...

2 views

নির্যাতন
নির্যাতন

---নির্যাতন---
কলমে-রশ্মিতা দাস

বাপ মা মরা অনাথ একাকিনী সব্জিওয়ালিকে বিয়ে করাটা যে খুব ভুল সিদ্ধান্ত হয়নি রতনের তা এখন প্রতি মূহুর্তে সে পরম তৃপ্তির সঙ্গে অনুভব করছে সে।যদিও এই বিয়েতে সে একটা নয়া পয়সাও পায়নি।কিন্তু সে যখন তার মায়াবী হাসিমাখা প্রতিশ্রুতি বাক্যের মধ্যে এমন এক অমোঘ যাদুঢালা সৌন্দর্য ও দৃঢ়তা দিয়ে তাকে বশীভূত করেছিল,যে রতন তখন প্রায় নেশাচ্ছন্ন হয়ে কিছুমাত্র বিবেচনা না করেই তাকে হঠাৎ সোজা বিয়েই করে ফেলল।ব্যাপারটা একটু গোড়া থেকেই বলি,
পাঁড় মাতাল হিসেবে রতন এলাকায় কুখ্যাত।যখন তখন...সে ভোরের আলো ফোটার সময় হোক,কি ভরদুপুর...কিংবা রাত্তির...সে পথেঘাটে,পুকুরপাড়ে এমনকি মাছের বাজারের ক্যাঁচাকেঁচির মাঝখানেও হাতে মদের বোতল নিয়ে হাত পা ছড়িয়ে পড়ে থাকে আর জুয়া খেলে।আর পতিতাপল্লীর সাথে তো তার মামার বাড়ি মাসির বাড়ির মতোই চিরকালীন আত্মীয়তা।তার বাপ মা একটু শোধরানোর আকুতি নিয়ে ছেলের পায়ে পড়ে কাকুতিমিনতি করতে করতেই পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছে।আর বাপ মা মরার পর তো এখন তার পোয়াবারো।বাপ মা মরা অনাথ ছেলেটা এখন লম্পট পাঁড় মাতাল হলেও টাকা পয়সা জমিজমা আর সম্পত্তির পরিমাণ দেখেশুনে এক কন্যাদায়গ্রস্ত পিতা তার হাতেই মেয়ের বৈঠা তুলে দিয়েছিলেন,কিন্তু সেই বৌ তার জুলুমের হাত থেকে রেহাই পায়নি।আগে রতন মদ আর খাওয়া পরার খরচাপাতি চালানোর জন্য টুকিটাকি কাজ করত কিন্তু বিয়ের পর সে একেবারে সাপের পাঁচ পা দেখল।সে সংসারের যাবতীয় কর্মকান্ড থেকে টাকা উপার্জন করে আনা,পুরো দায়িত্বটাই বৌএর ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে মদের ঠেক আর পতিতাপল্লী নিয়ে মেতে থাকত,আর প্রতিদিন রাতেই হাড়ভাঙা খাটুনি সেরে পরিশ্রান্ত বিদ্ধস্ত স্ত্রীর উপরে পরদিনের মদ খাওয়ার টাকা চাওয়ার জন্য চড়াও হত।পিঠ জুড়ে দাগড়া দাগড়া কালশিটের চাষ সেরে হাতে যা পেত তা পুরোটাই পকেটে পুরে বৌএর রেঁধে রাখা ভাত তরকারী নিজে বেড়ে নিয়ে যন্ত্রনায় কাতরাতে থাকা বৌএর পাশেই পরম নিশ্চিন্তে রাতের আহার সেরে নিত।আর তারপর রাতে শুতে যাবার সময় "হাল্কা" টান দিত বৌএর শাড়িতে।এমন রুটিন চালু ছিল নয় নয় করে প্রায় দুই বছরের মতো।কিন্তু রতনের এমন সুখ বুঝি ওপরওয়ালার আর বেশিদিন সইল না।আবার সে একা হয়ে গেল আগের মতো।পাড়া প্রতিবেশীরা তার সামনেই তাকে কটাক্ষ করত।"মেয়েটার বাপের অ্যাদ্দিন বাদে তাহলে সুমতি হল যে তোমার কাছ থেকে মেয়েটাকে নিয়ে গেল জন্মের মতো...
অবশ্য সব ধরণের কটাক্ষ বা বিদ্রুপ তার আজকের পাহাড় প্রমাণ দুঃখের কাছে ফিকে হয়ে যেত।এখন আবার হাত পুড়িয়ে রান্না করতে হচ্ছে। আবার নতুন কোনো কাজের সন্ধানে মাথা খারাপ করতে হচ্ছে,আর সবথেকে আপশোষের বিষয় হল প্রতি রাতে ফোকটে আনন্দ দেওয়ার মত আজ আর কেউ নেই।কাজেই মানুষজন কি ভাবছে বা কি বলছে সেইসব মাথায় না নিয়ে সে আরেকটা বিয়ে করবে বলে মনঃস্হির করল।এমনই সময়,এক ঝড়জলের রাত্রে হঠাৎ দরজায় করাঘাত শুনে সে শশব্যস্ত হয়ে দরজা খুলতেই দেখল,এক সিক্ত বসনা লাস্যময়ী "স্বর্ণমৃগ" বাইরে দাঁড়িয়ে ঠান্ডায় কাঁপছে।এমন মেঘ না চাইতেই জল পেয়ে...