...

2 views

just 5 minutes
নীলের ফোনটা রিং হয়ে হয়ে কেটে গেল। ছাদের রেলিং এর ওপর বসে বসে আশা, ভাবছে যে আর কাকে ফোন করা যায়। খানিকক্ষণ পরেই সে মধুশ্রী কে ফোন করলো।
মধুশ্রী-"হ্যাঁ বল কি হয়েছে "
আশা -"না তেমন কিছুই না একটু কথা বলতে ইচ্ছা করছিল তাই আর কি ফোন করলাম তোকে।"
মধুশ্রী-"ও, তা তুই কি করছিস"
আশা-"এই বসে আছি রে।"
মধুশ্রী -"আচ্ছা ঠিক আছে শোনা, আমি তোকে পরে ফোন করবো আমার একটু কাজ আছে রে"
আশা -"আচ্ছা ঠিক আছে।"
মধুশ্রী সাথে সাথে ফোনটা কেটে দিলো।এবার ও ভাবছে যে ও রানী কে ফোন করবে, ওর ছোটবেলার খুব ভালো বন্ধু, মধুশ্রীও ওর খুব ভালো বন্ধু তবে বড্ড ব্যস্ত হয়ে গেছে সবাই আজকাল।
রানীর ফোনটা কিন্তু বেজে বেজেই কেটে গেল হয়তো কোন অপারেশনে ব্যস্ত আছে। আশা আর রানী দুজনে একসাথেই মেডিকেল এন্ট্রান্স এক্সামের জন্য প্রিপারেশন নিয়েছিল কিন্তু আশার ভাগ্য টা ভালো নয়, হয়তো ও পরিশ্রমই করেনি সেজন্য ও চান্স পায়নি কিন্তু রানী ও চান্স পেয়ে গিয়েছিল। তবে সময়ের সাথে যা হয় আর কি দুজনে ভালো বন্ধু হওয়া সত্ত্বেও ধীরে ধীরে দুজনের মধ্যে দূরত্ব অনেকটা বাড়তে থাকে সেটা হয়তো আশা আর রাণীর আলাদা ফিল্ড হয়ে যাবার জন্য।
এবার আর কাকে ফোন করবে ও ঠিক ভেবে পেলো না। ওর নিজের লোক বলতে এই দুটো বন্ধু আর ওর ক্লাসমেট এবং স্পেশালি ওর ক্রাশ -নীল, এই কজনই আছে ওর কাছে কথা বলা এবং ফোন করার জন্য। মা বাবা মারা গেছে। এখনো একটা হসপিটালে একজন ট্রেনী নার্স। পরিবারেতে ওর দাদা বৌদি ওর ভাইজি থাকলেও কারো সাথে সম্পর্ক রাখেনি। বলতে গেলে ওরাই কেউ ওর সাথে সম্পর্ক রাখেনি। ওই জন্য তারা থেকেও নেই। মা মারা যাওয়ার পর দাদার সাথে সম্পত্তি নিয়ে ঝগড়া হওয়ার পর ও নিজেই বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিল সব সম্পত্তি দাদার হাতে দিয়ে কারণ ও , ওর মাকে কথা দিয়েছিল ও কোনদিনও দাদার সাথে সম্পত্তি নিয়ে ঝগড়া ,অশান্তি করবে না। তাই ওরাও পরে কেউ আর খোঁজ নেয়নি। এখনো একটা হোস্টেলে থাকে সেখানে থেকেও ওর নার্সিং এর পড়াশোনা শেষ করছে।
বাড়ি ছেড়ে চলে আসার পর অনেকগুলো দিন কেটে গেছে কিন্তু ডিপ্রেশন আশাকে পুরো ঢুবিয়ে দিয়েছে। এর মূল কারণ একাকীত্ব। মানুষ যখন উন্নতির কাছাকাছি থাকে তখন সে তার চারপাশ থেকে মুছে যাওয়া মানুষগুলোকে খেয়ালই করে না। তাদের নজরেই আসে না একসময় যারা তাদের অনেক কাছে ছিল অনেক আপন ছিল তারা যেন ভোরের কুয়াশার মতন কোথাও একটা মিলিয়ে যাচ্ছে।
সব কথা ভাবতে ভাবতে আশা একবার শেষবারের মতন নীলকে ফোন করার চেষ্টা করল কিন্তু এবারও নিলের ফোনটা বেজে বেজে কেটে গেল। আশার হাতে যে পাঁচ মিনিট ও বরাদ্দ করেছিল ওর নিজের জন্য ফোনের অ্যালার্ম ক্লক এ সেই ৫ মিনিট শেষ হয়ে যাওয়ার ঘন্টা বাঁচতে আরম্ভ করেছে।
"নীলকে আর কোনদিনও বলা হলো না যে আমি ওকে লাইক করি, আমি ওকে ভালোবাসি আর কোনদিনও জানতেও পারবে না এই কথাটা।
আমার আর নতুন করে কিছু হারানোর বা পাওয়ার নেই। "

পরের দিন নিউজ পেপারে খবর বের হয়।
গার্লস কলেজের হোস্টেলে নিচে পাওয়া গেল এক ছাত্রীর মৃতদেহ। জানা গেছে যে, বারোটা নাগাদ সেই কলেজেতে একজন স্টুডেন্ট হঠাৎ করে কিছু ভারি জিনিস করার আওয়াজ পায়। পূজার ছুটিতে কলেজে কেউ ছিল না সবাই বাড়ি গিয়েছিল । কলেজে শুধু মাত্র আশা আর ঐন্দ্রিলা ছিল। ঐদ্রিলার সামনেই পরীক্ষা আর ওর বাড়ি শিলিগুড়িতে ।তাই ঐন্দ্রিলা বাড়ি না গিয়ে হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করার সিদ্ধান্ত নেয়। কিছুক্ষণ বাদে সে নিচে নেমে দেখে যে ওই কলেজেরই স্টুডেন্ট আশার, বডি নিচে পড়ে আছে। সাথে সাথে সে পুলিশে এবং অ্যাম্বুলেন্সে ফোন করে। ঘটনার স্থলে এসে পুলিশ ডেড বডি নিয়ে যায়। অনুমান করা হচ্ছে যে আশা যে হসপিটালে নার্সিং এর ট্রেনিং নিচ্ছিল, সেখানে এক সিনিয়ারের সাথে তার ঝগড়া হয় এবং সিনিয়র তাকে খুব বাজে ভাবে অপমান করেছিল সবার সামনে। হয়তো এই সবকিছুর কারণ থেকে ই সে সুইসাইড করেছে।.............

"শুধু একটু খেয়াল রাখুন, এইভাবে কেউ হারিয়ে যাচ্ছে না তো?"............................