...

4 views

দ্বৈত
*তোমার তর্জনী উঁচিয়ে বলা সে'ই কথাটা আজও তীরের ফলার মতো ছিন্নভিন্ন করে তোলে হৃৎপিণ্ডটা ...... নাঃ কোনো ঔষধি প্রলেপ এখনও পাইনি আমি, এ ক্ষত হতে চুঁইয়ে পড়া রক্তের দাগ দেখা যায় না ! কিন্তু সে দাগ আমি ধুয়ে দিই রো-জ, তবু একটা আঁশটে গন্ধে দম বন্ধ হয়ে আসে । ভিতরের জুঁই ফুলের গাছটা; মনে আছে যেটা এক চৈতী দিনে রোপন করে ছিলাম আমরা, সেও ব্যর্থ.... তার সুগন্ধ আজ বড়োই ম্লান !! হয়তো তাও ছিলো এক নিদারুণ মায়া ..... আজ একটাই কথা ভীষণ মনে হয় জানো, আমি বিশ্বাস করি বলতে পারো -

" মিছেই ছায়াকে বাঁধি মায়ার ডোরে, ছায়া যে আঁধারে লীন -
নির্জন হৃদতট রয় জনশূন্য, কেউ চোকায় না পারাপারের ঋণ । "

জেনে রেখো তুমিও কেবল এক ছায়া ছিলে মাত্র .....

ইতি - পারমিতা ।

চিনতে পারছো এই চিঠিটা ... মিস্ দময়ন্তী সেন !! না না একটু ভুল বললাম 'পৃথা' । তুমি অস্বীকার করলেও তোমার ফ্যানরা কিন্তু জানে এ তোমারই হাতের লেখা... হুম !! প্রায় কয়েক লক্ষ তোমার ফ্যান ফলোয়ার নাঃ ?? ধরো, যদি তাদের জানিয়ে দিই ঘটনাটা ! কয়েক সেকেন্ডে সেটা শূন্য হয়ে যাবে ..... " নাঃ আমি কিছু জানিনা.... আপনার কেন মনে হচ্ছে যে এটা আমি করেছি ? মনে রাখবেন আমি একজন স্বনামধন্যা লেখিকা" আরে মিস্ সেন সেটাই তো মূল পয়েন্ট ! আপনার প্রয়োজন ছিলো রসদ এবং আপনি তা নিয়ে নিয়েছেন .... আর তদন্তে তা প্রমানিত ! জানিয়ে দিই তাহলে মিডিয়াকে ডেকে ..... "নাঃ ... নাঃ... নানা এমনটা করবেন না ..... তাহলে আমার তিল তিল করে গড়া স্বর্ণলঙ্কা ধুলিসাৎ হয় যাবে !!! দোহাই আপনাদের" .....

* সালটা ২০০১, সকাল হতেই নানা সংবাদ মাধ্যমে ছাপা হলো এক নারকীয় হত্যার ঘটনা !! একসাথে ঘুমন্ত অবস্থায় নৃশংস ভাবে খুন করা হয় একই পরিবারের পাঁচ সদস্য কে... পুলিশি তদন্তে জেল হয় পরিবারের জামাই রবিশঙ্করের । কিন্তু আশ্চর্য্যের বিষয় হলো খুন টা একটি বরফের ছুরি দিয়ে করা হয় ... তদন্তে তাই জানা যায় পুলিশ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ।

যাদব পুর কলেজে পড়া কালীন রবিশঙ্কর বাবুর আলাপ হয় পারমিতার সাথে, তিনি বিত্তবান পরিবারের ছেলে এবং খুবই ভালো মনের মানুষ .... দুই বাড়ির মতে বছর ছয়েক পর তাঁর বিয়ে হয় পারমিতার সাথে, পারমিতা নামজাদা ব্যবসায়ী রমেশ সেনের মেয়ে । তারা সুখি দম্পতি.... হ্যাঁ মাঝে মাঝে একটু আধটু ঝামেলা হতো কিন্তু, সেদিন - সুদূর ব্যঙ্গালোর থেকে প্রথম তাদের বাড়ি এলেন পারমিতার যমজ বোন, না তার জামাইবাবুর সাথে তার আগে সাক্ষাৎ ঘটেনি, কিছু আলাপে রবিশঙ্কর বাবু জানতে পারলেন তাঁর ছোটো শ্যালিকাটি বেশ সাহিত্যানুরাগী এবং বাংলা ভাষার প্রতি তার একটি সাবলীল দক্ষতা আছে ....। ধীরে ধীরে ঠাট্টা তামশায় বেশ দিন যেতে লাগলো, কিন্তু ! যে সখ্যতা ছিলো কেবলই রবিশঙ্করের কাছে এক পবিত্র সুন্দর ভ্রাতা ও ভগিনীর সম্পর্ক, সেখানে অযথাই এলো কাল সর্পের নীল বিষ... যে বিষে জর্জরিত হলো ক্রমে চোখ, মন, ফুসফুস ও অবশেষে হৃৎপিণ্ডটা ।

কেটে গেছে ষোলো বছর। রবিশঙ্করকে আর আগের মতো মনে হয় না, উশখোখুশকো চুল মুখ ভর্তি দাড়ি । মনে মনে অনুতাপে কি যেনো বিড়বিড় করে, পাড়ার সবাই বলে পাঁচ পাঁচটা খুনের অনুতাপে মাথাটা একদম গেছে .....। জেল থেকে ফিরে এসে সে গিয়েছিল একবার নিজের বাড়িতে কিন্তু, সে বাড়িও আর তার নেই, সেখানে এখন গড়ে উঠেছে একটা মস্ত প্রেস .... নাঃ আর তারপর তাকে দেখা যায় নি,

*বিগত কয়েক দিন যাবৎ একদম লেখায় মন বসছে না, রাতের পর রাত কাটছে অনিদ্রায় পাতায় পাতায় আঁকিবুকি টেনে, বুঝতে পারছি না কি যে হয়েছে আমার.... একটা ভীষণ ত্রাস যেনো পিছু ধাওয়া করছে, একি আমার মনের ভুল না সমস্তই বাস্তব !! ইদানীং অনুভবে বারবার সেই শিকড়ের স্পর্শ যেন নাড়িয়ে দিয়ে যাচ্ছে আমার কঠিন অন্তর.... ছিঁড়ে দিচ্ছে প্রতি স্তর !! কিছু চেনা মুখ অতর্কিতে চিৎকার করে বলছে - "আমরা বাঁচতে চাই" .... বলছে - "তুই খুনি ..... তুই খুনি"....
সবকিছু এড়াতে মুখের কাছে স্যাম্পেন টা তুলে দু ঢোক খেলাম আজ যাতে লেখার এনার্জি টা আসে, কিন্তু ! তৎক্ষণাৎ শুনলাম এক নারী কন্ঠ, ভাবলাম মনের ভুল ... কিন্তু নাঃ আবারও শুনলাম সেই নারী কন্ঠ "বোন এই বোন কেমন আছিস" ? আমি চমকে উঠলাম, এ-এ-এ-কি একি শুনছি আমি ও-ও কোথা থেকে এলো .... তবে কি প্রেতাত্মা নাকি !! সে'ই কবেই তো ..... হ্যাঁ হ্যাঁ আমি নিজে হাতে খুন করেছি ওকে, রবিশঙ্কর কে নিজের করে পাবো বলে সে'ই চিঠি লিখেছিলাম যখন ও অভিমান করে চলে এসেছিলো এখানে .... আমি ব্যঙ্গালোর থেকে এক সপ্তাহের জন্য এখানে এসে গা ঢাকা দিয়ে ছিলাম পাশের এলাকার ঝুপড়িতে, নাঃ কেউ টের পায়নি .... বাবার সম্পত্তির পুরো ভাগ নেবো বলে সরিয়ে দিলাম তোকে, ভাই কে আর মা বাবা কে .... কেউ সন্দেহ করেনি আমায়, কারন সেদিন রাতে খুব ঝামেলা হলো তোর সাথে রবিশঙ্করের তাই পুরো দোষ পরল ওরই ওপর । আমি তখন টাকার নেশায় বুঁদ.... শুনেছিলাম তোদের বাড়িটাও তোর নামে তাই আগে থেকেই সমস্ত পেপারে তোর সই নিয়ে রেখেছিলাম, আমার প্রতিহিংসা থেকে বাদ যায়নি তোর একরত্তি মেয়ে তিন্নিও........ আর তারপর ..... হা হা হা....

দাঁড়ান মিস্ দময়ন্তী সেন ইউ আর এ মাডারার..... "মানে" !!! আপনারা এখানে !! আপনারা এখানে কি করছেন অফিসার... !! বুঝতে পারলেন না তাইতো.. মানে টা আমরা বলছি, এসব আমাদেরই ষড়যন্ত্র রবিশঙ্করের সাথে হাত মিলিয়ে আমরা এই ঘটনা ঘটিয়েছি, এটা কোনো কাকতালীয় ঘটনা নয়, মিস দময়ন্তী সেন...
কেন কেন পৃথা তুমি আমাদের সুখের সংসার ভেঙে দিলে বলো ?? কেন আমার জীবনের এতো গুলো বছর নষ্ট করলে .... শুধুই লোভ ও না পাওয়ার লালসায়; আজ কি না তুমি স্বনামধন্যা সাহিত্যিক !! এই বাংলা ভাষাও আজ আঁতকে উঠবে তোমার এই মনস্তাত্ত্বিক বিকার দেখে .... ছিঃ !! অফিসার ইমিডিয়েট অ্যারেস্ট হার...

নাঃ নাঃ নানা আমাকে ছেড়ে দাও ... আমাকে একটা সুযোগ দাও, রবিশঙ্কর প্লিজ.... শোনো তোমরা প্লিজ প্লিজ....
------------------------------------------------------
- শেষ ।

#মৌসুমীচ্যাটার্জী #দ্বৈত