...

2 views

বর্তমান লকডাউন ও ইফতারি প্রথা


পবিত্র রমজানে মুসলমানরা সিয়াম সাধনা করে থাকেন। এই সিয়াম বা রোজার সূচনা হয় সেহরির মাধ্যমে। আর সমাপ্তি ঘটে ইফতার দিয়ে। ইফতার রোজার অন্যতম অঙ্গ। ইফতারের রয়েছে অপরীসিম গুরুত্ব ও নজরকাড়া ফযীলত। ইফতার করা যেমন পূণ্যকর্ম; করানোও তেমন সাওয়াবের কাজ। ইফতার করানোর ব্যাপারে উম্মাহকে উৎসাহিত করতে মহানবী সাঃ বর্ণনা করেছেন বহু কালজয়ী বাণী।

মুসলমানরা সাধ্যমত ইফতার করানোর চেষ্টা করে। অসহায় গরীবদেরকে ইফতারি প্রদান করেন অনেকেই। আবার আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতেও ইফতারি পাঠান কেউ কেউ। হাদিসের আলোকে এটাও পূণ্যকর্ম নিঃসন্দেহে। এক্ষেত্রে বরং দুটি সাওয়াব পাওয়া যায়। প্রথমত ইফতার করানোর সাওয়াব। দ্বিতীয়ত আত্মীয় স্বজনের সাথে ভালো সম্পর্ক স্থাপনের সাওয়াব।

বরাকের প্রচলিত ইফতারি প্রদান কুরআন ও সুন্নাহ পরিপন্থী। এটা বড় মাপের কুসংস্কারের রূপ ধারণ করেছে। সমাজের একটি ব্যাধি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতি বছর রমজান আসলেই এই কুসংস্কার নিয়ে শুরু হয় আলোচনা সমালোচনা। কেউ ফেবুতে সমালোচনার ঝড় তুলেন। কেউ পত্র পত্রিকায় লেখালেখি করেন। কেউ মাইকে প্রতিবাদ মুখর হন। বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তি বিশেষ এর বিরুদ্ধে কাজ করেছেন এবং করছেন ।

বিশ্ব জুড়া লক ডাউনের মাঝে এবার হাজির পবিত্র রমজান। গোটা বিশ্বের অর্থনীতি আজ বেনজির বিপর্যয়ের মুখে। দেশে দেশে মৃত্যু মিছিল দীর্ঘ হচ্ছে। করোনা আক্রান্তের সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে। মানুষ আজ ভীত সন্ত্রস্ত। অনাহারে অর্ধাহারে কালাতিপাত করছে অসংখ্য বনি আদম। সেহরির ব্যবস্থা হলে ইফতার জোগাড় করতে পারছে না কতশত মানুষ। এই দুর্যোগপূর্ণ ও নজিরবিহীন অর্থনৈতিক বিপর্যের সময় কিছু মানুষ প্রচলিত ইফতারি প্রদানে দৌড়ঝাপ শুরু করেছেন। কাড়িকাড়ি টাকা খরচ করে ইফতারির আয়োজন করছেন। যেটা সত্যিই বিস্ময়কর ও দুর্ভাগ্যজনক।

ইফতারি প্রদানে লক ডাউন এবং সামাজিক দূরত্ব আইন অমান্য হচ্ছে। অথচ লক ডাউন মনে চলা আবশ্যক। নিজেকে বিপদের মুখে ঠেলে দিয়ে ইফতারি প্রদান সত্যিই বিস্ময়কর। এই মুহূর্তে যথাসম্ভব ঘরে অবস্থান করা জরুরি। প্রয়োজনে গরীব আত্মীয়ের বাড়িতে টাকা পাঠাতে পারেন। তারা সময় সুযোগে ইফতারির ব্যবস্থা করবে‌ন। এতে খাদ্য সামগ্রীর অপচয় হবে না । হবে না লক ডাউন অমান্যও ।

কুরান ও হাদিসে অপচয় সম্পর্কে কঠোর সতর্কবাণী উচ্চারণ করা হয়েছে। প্রচলিত ইফতারিতে প্রচুর খাদ্য সামগ্রীর অপচয় হয়। রকমারি ইফতারি আয়াজনে হাজার হাজার টাকা অযথা খরচ হয়। এই কঠিন মুহূর্তে যখন মানুষ অনাহারে অর্ধাহারে জীবন যাপন করছে। এমতাবস্থায় ইফতারির নামে খাদ্য সামগ্রী অপচয় না করে কোন অসহায় অন্নহীন ব্যক্তির জীবন রক্ষায় এগিয়ে আসা নৈতিক ও মানবিক দায়িত্ব। তাছাড়া আসছে দিনে পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেবে তা বলা মুশকিল। তাই ইফতারির মতো অপ্রয়োজনীয় বিষয়ে টাকা অপচয় না করে তহবিল মজুত রাখা দরকার। যেটার তাগিদ হাদিসেও এসেছে।

প্রচলিত ইফতারি প্রদানে এমনিতেই তো সামাজিক ভেদাভেদ সৃষ্টি হয়। আর বর্তমান পরিস্থিতিতে ইফতার প্রদানে সামাজিক ভেদাভেদ আরও প্রকট হবে। নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবার আজ দিশেহারা। নুন আনতে পান্তা ফুরানোর অবস্থা তাদের। এমতাবস্থায় এসব পরিবারের ইফতারি প্রদান তো দূরের কথা । এমনটা চিন্তায়ও আনতে পারবে না। এদিকে উচ্চ বিত্ত ও ধনাঢ্য ব্যক্তিবর্গ যখন মেয়ের বাড়ি রকমারি ইফতারি প্রদান করবেন। ইফতারি আয়োজনে কাড়িকাড়ি টাকা খরচ করবেন। তখন পাশের বাড়িতে গুঞ্জন শুরু হবে। ইফতারির দাবি উঠবে।মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র পরিবারের মেয়ে স্বামীগৃহে প্রশ্নবিদ্ধ হবে। প্রহৃত হবে। হতাশায় ভোগবে। আপনার নিছক আভিজাত্য অন্যের মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াবে।

অন্তত এ বছর ইফতারি প্রথা বন্ধে এগিয়ে আসতে হবে সবাইকে। প্রত্যেকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে এর বিরুদ্ধে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। গুরুদায়িত্ব পালন করতে হবে স্বামীর পরিবারবর্গকে। শ্বশুর বাড়ির ইফতারিকে না বলতে হবে কঠোরভাবে। এক্ষেত্রে মেয়ের পরিবারবর্গ অনেকটা অসহায়। মেয়ের সুখ শান্তির কথা মাথায় রেখে অনেক কষ্টে হলেও ইফতারির ব্যবস্থা করেন অনেকেই। মেয়ের মুখ উজ্জ্বল করতে প্রয়োজনে টাকা ধার করেন। তাই মানবিকতার খাতিরে স্বামী পক্ষ অতন্ত এবার ইফতারিকে কঠোরভাবে না বলুন। ধনাঢ্য মেয়ে পক্ষ নিজেদের আর্থিক স্বচ্ছলতার পাখায় ভর করে ইফতারি প্রদান করে অন্যের জন্য মাথা ব্যথার কারণ হওয়া থেকে বিরত থাকুন।