে মন্ত্রমুগ্ধ অনুগামীর মতো শুধু এগিয়ে যেতে থাকলাম।চলতে চলতে হঠাৎ পায়ে একটা লোহার আংটার মতো একটা কিছু ঠেকল।নীচে তাকিয়ে দেখলাম,আংটাই বটে।একটা প্রকান্ড লোহার আংটা।আমার ভিতরে এক অজানা শিহরণের স্রোত এসে যেন তোলপাড় শুরু করে দিল।তক্ষুনি আমি মনঃস্হির করে নিলাম এই আংটা খুলে আমায় দেখতেই হবে ভিতরে কি আছে।আমি আংটার কাছে ঝুঁকে পড়লাম।দেখলাম,আংটাটি যেন প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধূলো আর বালুরাশি মেখে বার্ধক্যের ভারে ভগ্নপ্রায় হলেও তার আপন অস্তিত্বের জৌলুশ এবং রাজকীয়তায় কোনো কার্পণ্য নেই।আমি আংটার ভগ্নপ্রায় শরীর এবং চারপাশটা পরিষ্কার করতে লাগলাম আর ধীরে ধীরে উন্মুক্ত হতে থাকল একটি কুঠুরির দরজা।এবং এর গায়ে খোদিত কারুকার্যের মধ্যে যে রাজকীয়তা আছে তা যেন এক অব্যক্ত ইতিহাস উন্মোচন করার জন্য আমায় হাতছানি দিতে শুরু করেছে।আমি তখন ভুলে গেলাম পিকনিকের কথা।ভুলে গেলাম বাসে টায়ার পাংচার হওয়ার ঘটনা।ভুলে গেলাম বন্ধুদের,ভুলে গেলাম জগৎ সংসারকে।আমি আংটা দুটি শক্ত করে ধরে সর্বশক্তি প্রয়োগ করে হ্যাঁচকা টান দিতে থাকলাম।আমার একার শক্তি দ্বারা এই দরজা খোলা সম্ভব নয়।আমি হতভম্ব হয়ে কুঠুরির পাশে ঘর্মাক্ত পরিশ্রান্ত অবস্হায় ধপ করে বসে পড়লাম,আর সঙ্গে সঙ্গে "উরিব্বাস" বলে যন্ত্রনায় লাফিয়ে উঠে পশ্চাদদেশে হাত বুলোতে শুরু করলাম।তারপর নীচের দিকে তাকিয়ে দেখি, কুঠুরির দরজার ঠিক নীচের দিকে একটু অনুচ্চ হাতলের মতো কি একটা ধূলোমাখা বস্তু উচু হয়ে আছে এবং তার উর্দ্ধাংশ সূঁচালো এবং তীক্ষ্ণ ফলার মতো উন্মুক্ত হয়ে আছে।আমি বিস্ময় সামলে উঠে হঠাৎ একটা জিনিস খেয়াল করলাম।কুঠুরির দরজাটা একটু ফাঁক হয়ে আছে। এবার আমি দুয়ে দুয়ে চার করে একটা কিছু আন্দাজ করে নিলাম।তৎক্ষণাৎ পাশে পড়ে থাকা একটা প্রস্তরখণ্ড নিয়ে শরীরের সর্বশক্তি প্রয়োগ করে ওই সূঁচালো অগ্রভাগটিকে ক্রমাগত চাপ দিতে থাকলাম।আর আমার এই বলপ্রয়োগের ফলস্রসূ যা অনির্বাচনীয় বিস্ময়কর ঘটনা আমার চোখের সামনে ঘটে চলেছিল তাতে আমার বুকের ভিতরে উত্তেজনার পারদ উত্তরোত্তর চড়তে থাকল।