...

1 views

অভিমান
অভিমান
ঘরিতে তখন সকাল দশ টা বাজে। আরোহী তার মাকে বলে ছুটতে ছুটতে বের হচ্ছিল বাড়ি থেকে আজ তার দেরি হয়ে গেছিল। আরোহী দারিয়ে ছিলো সেখানেই যেখানে ওহ সেই ছোটো বেলা থেকে দারিয়ে ছিলো।
বার বার হাতে থাকা ঘরিটা দেখছিল। হঠাৎ পিছন থেকে কেউ চুল ধরে টানলো আরোহী চিৎকার করে বললো ছার বলছি অঙ্কু।
অঙ্কু যার জন্যে এতক্ষণ অপেক্ষা করছিল আরোহী। ওরা দুজনেই ফাস্ট সেমিস্টার পরছে। ছোটো বেলার বন্ধু ছিলো দুজনে।
আরোহী : কিরে তোর এতক্ষণে আসার সময় হলো। দেখতো এখন কটা বাজে ঋষভ স‍্যারের ক্লাস শুরু হয়ে গেছে এখন গেলে ক্লাসে ঢুকতে দিবে।
অঙ্কিত : আরে তুই রাগ করছিস কেন বলতো তোর জন্যে একটা জিনিস নিতে গিয়েই দেরি হয়ে গেল আর এমনিতেও আজকে ক্লাস করতে মন চাইছে না আমার।
আরোহী : তাই বলে তুই এরকম করবি আগে বললে আমি চলে যেতাম ।
অঙ্কিত : আচ্ছা নে সরি আর ভুল হবে না।
আরোহী : এখন কী করবো মাকে গিয়ে কী বলবো।
অঙ্কিত : তুই চুপ করতো এই দেখ তোর জন্যে কী এনেছি।
আরোহী: বাবাহ আজকে যে আবার গোলাপ এনেছিস!
অঙ্কিত: নে না ইচ্ছে হলো তাই নিয়ে আসলাম।
আরোহী : তোর আজ কি হলো যে হঠাৎ আজ আদিখ‍্যেতা!
অঙ্কিত : মন চাইলো আর রাস্তায় আসতে আসতে দেখলাম কয়েকজন ভির করেছে দোকান টার সামনে সবাই নাকি তাদের প্রিয় মানুষটার জন্যে নিচ্ছে। কিন্তু আমার তোর কথাই মনে পরলো।
আরোহী : আহা রে! তুই আমাকে এত ভালোবাসিস জানতাম না তো যে গোলাপ দেখে তোর আমার কথা মনে পরলো। আমারা দুজন ভালো বন্ধু তাও তোর আমার কথা মনে পরলো বাহ্! কিন্তু তুই গোলাপ না এনে রজনী গন্ধ‍‍্যা নিয়ে আসতে পারতিস।
অঙ্কু: আচ্ছা! পরের বার নিয়ে আসবো।
আরোহী : না না থাক তুই যা ছেলে সত্যি সত্যি নিয়ে আসবি। পরে তখন কথা শুনাবি তার থেকে বরং থাক।
অঙ্কু : তুই এভাবে বলতে পারলি আমাকে।
আরোহী : না তো কী? (বলেই হাসতে শুরু করলো )
অঙ্কু : খুব হাসি পাচ্ছে না হেসে নে।
আরোহী : ফুলে হাত বোলাতে বোলাতে কী যেন বলতে যাচ্ছিল তখনি কি যেন একটা ওর হাতে ফুটে গেল। আহ্ বলে উঠলো
অঙ্কু: কি রে কি হলো
আরোহী : কিছু না।
কিন্তু তুই গোলাপের কাটাগুলো কাটিস নাই কেনো রে।
অঙ্কু: ইচ্ছে করেই! দ‍্যাখ জীবন তো সব সময় গোলাপের পাপড়ির মতো নরম নয়। সঙ্গে কাটাও থাকবে আর তাতে ফুটে রক্তও বের হবে । তখন কিন্তু পাশে থাকতে ম‍্যাডাম!
আরোহী : আজ্ঞে মশাই থেকে যাবো তোমায় আমায় মিলে।

এসব ভাবতে ভাবতেই এক হাত থেকে কতো গুলি গোলাপ পরে গেল। আর এক থেকে কিছু রজনীগন্ধ‍্যা ফুল। তিন বছর হয়ে গেল আরোহী আর নেই হাসিতে অভিমানে রাগে ওহ তো ভালোই আছে যত কষ্টো সব আমারি কাদতে কাদতে বলে উঠল অঙ্কিত। চিৎকার করে বললো কিরে তুই কোথায় চলে গেলি আমাকে রেখে কথা ছিলো গোলাপের কাটা যখন ফুটবে জীবনে তখন পাশে থাকবি আজকে কোথায় গেলি। কথা দিয়েছিস থাকবি পাশে। কাদতে কাদতে লুটিয়ে পরলো অঙ্কিত।

আজ 25 ফেব্রুয়ারি গত তিন বছর থেকে অঙ্কিত এখানেই ফুল দিতে আসে। আর নিজেকেই দায়ী করে এই দিন টার জন্যে
যদি ওহ ওইদিন আরোহীকে অত কষ্ট না দিতো। উল্টোপাল্টা কিছু না বলতো আজ তাহলে আমার সাথেই দাড়িয়ে থাকতো। আমার ওপর অভিমান করেই না আজকে আমাদের ছেড়ে এতো দূরে আরোহী চলে গেল। রাগ করলে ওহ রাস্তায় বের হতো কিছুক্ষণ হাটলেই ওর রাগ অভিমান সব ভুলে যেত কিন্তু ওই দিন আমি ওকে এত জ্জ্বালাচ্ছিলাম যে ওহ রাগে ফুসছিলো আর আমাকে ধরতে এসেই ওর এরকম অবস্থা। আমি ছুট ছিলাম হঠাৎ পিছন থেকে একটা প্রচন্ড জ্বরে শব্দ শুনতে পেয়ে পিছনে তাকাতেই আমার সব শেষ ।
হাসপাতালে নিয়ে যেতে যেতে আরোহীর শক্ত করে ধরে থাকা হাতটা পরে গেল আমার হাত থেকে আমি বুঝলাম যে আমার গোলাপের পাপড়ির দিন গুলি আর নেই সব নিস্তেজ হয়ে গেছে।
সেই আজও ফুল দিতে আসে ওই জায়গায়।।।
সমাপ্তি ❤
✍ সঙ্গীতা রায়


আসলে অভিমান শব্দটা খুব সহজ কিন্তু খুব সহজেই তা ভয়ানক রূপে পরিবর্তন হতে পারে ।